মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: থানার ওসি, আইসি কিংবা বিডিও-কার্যত তৃণমূলের ব্লক সভাপতির মতো আচরণ করছেন। একাধিক জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসকদের ভূমিকাও একইরকম। শাসকদলের ব্যাটন এখন দলের নেতাদের থেকে আমলাদের হাত বেশি। এটা বিরোধীদের অভিযোগ নয়, খোদ দলেরই কর্মীদের একাংশই একাধিক জেলায় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ, কোনও নেতাকে পুলিশ আধিকারিকের পছন্দ না হলে তার পদে ঠিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়ায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে আনন্দবাজার পত্রিকার খড়গপুরের প্রতিনিধি দেবমাল্য বাগচীকে গ্রেফতার করার ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
নদিনের মাথায় দেবমাল্যের জামিন, শর্ত কী জানেন?
৬ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। পরে, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তফশিলি জাতি ও জনজাতিদের প্রতি অত্যাচার দমন আইনের ৩ (১) (আর) (এস) ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৩, ৩৫৪বি, ৫০৯ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় গ্রেফতার করা হয় দেবমাল্য এবং বাসন্তী দাসকে। বাসন্তীদেবী চোলাই কারবারিদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। আর দেবমাল্য সেই খবর প্রকাশিত করেছিলেন। গ্রেফতারের ৯ দিন পর তিনি মুক্তি পান। জামিনের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে, যে এলাকায় অভিযোগকারী থাকেন, আগামী ১৪ দিন সেই সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় (অর্থাৎ খড়্গপুরে) দেবমাল্য এবং বাসন্তী ঢুকতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারবেন না।
দেবমাল্যকে গ্রেফতারের পিছনে আসল কী কারণ লুকিয়ে রয়েছে জানেন?
খড়্গপুর শহরের সাঁজোয়াল এলাকায় চোলাই মদের রমরমা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কীভাবে পুলিশ প্রশাসনের অকর্মণ্যতার জন্যই এই রমরমা এবং কীভাবে বাড়িতে বসে বসেই চোলাইয়ের ব্যবসা চলছে তা বিশদে তুলে ধরেন দেবমাল্য। গত ২৭ অগাস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার খড়্গপুর সংস্করণে খবর প্রকাশের পরেই স্থানীয় মানুষের রোষের মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশ ওই চোলাই ঠেকের কয়েকজন মদ্যপকে ধরে জনরোষ সামাল দিতে চায় ঠিকই, কিন্তু মূল অভিযুক্তরা পালায়। এই ঘটনার পর, বাসন্তী দাস নামে ওই মহিলা যিনি এই অভিযোগ করেছিলেন তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে চোলাই মদের কারবারিরা। তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এই চোলাই কারবারিদের থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা নেয় পুলিশ। সেই মাসোহারা পুলিশের বিভিন্ন মহলে পৌঁছে যেত। এই মৌচাকেই ঢিল মেরেছিলেন দেবমাল্য। আর পুলিশের চেহারা জনগনের কাছে বেআব্রু করে দিয়েছিলেন। এবার পুলিশ যেটা বিরোধী দল বিজেপি ক্ষেত্রে গোটা রাজ্যজুড়ে করছে, মিথ্যা কেস দিয়ে লকআপে ঢোকানো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেই বাহদুরি কাজ দেখিয়েছে পুলিশ। খোদ বিরোধী দলনেতা এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।
দেবমাল্য গ্রেফতারি নিয়ে কী বলেছেন শুভেন্দু?
শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাটি টুইট করে লিখছেন, অভিযোগকারিণী বাসন্তী দাস এবং এলাকার অন্যান্য মহিলারা ওইখানকার কিশোর-কিশোরীদের বাঁচাতে এই অবৈধ ব্যবসাকে আইনত বাধা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। ওই এলাকার পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল যে মহিলারা নিরাপদ বোধ করছিলেন না। পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার চেয়ারপার্সনের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে খবর হতেই শোরগোল পড়ে। সংবাদ সংস্থার বাধ্যতা তাঁর কাছে অজানা নয়। তাঁরা 'নির্লজ্জভাবে নীরব' কারণ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিজ্ঞাপন রাজস্বের উপর তাদের নির্ভর করে চলতে হয়। ছদ্ম উদারপন্থী এবং বুদ্ধিজীবীরাও খানিক এই কারণেই চুপ।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধী দল থেকে আদিবাসী সংগঠন
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমার প্রেস ক্লাব, বিভিন্ন দল ও সংগঠন এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনও জানানো হয়েছিল বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। আদিবাসী সংগঠন আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। তাদের দাবি ছিল, এই আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে। বিজেপির বক্তব্য, সংবাদ মাধ্যমের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা হয়েছে।
কী বললেন দেবমাল্য?
জামিনে মুক্তি পেয়ে দেবমাল্য বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন। তাই, এখনই এই ঘটনা নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না। এই বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে যা বলার তা বলব।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours