ICC Champions Trophy: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থাকে কার্যত বিদায় পাকিস্তানের, ভারতের জয়ে উৎসব বারামুলায়

icc champions trophy baramulla celebrates bharat’s win over pakistan

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কোহলির শট বাউন্ডারি পেরোতেই উচ্ছ্বসিত উপত্যকা। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইয়ের মতোই আকাশে আতশবাজির রোশনাই বারামুলায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (ICC Champions Trophy) পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে ভারত। প্রথমবারের মতো, আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর,ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখল উপত্যকাবাসী। ভারত জিততেই বারামুলা শহর উৎসবের সুরে ভরে ওঠে, যা জম্মু এবং অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। এই জয় শুধুমাত্র ভারতের ক্রিকেট দক্ষতার নয়, বরং আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর কাশ্মির উপত্যকায় পরিবর্তিত মনোভাবের প্রতীকও হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চির প্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তান

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা তুঙ্গে। শুরুতে দুবাইয়ের গ্যালারির কিছু অংশ ফাঁকা থাকলেও পরে তা ভরে যায়। ২৯ বছর পরে কোনও আইসিসি (ICC Champions Trophy) টুনার্মেন্ট পাকিস্তানে, অথচ ‘চিরশত্রু’ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ম্যাচটাই করাচি বা লাহোরের বদলে দুবাইয়ে। এতেই শেষ হচ্ছে না দুর্ভোগ। করাচিতে প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারের পরে, রবিবারও রোহিতদের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকেই ছুটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা মহম্মদ রিজওয়ানদের। লাহোর থেকে করাচি, ক্ষোভের আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি। অন্যদিকে ওয়াঘার এপারে খুশির হাওয়া। আট বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওভালে ভারতকে হারিয়ে জিতেছিল পাকিস্তান। ২০১৭ সালের সেই ম্যাচের বদলা নিল ভারত। এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেই প্রায় ছিটকে যাওয়ার অবস্থা পাকিস্তানের। প্রথমে ব্যাট করে ২৪১ রান করেছিল পাকিস্তান। বিরাট কোহলির শতরানে ৪৫ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে জিতল ভারত।

ভারতের জয়েই খুশি উপত্যকা

বারামুলায় এদিন জয় উদযাপন ছিল এক উজ্জ্বল প্রদর্শন। বিশেষত যুবক-যুবতীদের মধ্যে জাতীয় গর্ব এবং উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। যখন আকাশে রঙিন আতশবাজি ফোটে এবং চারপাশে আতশবাজির শব্দ ভেসে আসে, তখন শহরটা জীবন্ত হয়ে ওঠে। বারামুলার মানুষের জন্য, এই জয় শুধু ভারতীয় ক্রিকেট দলের মাঠে সাফল্য নয়, বরং এক বৃহত্তর গর্ব এবং ঐক্যের প্রতীক। “এটি এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত, বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করতে পারা এক বিশেষ অনুভূতি,” বলেন এক স্থানীয় যুবক, যার মুখ আলোয় ঝলমল করছে। “ক্রিকেট আমাদের জন্য শুধু খেলা নয়; এটি আমাদের একসাথে নিয়ে আসে।”

কিং কোহলিতে মুগ্ধ

এক দিনের ক্রিকেটে ৫১ নম্বর শতরান করে ফেললেন কোহলি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ১১১ বলে করা শতরান বুঝিয়ে দিল কেন তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। ম্যাচ জেতানো বাউন্ডারিতেই শতরান পূর্ণ কোহলির। সেই শতরান করে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি আছেন, স্বমহিমাতেই আছেন। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর সারা দেশ রাজকীয় এই ইনিংসকে তাড়িয়ে উপভোগ করে। যে কাশ্মীরকে এতদিন ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করা হত। প্রধানমন্ত্রী মোদির জমানায় সেই কাশ্মীরে দাঁড়িয়েই বিরাট-রোহিতদের জয় উদযাপন করল উপত্যকাবাসী। এই জয় আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর উপত্যকাবাসীর মনের অবস্থা পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিল।

ক্রিকেটই মেলবন্ধন, পরিবর্তিত কাশ্মীরের ছবি

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীর যে বিশেষ মর্যাদা পেত, ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট তার বিলোপ ঘটায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তারপর থেকেই কাশ্মীরে এসেছে পরিবর্তনের জোয়ার। পরিবর্তিত কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতা নয় মেলবন্ধনই প্রাধান্য পায়। তৈরি হয়েছে নয়া রেলপথ। যা জম্মুকে যুক্ত করেছে বারামুলার সঙ্গে। এখন কাশ্মীরে ভারতের পতাকা ওড়ানো অপরাধ নয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এখন রোহিত-বিরাটদের হয়েই গলা ফাটায় কাশ্মীর। যার প্রতিফলন ঘটেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (ICC Champions Trophy) ভারতের জয়ের পর বারামুলার উচ্ছ্বাসে। ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই কাশ্মীরের স্থানীয় যুবকদের মধ্যে যে নতুন এক সম্প্রদায়ভিত্তিক অনুভূতি গড়ে উঠেছে। এটি মুহূর্তের উৎসব নয়, বরং কাশ্মীরের রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবর্তনের একটি চিহ্ন।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share