Oxfam Global Report: ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ভারত থেকে ৬৫ লক্ষ কোটি ডলার সম্পদ লুট করে ব্রিটিশরা!

GettyImages-1055135138

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি অক্সফাম গ্লোবালের (Oxfam Global Report) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখানো হয়েছে ভারত আর্থিক ভাবে কতটা সমৃদ্ধ ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরাধীন ভারত থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার সম্পত্তি লুট করে নিয়ে গিয়েছে ব্রিটিশরা। মূলত, ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্য়ে এই লুট করেছে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এর মধ্যে প্রায় ৩৪ লক্ষ কোটি টাকা শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের ১০ শতাংশ ধনীর কাছে পৌঁছেছে। আজকের দিনের মূল্য বিচার করলে, ৫০ পাউন্ডের নোট দিয়ে গোটা লন্ডন শহরকে চারবার মুড়ে ফেলা যাবে ওই লুটের টাকা দিয়ে। ফলে ভারতের ধনে যে তারা ধনী হয়েছিল একথা আরও একবার প্রমাণিত হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে ভারতবর্ষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞানচর্চা, আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনা, সাহিত্য, প্রযুক্ত্যি বিদ্যা, চারুকলা, অর্থনীতির এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক কথায় পরম পরম বৈভবশালী ছিল। ভারতের সভ্যতা যখন বিকশিত হয়ে চরম উৎকর্ষের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময়ে পশ্চিমের দেশে ভালো করে সভ্যতার বিকাশই হয়নি। ভারত কোনও সময়েই ঔপনিবেশিকতার মানসিকতার আঙ্গিকে বিশ্বকে দেখেনি, উল্টে ভারতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ থেকে বার বার আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। ৭২০ সালের মহম্মদ বিন-কাশেম থেকে ১৭৫৭ সালের রবার্ড ক্লাইভ (British) পর্যন্ত সকলেই আক্রমণকারী ছিলেন। তাঁরা অমানবিক লুট, হত্যা, ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর এবং সম্পদ হরণ করে নিয়ে গিয়েছেন। অকাতরে এই দেশের পার্থিব সম্পত্তির লুট হলেও শেষ হয়ে যায়নি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যাঁরা ইতিহাস রচনা করেছেন তাঁরা কেবল ভারতের কী ছিল না, কতটা খারাপ আর গরীব ছিল সেই কথাই খোঁজ করেছেন। ভারত যে আর্থিক ভাবেও বিশ্বকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রেখেছিল তার উল্লেখ কোনও ইতিহাসবিদ সন্ধান করতে চাননি। অক্সফাম গ্লোবালের প্রতিবেদন প্রমাণ করে ভারতের অর্থনীতি কতটা প্রভাবশালী ছিল।

ব্রিটিশদের ১০ শতাংশ ধনী ভারতের সম্পদের ধনবান (Oxfam Global Report)

অক্সফাম গ্লোবালের (Oxfam Global Report) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭৬৫ সাল থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের (British) কেবলমাত্র ১০ শতাংশ ধনী ভারত থেকে আজকের বর্তমান সময়ের ৩৩.৮ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার সমান সম্পত্তি লুট করেছিল। এই বিপুল পরিমাণে সম্পদ ৫০ পাউন্ডের নোটে পরিণত করলে তা লন্ডন শহরকে ওই নোটের কার্পেট দিয়ে চার বার ঢাকতে পারবে। এই প্রতিবেদনের লেখক উৎসা পট্টনায়েক এবং প্রভা পট্টনায়েক বলেন, পরাধীন ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের যুগে ইংরেজরা ভারত থেকে ৬৪.৮২ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পত্তি লুট করেছিল। ইংল্যান্ডে বড় বড় ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে এই সম্পদ পারিবারিক সূত্রে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এই বিরাট পরিমাণ টাকা বা সম্পত্তি ঔপনিবেশিক শাসনকে কায়েম রাখতে ব্যবহার করা হতো। মূলত দাস কেনা-বেচা এবং নতুন বিনিয়োগে ব্যবহার হতো। পরবর্তী সময়ে গোটা বিশ্বসাম্রাজ্যকে ধরে রাখাতে এই অর্থকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে রিপোর্ট থেকে অনুমান করা যেতেই পারে ভারতে থেকে উপার্জিত বা আয়ের টাকা বাকি বিশ্বে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করত ইংরেজরা। ফলে ভারতের সম্পত্তি ছিল না, কোনও অর্থনীতি সুব্যবস্থা ছিল না এই যুক্তি অনেক গবেষক আলোচ্য প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মানতে নারাজ।

১৭৫০ সালে বিশ্বের মোট উৎপাদনে ভারতের ছিল ২৫ শতাংশ

এই প্রতিবেদনে (Oxfam Global Report) আরও বলা হয়েছে যে বর্তমানে আমরা যে বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে দেখছি তা আদতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকাতার ফল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (British) সম্পূর্ণ শাসন এবং ব্যবস্থা ছিল আজকের দিনে বহুজাতিক সংস্থার অনুরূপ। তারা নিজেরাই আইন করে সাম্রাজ্যকে চালাতেই সমগ্র শাসন ব্যবস্থাকে তৈরি করেছিল। ১৭৫০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বের বাজারে উৎপাদনের বিচারে ভারতীয় উপমহাদেশ বা অখণ্ড ভারত মোট শিল্প উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশের অধিকারী ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশদের অত্যাচার, লুটপাট এবং দেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থাকে নষ্ট করার ফলে ১৯০০ সাল থেকে ২ শতাংশ কমে গিয়েছিল। খুব স্পষ্ট ভাবে এবং কৌশল করে ভারতের উৎপাদন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে ব্রিটিশরা। ইংরেজরা নিজেদের বস্ত্রকলগুলিকে বিশ্ববাণিজ্যে আরও বিস্তার করতে ভারতীয় এবং এশিয়া মহাদেশের কাপড়ের কলগুলিকে কাঁচামাল, আর্থিক জোগান এবং শ্রমিকের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে সকল উৎপাদন পদ্ধতিকে সমূলে নিকেশ করেছে। ফলে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনে আনুমানিক ৬৪.৮২ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার লুট করেছে।

খুব দ্রুত ভারত

রিপোর্টে (Oxfam Global Report) আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পত্তি ২ লক্ষ কোটি বৃদ্ধি হয়েছে। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় ভারতের ২০৪ জন সংযুক্ত হয়েছেন নতুন ভাবে। প্রত্যেক সপ্তাহে ৪ জন করে ভারতীয় ধনবান তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। গত বছরেই এই গবেষণা সংস্থা ভারতকে ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, এবারেও আগামী একদশকে পাঁচ ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে ভারতীয় অর্থনীতি, ঠিক এমনটাই জানিয়েছে এই গবেষণা।

      

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share