মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাঁচবার মনোনয়নেও পাননি শান্তি নোবেল পুরস্কার (Nobel Peace Prize)। অথচ, তাঁর নামে বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১০১টি রাস্তা। আবার তিনিই পেয়েছেন টাইম ম্যাগাজিনের ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপা। তিনি আর কেউ নন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তাঁর অহিংসার আদর্শ এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবরকে (Gandhi Jayanti 2024) আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আসুন জেনে নিই মহাত্মা গান্ধীর জীবনের নানা জানা-অজানা কাহিনি।
আইনজীবী হিসেবে আন্দোলন শুরু (Gandhi Jayanti 2024)
দক্ষিণ আফ্রিকার সামন্ততান্ত্রিক দাস প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন দিয়ে নিজের রাজনৈতিক সংঘর্ষময় জীবন শুরু করেছিলেন গান্ধীজি। আইনজীবী হিসেবে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হয়ে লড়াই করে ছিলেন। এরপর ভারতে এসে পরাধীন ব্রিটিশ ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে সরব হন। তবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল অহিংসা। তাঁর (Gandhi Jayanti 2024) আদর্শের কথা দেশ-বিদেশের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করা হয়ে থাকে। গোটা বিশ্বকে আন্দোলন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ভাষা হিসেবে অহিংসা দ্বারা কীভাবে সাফল্য পেতে হয়, সেই ভাবনাকে ভারত থেকে বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্ব তাঁর মতকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণও করেছে। কিন্তু তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার (Nobel Peace Prize) পাননি। তবে একবার-দুবার নয়, পরপর পাঁচ-পাঁচবার তাঁকে মনোনীত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত এই সম্মান প্রাপকের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবশ্য এই গল্প অনেকের কাছেই অজানা।
বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১০১টি রাস্তা তাঁর নামে
গুজরাটের পোরবন্দর এলাকায় ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী (Gandhi Jayanti 2024)। ভারত তথা বিশ্বের যে কোনও স্থানে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার হরণ হলে অহিংসার পথে আন্দোলনে নেমেছেন তিনি। নিপীড়িত, শোষিত মানুষের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সব সময় অধিকার নিয়ে সরব হয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক পরাধীন ভারতেকে মুক্ত করতে একাধিক স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন, লবণ সত্তাগ্রহ আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন, অগাস্ট আন্দোলন সহ একাধিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার একাধিকবার তাঁকে গ্রেফতার পর্যন্ত করেছিল। এমনকী পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আমরণ অনশন পর্যন্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “চোখের বদলে চোখ নিলে গোটা বিশ্বটাই একদিন অন্ধ হয়ে যাবে।” তাঁর জন্মদিনকে স্মরণে রেখে ইউনাইটেড নেশনস আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। গান্ধীজির নামে বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১০১টি রাস্তা। ভারতের বিভিন্ন অংশ জুড়ে ৫৩টি এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আরও ৪৮টি রাস্তা রয়েছে তাঁর নামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে 'মহাত্মা' উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, ফোর্ড মোটরসের কর্ণধার হেনরি ফোর্ড।
আরও পড়ুনঃ তাঁর আওয়াজই তাঁর পরিচয়! জন্মদিনে স্মরণ ‘নাইটিঙ্গল অফ ইন্ডিয়া’ লতাজিকে
নানা মহলে সমালোচনা
তবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেমন ইতিবাচক প্রভাব ছিল তাঁর, ঠিক তেমনিই দেশভাগে নেতিবাচক প্রভাবের কথাও সামালোচকরা করে থাকেন। যদিও দেশভাগের আগে নিজের শরীরকে দুই টুকরোর কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নিজের ভাবনায় স্থির থাকতে পারেননি গান্ধী (Gandhi Jayanti 2024)। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট পাকিস্তান এবং ভারত বিভাজন হয়। মুসলিম লিগের লাহোর প্রস্তাবের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভাবনাকে শেষ পর্যন্ত পরোক্ষভাবে মান্যতা দিয়েছিলেন তিনি। সশস্ত্র বিপ্লবীদের সমর্থন করেননি। ব্রিটিশদের কাছে তাঁর আবেদনে অনেক বিপ্লবীদের ফাঁসির সাজা মুক্ত হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সদর্থক ভূমিকা নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে, দেশভাগের পর পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে পারেননি তিনি। নেহরুর থেকে বেশি ভোট পেয়েও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কেন প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেন না, এইসব প্রশ্ন তোলেন সমালোচকরা। অবশেষে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজিকে গুলি করে হত্যা করেন নাথুরাম গডসে। তবে বর্তমান সময়ে তাঁর অহিংসার আদর্শ একান্তভাবে প্রয়োজনীয়। তাই তাঁকে এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours