মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমের ৭০০ লিটার গঙ্গাজল সম্ভল (Sambhal) নগরীতে পৌঁছায় দমকলের গাড়ির মাধ্যমে। এই গঙ্গা জলকে কাজে লাগানো হয় বিভিন্ন হিন্দু ধর্মের মন্দির পরিষ্কারের কাজে। জানা গিয়েছে, এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশেই। এর উদ্দেশ্য হিন্দু ধর্মের পবিত্র তীর্থ স্থানগুলিকে যেমন পবিত্র করা, একইভাবে সেই সমস্ত মানুষদেরকেও ত্রিবেণী সঙ্গমের গঙ্গা জলের সংস্পর্শ দেওয়া যাঁরা মহাকুম্ভে হাজির হতে পারেননি। সম্ভল নগরের চারটি বিখ্যাত তীর্থস্থানে এই পবিত্র গঙ্গাজলকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এগুলি হল- কুরুক্ষেত্র তীর্থ মন্দির যা আলম সরাইতে অবস্থিত, ক্ষেমনাম তীর্থ মন্দির যা শাহজাদি সরাইত অবস্থিত, মহা মৃত্যুঞ্জয় তীর্থ যা হায়াতনগরে অবস্থিত এবং বংশ গোপাল মন্দির যা বইনিপুর চকে অবস্থিত।
গঙ্গাজল দিয়ে মন্দির তথা মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করা হয় (Sambhal)
এই পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে মন্দির তথা মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করা হয়। দমকলের গাড়ির মাধ্যমে এই পবিত্র গঙ্গা জল যখন সম্ভলে পৌঁছায় তখন সেখানে উৎসবের চেহারা নেয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক ভিড় করেন। তাঁরা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকেন। দমকল বিভাগের এমন প্রচেষ্টায় সারা সম্ভল নগরী জুড়ে উৎসব শুরু হয়। সেখানে হাজির হন বিভিন্ন হিন্দু পণ্ডিত, স্থানীয় ভক্ত এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। তাঁরাও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রথা ও রীতি মেনে গঙ্গা জল দিয়ে পবিত্র তীর্থস্থানগুলি যেমন পরিষ্কার করেন, একইভাবে তীর্থক্ষেত্রে আশেপাশে থাকা জলাশয়গুলিতেও ত্রিবেণী সঙ্গমের পবিত্র জল মেশাতে থাকেন (Sambhal)।
দমকলের গাড়িটিকে পুজো করা হয়
সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, সাধারণ ভক্ত এবং সাধুসন্তরা প্রথমেই দমকলের গাড়িটিকে পুজো করতে শুরু করেন। এই প্রথমবারের জন্য দেখা গেল দেশের তৎকাল পরিষেবার ক্ষেত্রে নিযুক্ত গাড়ি এভাবে পুজিত হচ্ছে। দমকলের গাড়ি যেন সম্ভলে পৌঁছে পরিণত হয় সনাতন ধর্মের পবিত্র রথে। সঙ্গমের পবিত্র গঙ্গা জলের মাহাত্ম্য অনুভব করতে ব্যাপক ভিড় জমে যায়। প্রসঙ্গত, হিন্দু ধর্মে সম্ভল নগরীর (Sambhal) আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কি জন্মগ্রহণ করতে চলেছেন সম্ভল নগরীতে।
কী বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা (Sambhal)
সেখানকার এক স্থানীয় বাসিন্দা একে রাস্তোগি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘দশকের পর দশক ধরে আমাদের এই পবিত্র তীর্থস্থানকে গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছিল। সম্ভল নগরীকে অবহেলা করা হত। কিন্তু বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের সরকার নানা উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে এই নগরীর উন্নয়নের জন্য। এই নগরীকে আধ্যাত্মিক পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কল্কি ধামকে পবিত্র করতেই যোগী আদিত্যনাথ সরকার গঙ্গা জল পাঠিয়েছেন মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই পবিত্র গঙ্গাজল এখন মিশে গিয়েছে, সম্ভল নগরীর বিভিন্ন জলাশয়ে।’’
ভক্তরা উৎসবে মেতে ওঠেন
প্রসঙ্গত, এই মহাকুম্ভের জল পবিত্র জলাশয়ে মিশতেই বিভিন্ন ভক্তকে দেখা যায় যে তাঁরা সেই জলাশয়গুলিতে পুণ্যস্নান সারছেন। ভক্তদের বিশ্বাস, প্রয়াগরাজের জল জলাশয়গুলিতে মিশে যাওয়ায় সেগুলিও পবিত্র হয়ে উঠেছে এবং সেখানে স্নান করা মহাকুম্ভে স্নানেরই সমান। সম্ভল নগরীর এ দিনের এই উৎসব সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিমহল মহল। কারণ এর মাধ্যমে কল্কি ধামের গুরুত্ব সারা দেশের সামনে তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামনে আরও অনেকটাই বাড়ল বলে মনে করছেন তাঁরা।
কী বলছেন মহন্ত ভগবত প্রিয়
দমকলের গাড়ি করে সম্ভল নগরীতে জল পৌঁছাতেই পুজো অনুষ্ঠান শুরু করেন মহন্ত ভগবত প্রিয়। জানা গিয়েছে তিনি স্থানীয় শ্রীনিবাস গোপাল তীর্থের মহন্ত। তিনি বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং দমকলের ওই গাড়িটিকে তিলক লাগিয়ে দেন ও আরতি করেন। এরপরে সংবাদ মাধ্যম তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। তার উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধুমাত্র একটি যন্ত্র নয়। এটা একটা গাড়িও নয়। এটা হচ্ছে প্রতীক। আমাদের ভক্তির প্রতীক। আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। আমাদের দেশের সবথেকে পবিত্র নদীর জল বহন করছে এই গাড়িটি। তাই আজকে আমরা এই গাড়িটিকে পুজো করছি। কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কাজে লাগছে।’’
কী বলছে প্রশাসন
এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের তথা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। বিভিন্ন পুলিশ কর্তারা। আশেপাশের মঠ-মন্দিরের সাধু সন্ন্যাসীরাও। তাঁরা প্রত্যেকেই এই উৎসবকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে পালন করেন, ধর্মীয় প্রথা মেনে। তাঁরা মন্ত্র উচ্চারণ করেন। জেলার পুলিশ সুপার কৃষ্ণকুমার বিষ্ণোই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,‘‘দমকলের এই গাড়িটি করেই মহাকুম্ভের গঙ্গাজলকে আনা হয়েছে। এমনই নির্দেশ ছিল। এই পবিত্র গঙ্গাজল কোনও রকমের বাধা ছাড়াই অত্যন্ত নিরাপদেই আমরা আনতে পেরেছি সম্ভল নগরীতে।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘এটা প্রথমবারের জন্য হল যে দমকলের গাড়ি করে এভাবে গঙ্গা জল আনা হল। সম্ভল নগরীতে। এটা মূলত সেই সমস্ত ভক্তদের জন্যই করা হল, যাঁরা মহাকুম্ভে হাজির হয়েছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার সনাতন ধর্মের তীর্থস্থানগুলিকে উন্নত করতে সদা সচেষ্ট।’’ প্রসঙ্গত প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ সম্পন্ন হয়েছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। মহা শিবরাত্রির দিন। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল মহাকুম্ভ (Mahakumbh)।
Leave a Reply