মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শেখ হাসিনার জামানার পতনের পর মহম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) জামানায় ঢাকা-ইসলামাবাদ দোস্তি চওড়া হয়েছে। পদ্মাপাড়ে ভারত বিরোধিতার সুর যত চড়েছে ততই পাকিস্তানের কোলে ঢলে পড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ ৫০ বছর পর সমুদ্র বাণিজ্য চালু করেছে বাংলাদেশ (Bangladesh Army Chief)। করাচি থেকে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছে চট্টোগ্রামে। এবার পাকিস্তান সেনার সঙ্গে যোগ রেখে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমানকে সরাতে চাইছে ইউনূস প্রশাসন। তাঁর বদলে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়ে আসা হতে পারে পাক ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চতুর্থ স্থান অধিকারী,ফয়জুর রহমানকে।
ইউনূস এবং সেনাপ্রধানের মধ্যে বিরোধ!
সূত্রের খবর, বাংলাদেশের (Bangladesh Army Chief) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) , যিনি গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দেশের সেনা প্রধানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, জেনারেল জমান দীর্ঘদিন ধরে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। তিনি দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এবং শেখ হাসিনার অপসারণের পর দেশটির আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর জেনারেল জমান বারবার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কথা বললেও, বর্তমান পরিস্থিতির অজুহাতে ইউনূস দেশে নির্বাচনের তারিখ বারবার স্থগিত করেছেন। আরেকটি কারণ হতে পারে যে, জেনারেল জমান শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক শেখ হাসিনার পরিবারে, যার ফলে দু’পক্ষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
ইউনূস সরকার এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের ষড়যন্ত্র
বিশেষ সূত্রমতে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল জমান সন্দেহ করছেন যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং আইএসআই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। তাঁর ধারণা, আইএসআই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাব ফেলছে এবং তাদের পছন্দের লোকদের শীর্ষ পদে নিযুক্ত করার চেষ্টা করছে। গত মাসে পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিকের বাংলাদেশ সফরকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকটি, জেনারেল জমানের প্রতি আইএসআইয়ের হস্তক্ষেপের চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফয়জুর রহমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে চতুর্থ স্থান অধিকারী। তিনি পাকিস্তানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
জমানকে অপসারণের চেষ্টা
বাংলাদেশ সেনার অভ্যন্তরে গুঞ্জন, অন্তবর্তী সরকার জেনারেল জমানকে সেনাপ্রধান পদ থেকে অপসারণ করে, ফয়জুর রহমানকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ফয়জুর রহমানকে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের সমর্থন রয়েছে।
বিরোধের সূত্রপাত
গত অগাস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময়, আন্দোলনকারীদের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন জেনারেল জমান এবং সেনা। তাদের চাপেই ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন হাসিনা। তারপর, মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউনুস। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখা দিয়েছে ইউনূস সরকার। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এতদিন পর্যন্ত ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতাধীন। অর্থাৎ, সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কাজেই, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাজনৈতিক প্রয়োজনে সেনাকে ব্যবহারের সুযোগ ছিল। তার বদলে সেনাকে রাষ্ট্রপতির আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছে নয়া সরকার। এর ফলে, ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকবে। কিন্তু আখেড়ে উল্টো কাজ করছে ইউনূস প্রশাসন। তার থেকেই বিরোধের সূত্রপাত।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
বাংলাদেশে (Bangladesh Army Chief) শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশে বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক সম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যা ঢাকা এবং নয়াদিল্লির সম্পর্ককে জটিল করে তুলছে। ভারত, ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারকে অভিযোগ করছে যে তারা সন্ত্রাসী মৌলবাদী ইসলামিক শক্তিগুলির দ্বারা সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ প্রসঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষম এবং এ ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ভারত সফরে এসে পাক গোয়েন্দারা ভারতের চিকেন নেকও দেখতে গিয়েছিলেন। যা ভারতের কাছে বিরক্তির কারণ। এই আবহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পাক ঘনিষ্ঠতা ভারতের কাছে অসন্তোষের।
Leave a Reply