মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ ভবন তৈরির জন্য চলছিল মাটি খোঁড়ার কাজ। আর সেই কাজ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ শ্রমিকদের। মাটি খোঁড়ার সময় বেরিয়ে আসে প্রাচীন আমলের পাথর। বুধবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালদহ (Malda) ইংরেজবাজার এলাকায় আদালত চত্বরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মাটির তলা থেকে উদ্ধার হওয়া পাথরটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির। পাথরের চারিদিকে নকশা কাটা, মাথার উপর ছোট গর্ত। আদালত চত্বরে এমন পাথর উদ্ধারের ঘটনা জানাজানি হতেই তা দেখতে ভিড় জমে যায়। প্রথমে দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, এই পাথর পতাকা উত্তোলনের জন্য ব্যবহার করা হত। কারণ, বর্তমান মালদহ জেলা আদালত চত্বর এক সময় নীলকর সাহেবদের নীলকুঠি ও অফিস ছিল। আবার অনেকের ধারণা এই পুরনো পাথরটি শিবলিঙ্গ। পাথরকে দেখে এদিন নানা মত উঠে আসে। যদিও প্রত্নতত্ত্ব গবেষক মোনালিসা লাহা বলেন, পাথরটি দেখে মনে হচ্ছে এটি পাল বা সেন আমলের। এই পাথরটি আসলে ভোটিভ স্তূপ। বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শন। মালদহের (Malda) জগজীবনপুর গ্রামে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার হয়েছে। তাই থেকে প্রমাণিত মালদহে বৌদ্ধদের অবস্থান ছিল। তাই, ভোটিভ স্তূপ উদ্ধার হওয়াও স্বাভাবিক। তবে, ইংরেজবাজার চত্বরে এই স্তূপ উদ্ধার হওয়ায় কিছুটা অবাক লাগছে। কারণ, এর আগে এই এলাকায় বৌদ্ধদের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ভোটিভ স্তূপ কী? Malda
বৌদ্ধ পণ্ডিত আচার্য বিনয়তোষ শাস্ত্রীর লেখা প্রামান্য গ্রন্থ 'দ্য হিন্দু বুদ্ধিস্ট আইকোনোগ্রাফি'তে ভোটিভ স্তূপ এর বিবরণ রয়েছে। সাধারণত কোন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর দেহাবশেষের উপরে নির্মিত এই স্তূপে ১০০০ বা তারও বেশি সংখ্যকবার ভগবান বুদ্ধের নাম বা ছোট ছোট মূর্তি খোদিত থাকত। তাকে অনেকসময় চারটি পৃথক খাঁজকাটা অংশে বিন্যস্ত করা হত। উপরের চতুষ্কোণ অংশটিতে ঘিয়ের প্রদীপ বা ধূপ জ্বালানো হতো,তাকে ঘিরে প্রার্থণা করার প্রথাও ছিল। সাধারণভাবে ভোটিভ স্তূপকে প্রদক্ষিণ করলে পূণ্য হয়-এমন লোকবিশ্বাস প্রচলিত ছিল। নালন্দা-বিক্রমশীলা থেকে আরম্ভ করে সাঁচি-সারনাথ পর্যন্ত বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মস্থানে প্রচুর ভোটিভ স্তূপের সন্ধান পাওয়া যায়। পাল শাসনকালে বৌদ্ধ প্রভাব অধ্যুষিত গৌড়বঙ্গ তথা মালদহ (Malda) জেলায় ভোটিভ স্তূপ উদ্ধার বিরল হলেও অসম্ভব নয়-এমনই মত বিশেষজ্ঞ মহলের। আদালত চত্বরে উদ্ধার এই ইতিহাসের সংরক্ষণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours