মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশের সুরক্ষাই নয়, অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রভাব বিস্তারেও সামরিক শক্তি অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এজন্যই বিশ্বের প্রতিটি দেশ তার সামরিক শক্তি প্রতিনিয়ত বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করে প্রতি বছর একটি তালিকা প্রকাশ করে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৫ সালের রিপোর্টে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিধর সামরিক বাহিনীর তালিকায় চার নম্বরে আছে ভারত (Indian Army)। দিল্লির থেকে বেশ কয়েক কদম পিছনে রয়েছে ইসলামাবাদ।
প্রতিরক্ষায় জোর কেন্দ্রের
সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাটিতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। ‘হাইপারসোনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। এ ছাড়া অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তিতেও উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করতে একের পর এক রণতরী এবং ডুবোজাহাজ নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সবাইকে চমকে দিয়ে গত দু’বছরে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভারও বাড়িয়েছে ভারত। চিন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য ভারত তার প্রতিরক্ষা বাজেট (৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বৃদ্ধি করেছে। ভারত তেজস যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো দেশীয় অস্ত্র তৈরির উপর মনোযোগ দিয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সে যুক্তরাষ্ট্রের পাওয়ার ইনডেক্স ০.০৭৪৪, রাশিয়ার ০.০৭৮৮, চিনের ০.০৭৮৮ এবং ভারতের ০.১১৮৪। এরপরের স্থানগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্ক এবং ইতালি রয়েছে।
কয়েক ধাপ পিছনে পাকিস্তান
আগেরবারও এই তালিকায় ভারত (Indian Army) চার নম্বরেই ছিল। শুধু ২০২৪ সালে নয়, ২০০৬ সাল থেকেই লাগাতার চতুর্থ স্থানে আছে ভারত। ২০০৫ সালে ভারত পঞ্চম স্থানে ছিল। আর সেই বছর যে দেশ চতুর্থ স্থানে ছিল, সেই পাকিস্তান ২০২৫ সালে ১২ নম্বরে নেমে গিয়েছে। গত বছর ছিল নয় নম্বরে। অন্যদিকে এবার সামরিক শক্তির নিরিখে বিশ্বে ৩৫ নম্বরে আছে বাংলাদেশ। তালিকায় পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে অন্যতম হল ইসলামাবাদের আর্থিক দুরবস্থা। প্রায় দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতের পশ্চিম পারের প্রতিবেশী। এ ছাড়া হাতিয়ারের ব্যাপারে অত্যধিক চিনা নির্ভরতা রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের।
এক নম্বরে আমেরিকা
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের নিরিখে অবশ্য এক নম্বর স্থানটি ধরে রেখেছে আমেরিকা। ২০০৫ সাল থেকে চলা ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারে’র তালিকায় এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই অন্য কোনও দেশ। পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫-এ ওয়াশিংটনের প্রাপ্ত পয়েন্ট ০.০৭৪৪। সমীক্ষকদের দাবি, আমেরিকার হাতে রয়েছে ২১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ সৈনিকের এক বিশাল বাহিনী। দেশের বাইরে অন্তত ১০০টি সেনাঘাঁটি রয়েছে ওয়াশিংটনের। সেখান থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আক্রমণ শানানোর ক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২৩-’২৪ আর্থিক বছরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে আটলান্টিকের পারের এই ‘সুপার পাওয়ার’।
ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের সামরিক শক্তি
স্থলভাগে অস্ত্রভাণ্ডার
ভারত: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ৪,২০১টি ট্যাঙ্ক আছে। গাড়ি আছে ১,৪৮,৫৯৪টি। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা হল ১০০। আর ২৬৪টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএসআরএস) আছে ভারতের হাতে।
পাকিস্তান: ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের ট্যাঙ্কের সংখ্যা হল ২,৬২৭। ১৭,৫১৬টি গাড়ি আছে। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারি ৬৬২টি রয়েছে। মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের (এমএসআরএস) সংখ্যা হল ৬০০।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশের কাছে ৩২০টি ট্যাঙ্ক আছে বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১,৫৮৪টি গাড়ি আছে। সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারি আছে ৫৬টি। রকেট আর্টিলারি ১১০টি রয়েছ।
আকাশপথে অস্ত্রভাণ্ডার
ভারত: মোট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা হল ২,২২৯। যুদ্ধবিমান আছে ৫১৩টি। আবার ৮৯৯টি হেলিকপ্টার আছে। আবার অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা হল ৮০।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের হাতে মোট ১,৩৯৯টি এয়ারক্রাফট আছে। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা হল ৩২৮। হেলিকপ্টার আছে ৩৭৩টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা হল ৫৭।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশের হাতে ২১৪টি এয়ারক্রাফট আছে। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা হল ৪২। হেলিকপ্টার মাত্র ৬৫টি আছে। কোনও অ্যাটাক হেলিকপ্টার নেই।
জলপথে অস্ত্রভাণ্ডার
ভারত: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ২৯৩টি ‘অ্যাসেট’ আছে। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সংখ্যা হল দুই। ডেস্ট্রয়ার আছে ১৩টি। ১৪টি ফ্রিগেট আছে। সাবমেরিন আছে ১৮টি। প্যাট্রোলিং ভেসেলের সংখ্যা হল ১৩৫।
পাকিস্তান: পাকিস্তানর ‘অ্যাসেট’-র সংখ্যা হল ১২১টি। একটিও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং ডেস্ট্রয়ার নেই পাকিস্তানের কাছে। ন’টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন এবং ৬৯টি প্যাট্রোলিং ভেসেল আছে পাকিস্তানের হাতে।
বাংলাদেশ: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের হাতে ১১৮টি ‘অ্যাসেট’ আছে। ফ্রিগেটের সংখ্যা সাত। সাবমেরিনের সংখ্যা দুটি। ৬১টি প্যাট্রোলিং ভেসেল আছে। আর পাকিস্তানের মতো একটিও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং ডেস্ট্রয়ার নেই বাংলাদেশের হাতে।
Leave a Reply