Kishenji: মাও ‘দমনে’ বিরাট সাফল্য, আত্মসমর্পণ কিষেনজির ভাইবউ বিমলা-সহ ১১ মাওবাদীর

kishenji_f

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাও ‘দমনে’ মিলল বড় সাফল্য। আত্মসমর্পণ করলেন কিষেনজির (Kishenji) ভাইবউ। বুধবার মহারাষ্ট্রের গঢ়ছিরৌলিতে বিদর্ভ অঞ্চলের যে ১১ জন মাওবাদী (CPI Maoist) নেতানেত্রী সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, সেই তালিকায় প্রথম নাম বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কার। তিনি পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির কমান্ডার তথা দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেত্রী। তাঁর স্বামী মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে সোনু সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এই বিমলাই সম্পর্কে কিষেনজির ভাইবউ।

কিষেনজির ভাইবউ (Kishenji)

গত ৩৮ বছর ধরে নকশালপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিমলা। ১৯৮৩ সালে সিপিআইএমএল (পিডব্লিউজি)-র হাত ধরে সশস্ত্র বিপ্লবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দ্রুত তিনি হয়ে ওঠেন কিষেনজির আস্থাভাজন। বছর পনের আগে পশ্চিমবাংলার ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল কিষেনজির। তার আগেই অবশ্য বিমলার স্বামী বেণুগোপালও সংগঠনের প্রথম সারির নেতা হয়ে গিয়েছিলেন। বিমলার বিরুদ্ধে গঢ়ছিরৌলিতে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৮ জনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে। বিমলার সঙ্গেই এদিন আত্মসমর্পণ করেছেন আরও ১০ জন মাওবাদী।

মাওবাদীদের মাথার দাম

এঁদের সম্মিলিত মাথার দাম এক কোটি তিন লাখ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবীশের হাত থেকে ভারতীয় সংবিধান হাতে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন এই ১১ জন মাওবাদী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিআই মাওবাদীর গঢ়ছিরৌলি ডিভিশনের নাংশু তুমরেতি ওরফে গিরিধর ও তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা উসেন্দি ওরফে ললিতাও। গিরিধর ১৭০টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। তাঁর মাথার দাম ছিল ২৫ লাখ টাকা (CPI Maoist)। মহারাষ্ট্র পুলিশের দাবি, গঢ়ছিরৌলি-সহ বিদর্ভের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ছত্তীশগড়েও একাধিক নাশকতার ঘটনায় জড়িত বিমলা-সহ আত্মসমর্পণকারী ১১ জন মাওবাদী নেতানেত্রী।

কিষেনজির স্ত্রী

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পুলিশের জালে ধরা পড়েছিলেন কিষেনজির স্ত্রী পোথুলা কল্পনা ওরফে সুজাতা। তেলঙ্গানা পুলিশের স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ সূত্র মারফত খবর পেয়ে গোপন ডেরা থেকে গ্রেফতার করেছিল কিষেনজির স্ত্রীকে। পুলিশ সূত্রে খবর, কিষেনজির স্ত্রী সাউথ সাব জোনাল ব্যুরোর ইনচার্জ হয়ে কাজ সামলাচ্ছিলেন। কিষেনজির মৃত্যুর পর নানা রাজ্যে গা ঢাকা দিয়েছিলেন সুজাতা। তাঁর আদত বাড়ি তেলঙ্গনার জগুলাম্বা গাড়োয়াল জেলার পেঞ্চিকালপেট গ্রামে। কিষেনজির স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হলেও, আত্মসমর্পণ করলেন তাঁর (CPI Maoist) ভাইবউ (Kishenji)।

আরও পড়ুন: জেএমবি-র সদস্যরাই এখন এবিটি-তে সক্রিয়, কবুল করল মুর্শিদাবাদে ধৃত বাংলাদেশি জঙ্গিরা

মাওবাদী আত্মসমর্পণ

এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে তিন বার বিদর্ভ এলাকায় মাওবাদী আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটল। ২৭ ডিসেম্বর মলাজখণ্ড দলাম ও ৯ নম্বর পামেড় প্লাটুনের কমান্ডার দেব ওরফে অর্জুন ওরফে রাকেশ সুমদো মুদাম গোন্ডিয়া আত্মসমর্পণ করেছিলেন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। তাঁর মাথার দাম ছিল ৭ লাখ টাকা। ডিসেম্বরেই গঢ়ছিরৌলি জেলায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দুই মাওবাদী কমান্ডার রামাসু পয়াম ওরফে নরসিং এবং রমেশ কুঞ্জম ওরফে গোবিন্দ। রামাসুর মাথার দাম ছিল ৬ লাখ টাকা, রমেশের ২ লাখ। বুধবার আত্মসমর্পণ কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবীশ বলেন, “আমাদের রাজ্যে মাওবাদীদের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র শীঘ্রই মাওবাদী মুক্ত হবে।” তাঁর দাবি, উত্তর গঢ়ছিরৌলি ইতিমধ্যেই মাওবাদী মুক্ত হয়েছে। 

বড় সাফল্য

শুধু মহারাষ্ট্র নয়, দেশজুড়ে মাওবাদী বিরোধী অভিযানের প্রেক্ষিতেও বিমলার আত্মসমর্পণ সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। গত অক্টোবরেই বস্তারে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৮ জন মাওবাদীর। নারায়ণপুর-দান্তেওয়াড়া আন্তঃজেলা সীমানায় আবুঝমাডে থুলথুলি ও নেন্দুর গ্রামের মাঝে জঙ্গলে দুপক্ষে গুলি বিনিময় শুরু হয়। নিহত হন ২৮ জন মাওবাদী। মৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল একে ৪৭ রাইফেল এবং সেল্ফ লোডিং রাইফেল। গত ১৬ এপ্রিল কাঁকের জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন ২৯ জন মাওবাদী। এঁদের মধ্যে ওয়ান্টেড মাওবাদীও ছিলেন কয়েকজন।

শাহের বক্তব্য

প্রসঙ্গত, গত অগাস্টের শেষ দিকে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে মাওবাদী (Kishenji) দমন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, “২০০৪ সাল থেকে ২০১৪-এর মধ্যে সারা দেশে যত মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছিল, সেই তুলনায় ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মাওবাদী হামলার ঘটনা কমে গিয়েছে ৫৩ শতাংশ।” তিনি বলেছিলেন, “এবার কঠোর পরিকল্পনার মাধ্যমে মাওবাদী সন্ত্রাসের সমস্যা মোকাবিলার জন্য চূড়ান্ত আঘাত হানার সময় এসে গিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে দেশকে মাওবাদী সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত করতে পারব।”

দিন কয়েক আগে এসএসবির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলায় এসেছিলেন শাহ। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “মাওবাদী দমন অভিযানগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এসএসবির। তারা সিআরপিএফ এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে শামিল হয়। চার দশক পর বিহার ও ঝাড়খণ্ড এখন মাওবাদীমুক্ত হয়েছে। ছত্তিশগড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এসএসবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে (CPI Maoist)। এবার ওই রাজ্য থেকেও মাওবাদীদের অবলুপ্তি ঘটবে (Kishenji)।”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  WhatsappFacebookTwitterTelegram এবং Google News পেজ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share