ORS: গুণমান ছাড়া শিশুদের পানীয়তে ওআরএস লেবেলিং নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র

fssai news centre bans ors leveling in substandard childrens drinks

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) আইন অমান্যের কারণ দেখিয়ে পানীয়ের ওপর থেকে ওআরএস (ORS) লেখা বাদ দেওয়ার নির্দেশ। কেন্দ্রশাসিত এবং রাজ্যগুলিতে এই নির্দেশিকা সমানভাবে কার্যকর হবে। চিনিযুক্ত পানীয় থেকে ওআরএস লেবেলিং সরিয়ে দেওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিবরঞ্জনী সন্তোষ ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ সচেতনতা অভিযান চালিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “চিনিযুক্ত পানীয় যা ওআরএস, তা কার্যত শিশুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।” অবশেষে মিলেছে সাফল্য। সাফল্যে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ তিনি।

আমরা জিতেছি!

সরকারের তরফে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) গত ১৪ অক্টোবর একটি নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, ওআরএস একটি স্বতন্ত্র শব্দ। এখন থেকে ওআরএসকে ট্রেডমার্ক হিসেবে ব্যবহার করলে ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সন্তোষ খুব স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা জিতেছি! আজ একটা নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এখন থেকে শিশুদের পানীয়তে কোনও কোম্পানি আর ওআরএস ব্যবহার করতে পারবে না। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন দ্বারা স্বীকৃতি এবং তাদের ফর্মুলাকে অনুসরণ করেই ব্যবহার করতে হবে। আমি এফএসএসএআই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। আজ রাত ১০টা ২০ মিনিটে আমি বলছি এবং যাঁরা শুনছেন প্রত্যেক শিশুর অভিভাবক, ডাক্তার, শিশু, প্রভাবশালী, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, অ্যাডভোকেট, অভিনেতা-অভিনেত্রী, পডকাস্ট, ইউটিউবার-সহ সকলকে আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

কেন ক্ষতিকর পানীয় (ORS)?

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি লিটার পানীয়তে ২৪৫ মোট অসমোলারিটি সহ একটি ওআরএস (ORS) দ্রবণ সুপারিশ করে। এতে প্রতি লিটার জলে ২.৬ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড, ১.৫ গ্রাম পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ২.৯ গ্রাম সোডিয়াম সাইট্রেট এবং ১৩.৫ গ্রাম ডেক্সট্রোজ অ্যানহাইড্রাস চিনি থাকাটাই দস্তুর। কিন্তু ওআরএস বলে দাবি করা অনেক বাণিজ্যিক পানীয়তে এই মানদণ্ড মেনে চলা হয় না বলে অভিযোগ। এই উপাদানগুলি ওই সব পানীয়তে উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে। এই সব পানীয়তে প্রায়শই প্রতি লিটারে ১২০ গ্রাম চিনি থাকে এবং এর প্রায় ১১০ গ্রামই আসে অতিরিক্ত চিনি থেকে। এগুলির ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাও অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যেমন প্রতি লিটারে ১.১৭ গ্রাম সোডিয়াম, ০.৭৯ গ্রাম পটাসিয়াম এবং ১.৪৭ গ্রাম ক্লোরাইড, যা ডব্লুএইচও (WHO)-এর সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে ঢের কম।

আইনি লড়াই

২০২২ সালে ডাক্তার সন্তোষ তেলেঙ্গনা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি নিজের করা পিআইএল-এ উল্লেখ করে বলেন, “ডব্লুএইচও (WHO)-এর মান পূরণ না করে কোনও কোম্পানি ফলের রসে ওআরএস বাজারজাত করতে পারবে না। কারণ এই সব পানীয়তে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি এবং অসাম্যঞ্জস্যপূর্ণভাবে ইলেক্ট্রোলাইটের সমীকরণ থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। শিশুদের পানীয় হিসেবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই লেবেল যুক্ত ওআরএস।” বিষয়টি প্রথম নজরে আসে তৎকালীন স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিব রাজেশ ভূষণের। তারপরেই শুরু হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত। পরবর্তীকালে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল সরকার নির্দেশিকা জারি করে এবং বিজ্ঞপানে ওআরএস লেবেল সীমিত করে। কিন্তু গত ১৪ জুলাই বেশ কিছু কোম্পানি পাল্টা মামলা করলে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয়। চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত কোম্পানিগুলি পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেড মার্কে পণ্যের নামে ওআরএস (ORS) ব্যবহার চালিয়ে যায়। এরপর  ১৪ অক্টোবর ২০২৫ আসে সেই চূড়ান্ত নির্দেশিকা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share