মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নারীশক্তির জয়। আবার ভারতে এল বিশ্বকাপ। বিশ্ব জয় করল ভারতের মেয়েরা। আইসিসি ওমেন্স ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ (ICC Women Cricket World Cup) জিতল হরমনপ্রীত-শেফালি-দীপ্তিরা। এই প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ জিতল ভারত। মেয়েদের এই সাফল্যে অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi), রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু থেকে শুরু করে ক্রীড়া, বিনোদন, রাজনৈতিক জগতের তাবড় ব্যাক্তিত্বরা। রাত ১২টার পর মেয়েরা যখন হাতে বিশ্বকাপ তুলল, প্রধানমন্ত্রী লিখলেন, “ঐতিহাসিক এই জয় ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়নদের খেলতে অনুপ্রাণিত করবে”।
ঐতিহাসিক জয়, অনুপ্রেরণা
ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট টিম। তাঁদের এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, “আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে অসাধারণ জয় ভারতীয় টিমের। ফাইনালে তাদের পারফরম্যান্স অসাধারণ দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসকেই ফুটিয়ে তুলেছে। টুর্নামেন্ট জুড়ে টিম অতুলনীয় টিমওয়ার্ক ও লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছে। আমাদের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন। এই ঐতিহাসিক জয় ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়নদের খেলা বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করবে।”
প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন ভারতের মেয়েরা
অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা ভারতই ফেভারিট ছিল। কিন্তু লরা উলভার্টের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে কঠিনতম প্রতিপক্ষই ধরা হচ্ছিল। টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়ে প্রোটিয়া ক্যাপ্টেন চেয়েছিলেন শিশির কাজে লাগাবেন। ভারতীয় বোলারদের মুশকিলে ফেলবেন। দুটোর কোনওটাই হল না। শেফালি আর স্মৃতি মান্ধানা মিলে ভারতকে ওপেনিং জুটিতে ১০০র বেশি রান দিয়েছিলেন। স্মৃতি সেমিতে রান পাননি। ফাইনালে বড় রানের হাতছানি ছিল। কিন্তু ৪৫ করে ফেরেন। শেফালি ৭৮ বলে ৮৭ করেন। ৭টা চার ও ২টো বিশাল ছয় দিয়ে সাজিয়েছেন ইনিংস। জেমাইমা রড্রিগস সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে হারিয়েছিলেন অজিদের। কিন্তু ফাইনালে ২৪ করেন। হরমনপ্রীত কৌরও ২০তে থামেন। এখান থেকেই আবার খেলা ধরেন দীপ্তি শর্মা। সিনিয়র, নির্ভরশীল, অলরাউন্ডার, ঠান্ডা মাথার— চার স্কিলেই হাফসেঞ্চুরি করে গেলেন দীপ্তি। শেষ দিকে ভারতকে দ্রুত ২৯৮এ নিয়ে গেলেন বাংলার রিচা ঘোষ। মুম্বইয়ে হ্যারি, স্মৃতি, শেফালিদের সামনে ছিলেন লরা উলভার্ট। একদিকে ভাঙন, অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টেন। আসা-যাওয়ার মাঝে যেন একার মুঠোয় স্বপ্ন বহন করলেন লরা। সেমিফাইনালে করেছিলেন ১৬৯। ফাইনালেও তাঁর ব্যাটে দুরন্ত সেঞ্চুরি। কিন্তু ১০১ করে ফিরলেন উলভার্ট। যখন বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছে শিশিরের জন্য, তখনই ভারতকে দীপ্তি দিলেন অফস্পিনার। তাঁর নবম ওভারটা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। পর পর উলভার্ট সহ নিলেন আরও একটা উইকেট। চাপের ম্যাচে প্রোটিয়ারা বরাবরই হাল ছেড়ে দেন। ১১ ভারতীয় কন্যা যে প্রতিপক্ষকে মাথা তুলতে দেবেন না, প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন। ঠিক করে নিয়েছিলেন, যাই হোক না কেন ইতিহাসের দরজা খুলবেনই! দীপ্তি নিলেন ৫ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ২৪৬ রানে। ৫২ রানে জয় ভারতের।
দেশের গর্ব আকাশ ছুঁল
শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জয়ের পরই শুভেচ্ছা জানান। ভারতীয় মহিলা টিমের এই জয় দেশের মাথায় মুকুট ওঠার মুহূর্ত বলেই বর্ণনা করেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “হ্যাটস অফ বিশ্বজয়ী টিম ইন্ডিয়া। এটা দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত, আমাদের টিম আইসিসি ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ তুলল, দেশের গর্বকে আকাশ ছুঁল। তোমাদের অসাধারণ দক্ষতা লক্ষ লক্ষ মেয়েদের কাছে অনুপ্রেরণার পথ তৈরি করে দিল। গোটা টিমকে শুভেচ্ছা।” লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাও টিম ইন্ডিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫ জয়ের জন্য টিম ইন্ডিয়াকে অভিনন্দন। তোমরা শুধু ট্রফি জিতে আসো না, সমগ্র জাতির হৃদয় জয় করেছো। সাহস, দক্ষতা ও বিশ্বাসের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখিয়েছো। প্রত্যেক ভারতীয় তোমাদের নিয়ে গর্বিত।”
মহিলা ক্রিকেটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল এক্সে ভারতীয় মহিলা দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, “ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্যকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই ২০২৫ সালের আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের জন্য! ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তারা—এই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করল ভারতীয় মহিলা দল। তারা দীর্ঘদিন ধরেই দুর্দান্ত খেলছে, আর আজ তাদের প্রতিভা ও পারফরম্যান্সের উপযুক্ত ফল তারা পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত মহিলা ক্রিকেটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমি গভীরভাবে শুভেচ্ছা জানাই ভারতকে গর্বিত করার জন্য।” বাস্তবিকই, তিরাশিতে কপিল’স ডেভিলস বিশ্বজয়ী হওয়ার পর যেমন দেশের পুরুষ ক্রিকেটের ‘বিশ্বায়ন’ হয়েছিল। হরমনদের এই জয়, ভারতের মহিলা ক্রিকেটের অবিকল বদল ঘটাবে। ২০১৭-সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে, ঝুলনরা বুঝিয়েছিলেন ভারতের মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারে। বদল এসেছিল সমর্থকদের মনেও। এবার চ্যাম্পিয়ন। এই জয় শুধু ট্রফি নয়, এ এক যুগবদলের সূচনা। যেমন ২৫ জুন, ১৯৮৩ সালে (Kapil Dev) কপিলের দল লর্ডসে (Lord’s) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে দিয়েছিল, তেমনই ২০২৫ সালের এই নভেম্বরের রবিবার মহিলাদের ক্রিকেটের নতুন ভোর।

Leave a Reply