মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “তৃণমূলের শাসনে মহিলারা নিরাপদে (Women Security) নেই।” এমনই অভিযোগ করলেন বিজেপির (BJP) জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া। সোমবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ভাটিয়া। সেখানেই নিশানা করেন তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল উল্লেখ করেছেন এ রাজ্যে মহিলারা নিরাপদ নন। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মহিলা। জাতীয় মহিলা কমিশনও তৃণমূল সরকারকে এ ব্যাপারে নোটিশ পাঠিয়েছে। তার পরেও পদত্যাগ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।”
আরজি করকাণ্ডে ক্ষোভ (BJP)
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে যে জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে, সে ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভাটিয়া। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। তিনিই আবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পরেও ঘটে গেল আরজি করকাণ্ড।” বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ইস্তফা দেওয়া উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বিনাশকারী হয়ে উঠেছেন। অপকর্মের দ্বারা মহিলাদের মর্যাদা নষ্ট করছেন তিনি। একজন চিকিৎসক, যিনি সমাজের সেবা করেছেন, তাঁকেও রেয়াত করা হয়নি।” বিজেপির এই মুখপাত্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আইনের শাসন ধ্বংস করে দিচ্ছেন।” মুখ্যমন্ত্রীকে নৈরাজ্যবাদী আখ্যাও দেন তিনি। বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নৈরাজ্যবাদী। তিনি এই নারকীয় অপরাধের প্রমাণ ধ্বংসকারী। তিনি আমাদের দেশের সংবিধান ধ্বংস করেছেন। তিনি মমতা নন, নি-র্মমতা!”
আরও পড়ুন: আরজি করের প্রতিবাদ, পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যান করে ‘অভয়া’কে স্মরণ
আত্মসম্মান ধ্বংস
মুখ্যমন্ত্রী আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে রক্ষা করছেন বলেও অভিযোগ বিজেপির (BJP) এই জাতীয় মুখপাত্রের। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে রক্ষা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম তদন্ত না করেই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন। অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছিল ছাত্রীর নিরাপত্তার। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হওয়ার পরেও, তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা।” তিনি বলেন, “মমতার (Mamata Banerjee) এই পদক্ষেপ একজন নারীর সম্মান ও আত্মসম্মান ধ্বংস করে দিয়েছে। মমতা যে সাংবিধানিক মূল্যবোধরক্ষার শপথ নিয়েছিলেন, তাও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।” বিজেপির (BJP) জাতীয় মুখপাত্রের আগে মমতা সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেছিলেন, “এই রাজ্য নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। বাংলা তার নারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাজ্য সরকার যে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি, তাও নিশ্চিত করেছে রাজ্য সরকার। আরজি করের ঘটনায়ই এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।”
পুলিশকে নিশানা ভাটিয়ার
কলকাতা পুলিশকেও একহাত নিয়েছেন ভাটিয়া (BJP)। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নির্দেশ মেনে নির্যাতিতার পরিবারকে বিপথে চালিত করছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেও এটা স্পষ্ট। এই একই অভিযোগ করেছেন মৃত ট্রেনি চিকিৎসকের মা-ও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে মৃতের পরিবারকে বলেছিল, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। কিছুক্ষণ পরেই আবার জানানো হয়, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে যখন নির্যাতিতার পরিবার হাসপাতালে পৌঁছালেন, তখন তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন-চার ঘণ্টা। তাঁদের মেয়ের বডিও দেখতে দেওয়া হয়নি।”
“কালপ্রিটের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা”
বিজেপির (BJP) জাতীয় মুখপাত্রের প্রশ্ন, “এই তিন-চার ঘণ্টায় কোন কোন প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে?” তিনি বলেন, “নির্যাতিতা নন, কালপ্রিটের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।” মুখ্যমন্ত্রীকে কেন প্রমাণ লোপাটকারী বলা হচ্ছে তাঁর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যকেই জানেন, অপরাধ ঘটার প্রথম ৪৮ ঘণ্টাই হচ্ছে তদন্তকারীদের জন্য গোল্ডেন পিরিয়ড। এই সময়ের মধ্যেই পুলিশ সমস্ত এভিডেন্স সংগ্রহ করে। ধর্ষণ কিংবা খুনের ঘটনার ক্ষেত্রে এই প্রমাণের মধ্যে থাকে ছেঁড়া চুল-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ। এই সময়টা পেরিয়ে গেলে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী যিনি নিজে পুলিশ মন্ত্রীও, তিনি কিনা কেসটাকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
লজ্জাহীনতার চূড়ান্ত নিদর্শন!
আরজি করকাণ্ডে দোষীর শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মিছিলে অংশ নিয়েছেন মমতা। বিজেপির (BJP) জাতীয় মুখপাত্র বলেন, “ওঁর মিছিলে হাঁটাটা লজ্জাহীনতার চূড়ান্ত নিদর্শন। উনি মিছিলে হাঁটছেন দেখে গোটা দেশ হতভম্ব হয়ে গিয়েছে।” ভাটিয়ার প্রশ্ন, “কার বিরুদ্ধে মিছিল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বাংলায় আইন-শৃঙ্খলা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রশাসনে কমপ্লিট ডিসঅর্ডার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায় তাঁর। তার পরেও তিনি নির্যাতিতার পরিবারকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্রিমিনালদের ধরার বদলে উল্টে নির্লজ্জের মতো তিনি আবার মিছিল করছেন।” ভাটিয়া বলেন, “এই মিছিলই প্রমাণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যর্থতা। তাই তাঁর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদত্যাগ করা। কারণ তাঁর কাজই প্রমাণ করে দিচ্ছে, তিনি নিষ্ক্রিয়।”
প্রসঙ্গত, ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে হত্যা করা হয় বছর একত্রিশের এক ট্রেনি মহিলা চিকিৎসককে (Women Security)। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ (BJP)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours