মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এবার পাক জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাল প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস (Hamas)! বুধবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (POK) পালিত হয়েছে ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’। সেখানে আয়োজন করা হয়েছিল ভারত-বিরোধী এক জঙ্গি সম্মেলনেরও। অভিযোগ, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন যোগ দিয়েছিল ওই সম্মেলনে। জানা গিয়েছে, সম্মেলনে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তইবার নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন হামাসের প্রবীণ নেতারাও।
কাশ্মীর সংহতি দিবস (Hamas)
এদিন রাওয়ালকোটের শহিদ সাবির স্টেডিয়ামে কাশ্মীর সংহতি ও হামাস অপারেশন আল আকসা বন্যা শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জইশের প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই তালহা সইফ, জইশের কমান্ডার আসগর খান কাশ্মীরি ও মাসুদ ইলিয়াস। লস্করের শীর্ষ স্থানীয় নেতারাও ছিলেন। এই সম্মেলনেই যোগ দিয়েছিলেন ইরানে হামাসের প্রতিনিধি খালিদ আল কাদুমি।
জইশ এবং লস্কর
বৈঠকে খালিদ ছাড়াও হামাসের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন প্যালেস্তাইনি নেতাও উপস্থিত ছিলেন। এই জঙ্গি নেতারা আলাদা করে বৈঠক করেন জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের প্রধান মওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গেও। ভারতের (Hamas) মাটিতে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ এবং লস্করের সদস্যরা। ভারত-বিরোধী এই সব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হামাস নেতাদের বৈঠকে ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এই হামাসই অতীতে একাধিকবার কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল। সেই সময় জল্পনা ছড়িয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে হামাসের যোগসূত্র থাকতে পারে। কাশ্মীর সংহতি দিবসের এই অনুষ্ঠানই ফের উস্কে দিল সেই জল্পনাই।
কাশ্মীর সংহতি দিবস পালনের সূচনা
১৯৯১ সালে কাশ্মীর সংহতি দিবস পালনের সূচনা করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সেই থেকে ফি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি দিনটি পালন করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। পাকিস্তানের (POK) সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ছুটি থাকে এদিন। সাম্প্রতিক অতীতে দিনটিকে ভারত বিরোধী প্রচারের কাজে ব্যবহার করছেন পাকিস্তানের রাজনীতির কারবারিরা। প্রতিবারই আপত্তি জানিয়ে আসছে ভারত। ভারতের সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করে এবারও কাশ্মীর সংহতি দিবস পালন করেছে পাকিস্তানের সরকার। ভারতের হাতে নিপীড়িত কাশ্মীরবাসীর পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (Hamas)।
‘আল আকসা ফ্লাড’-এর ব্যানারে সম্মেলন
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এবার যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, তা করা হয়েছিল ‘আল আকসা ফ্লাড’-এর ব্যানারে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর এই নামেই ইজরায়েলে অপারেশন চালিয়েছিল হামাস। প্যালেস্তাইনের এই জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭০০ জন নিরীহ মানুষ। আল আকসা হল জেরুজালেমের এক মসজিদ। এই মসজিদের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করেছে একই সঙ্গে মুসলিম ও ইহুদি দু’পক্ষই। হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের যে লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল তার অন্যতম নেপথ্য কারণ এটিও। ইজরায়েল ইহুদি রাষ্ট্র। আর হামাস মুসলিম। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আল আকসা ফ্লাডের ব্যানারে সম্মেলন হওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। কারণ এই নামকে হাতিয়ার করেই মুসলিম ভাবাবেগকে উস্কে দিতে চাইছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সেটাকে কাজে লাগিয়েই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঘাঁটি গাড়ছে বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলি (Hamas)।
পাক চেষ্টা ব্যর্থ
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই চাইছে জম্মু-কাশ্মীরের ইস্যুকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে। যদিও সেই মঞ্চে মিথ্যাচার চালিয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি ইসলামাবাদ। এবার হামাস কমান্ডারকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ে এসে পাক (POK) প্রশাসন বিশ্বের দরবারে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছে, প্যালেস্তাইন এবং কাশ্মীরের সমস্যা একই। মধ্য প্রাচ্যে গাজার মতোই কাশ্মীরে চলছে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার। কাশ্মীর ইস্যুতে বিশ্বের মুসলমান দেশগুলিকে পাশে পেতে বহু কাঠখড় পুড়িয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তবে বেশিরভাগ মুসলিম দেশই রয়েছে ভারতের সঙ্গে। সৌদি আরব, ইউএই, কাতার এবং কুয়েত তো রাষ্ট্রসংঘে কাশ্মীর ইস্যুতে বরাবর ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক ও মালয়েশিয়া।
তিনটি জঙ্গি সংগঠনের মাথারা
বুধবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরে যে সম্মেলন হয়েছে, সেখানে জড়ো হয়েছিলেন তিনটি জঙ্গি সংগঠনের মাথারা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এই তিন জঙ্গি সংগঠনকে একত্রিত করে জম্মু-কাশ্মীরে বড়সড় নাশকতার ছক কষছে পাক সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। মোদি জমানায় শান্ত হয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। সেই কাশ্মীরেই জেহাদের স্বপ্ন ফেরি করে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি ফের রক্তাক্ত করে তুলতে চাইছে কাশ্মীরকে। সেই কারণেই সীমান্তের ওপারের জঙ্গি ঘাঁটিগুলির ওপর কড়া নজর রাখছে ভারত। সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
ঘটনাচক্রে, এদিন যখন সম্মেলন চলছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরে, ঠিক তখনই মুজফফরাবাদে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভাষণ শেষে তিনি স্লোগান দেন, ‘কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান’। আরও একধাপ এগিয়ে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির আহমেদ দাবি করেন, একদিন গোটা কাশ্মীর হবে পাকিস্তানের অংশ (POK)। পাক সেনা কাশ্মীরের স্বাধীনতা লড়াইয়ের সঙ্গেই আছে বলেও জানান তিনি (Hamas)।
Leave a Reply