মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত বৃহস্পতিবার ১০ই জুলাই, রাতে ঢাকার ধানমন্ডির নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বরকতকে (Abul Barkat)। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ নাসিরুল ইসলাম।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউনূস সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা দায়ের করেছিল আবুল বরকতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ — তিনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় (২০০৯-২০১৪) ২৯৭.৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের সাথে যুক্ত ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, বরকত এবং তৎকালীন বাংলাদেশ (Bangladesh) ব্যাংকের গভর্নর মিলে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে AnonTex গ্রুপের ২২টি কোম্পানিকে অবৈধভাবে ঋণ অনুমোদন করেন। অদৃশ্য কারখানা ও ভবনের নামে ঋণ প্রদান, ভূয়া দলিল তৈরি ও অস্বাভাবিক দামে জমি কিনে ব্যাংকের অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ড. আবুল বরকত বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তিনি জাপান সরকারের “অর্ডার অফ দ্য রাইজিং সান” পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং ২০২১ সাল থেকে TIGER (Transformation, Integration and Globalization Economic Research)-এর বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
“বাংলাদেশে ৩০ বছরের মধ্যে হিন্দু থাকবে না” — আবুল বরকতের সতর্কবার্তা (Abul Barkat)
২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাগ্রন্থ “Political Economy of Reforming Agriculture-Land-Water Bodies in Bangladesh”-এ ড. বারকত আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যে হারে সংখ্যালঘু হিন্দুরা দেশত্যাগ করছে, সেই ধারা বজায় থাকলে ২০৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আর কোনও হিন্দু থাকবে না।
ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:
“গত ৪৯ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন হিন্দু বাংলাদেশ ত্যাগ করছেন — অর্থাৎ বছরে প্রায় ২,৩০,৬১২ জন। ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১.১৩ কোটি হিন্দু বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন ধর্মীয় বৈষম্য ও নিপীড়নের কারণে।”
তিনি জানান, বাংলাদেশে সেনাশাসনের সময় এই নিপীড়ন ছিল সর্বোচ্চ স্তরে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার আগে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ এবং স্বাধীনতার পরে ‘ভেস্টেড প্রপার্টি আইন’-এর মাধ্যমে সরকারের হাতে ৬০% হিন্দুদের জমি চলে যায়।
তাঁর বইটি তিনি উৎসর্গ করেন তাঁর শৈশবের বন্ধুদের, যারা ‘বুনো’ উপজাতির সদস্য ছিলেন — এবং বর্তমানে যাদের আর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইউনূসের ইসলামপন্থী তোষণ নীতি (Yunus)
মোহাম্মদ ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে ইসলামপন্থার উত্থান নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যায়। তিনি প্রথমেই উগ্র ইসলামি সংগঠন জামায়াতে ইসলামী-র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
এরপর ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দেন। এই একই সময়ে হিন্দুদের উপর ধারাবাহিক হামলাগুলোকে ছোট করে দেখাতে শুরু করেন ইউনূস। কখনও তিনি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আবার কখনও বলেছেন, “এগুলোর মাত্রা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে”।
এই সময়কার শিক্ষাব্যবস্থায়ও ইতিহাস বিকৃতি ঘটে। নতুন পাঠ্যবইয়ে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা নাকি করেছিলেন জিয়াউর রহমান — যিনি ইসলামপন্থীদের কাছে প্রিয় মুখ।
এছাড়া, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় Hizb ut-Tahrir নামক এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ আজাজকে।
ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে কূটনীতিকের ক্ষোভ (Yunus Government)
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মরক্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ প্রকাশ্যে ফেসবুকে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
Leave a Reply