ICC Women World Cup 2025: “দিন-রাত খেটেছি, একটা দল হয়ে খেলেছি”, বিশ্বকাপটা জিততেই হতো! আর কী বললেন হরমনপ্রীত

icc women's world cup 2025 smriti mandhana broke down in tears, harmanpret feels proud after india women's team became the champion

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে শাপমুক্তি! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে তাঁর হাতে উঠল বিশ্বকাপ ট্রফি (ICC Women World Cup 2025)। কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মার পর চতুর্থ ভারতীয় ও প্রথম মহিলা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বখেতাব জয়ের নজির গড়লেন হরমনপ্রীত কৌর। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন শেফালি বর্মা, দীপ্তি শর্মা, রিচা, স্মৃতি, জেমাইমারা। মাঠেই শুরু হয়ে গেল উৎসব। চোখের জল যেন বাঁধ মানছিল না কারও। এ তো শেষ নয়, এ সবে শুরু। এবার এটা অভ্যেসে পরিণত হবে। বললেন বিশ্বজয়ী হরমনপ্রীত।

বেড়াটা ভাঙতেই হত

ভারতের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে মহিলাদের বিশ্বকাপ জিতেছেন হরমনপ্রীত কৌর। এর আগে দু’বার ফাইনালে গিয়ে হারতে হয়েছিল। এ বার সেই বেড়া ভেঙেছেন হরমনপ্রীতেরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে “বেড়াটা ভাঙতে চেয়েছিলাম। এই জয় দরকার ছিল। সবে শুরু। এ বার জেতা অভ্যাসে পরিণত করতে চাই। এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিলাম। আমরা আরও উন্নতি করতে চাই। এটাই শেষ নয়। এ তো সবে শুরু।” ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারেননি হরমনপ্রীত। প্রতিযোগিতার মাঝে পর পর তিনটি ম্যাচ হেরেছিল ভারত। তার পরেও নিজেদের উপর বিশ্বাস ছিল তাঁদের। হরমনপ্রীত বলেন, “আমরা পর পর তিনটে ম্যাচে হেরেছিলাম। কিন্তু তার পরেও নিজেদের উপর বিশ্বাস ছিল। জানতাম, ঠিক কিছু একটা ভাল হবে। দলের সকলে আত্মবিশ্বাসী ছিল। দিন-রাত খেটেছি। একটা দল হয়ে খেলেছি।”

শেফালিই এদিন সেরার সেরা

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস চলাকালীন ফাটকা খেলেন হরমনপ্রীত। শেফালি বর্মার হাতে বল তুলে দেন তিনি। সেই ফাটকা কাজে লাগে। শেফালি জোড়া উইকেট তুলে দলকে খেলায় ফেরান। অধিনায়ক বলেন, “লরা ও সুনে ভাল খেলছিল। হঠাৎ শেফালির দিকে আমার নজর গেল। দেখলাম, ও দাঁড়িয়ে আছে। মনে হল, একটা ফাটকা খেলি। ওকে খালি একটা ওভার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাবিনি ও খেলাটাই বদলে দেবে। এত ভাল বল করছিল যে ওকে আরও কয়েকটা ওভার দিই। যে ভাবে ও বল করেছে, তার পুরো কৃতিত্ব শেফালির।” বিশ্বকাপের চৌহদ্দির ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেও ছিলেন না শেফালি বর্মা। ভারতের বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা খেলছিলেন। ফর্মে থাকা প্রতিকা রাওয়াল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আগে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন শেফালি। ফাইনালে সেই শেফালিই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করলেন। ব্যাটে-বলে দাপট দেখালেন তিনি। প্রত্যাবর্তনের কাহিনি লিখলেন ভারতের এই ক্রিকেটার।

শচিন স্যারকে দেখে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়

শেফালি বললেন, “এই ম্যাচে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। রান করতে হবে। দলের সকলে আমাকে বলেছিল, স্বাভাবিক খেলা থেকে না বেরাতে। আমি নিজের স্বাভাবিক খেলাই খেলেছি। বড় শট মেরেছি। শতরান করতে পারতাম। কিন্তু আমার কাছে দলের রান বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলের জয়ে আমার যোগদান রয়েছে। এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।” শেফালি ভক্ত শচিন তেন্ডুলকরের। এই ম্যাচ শচিন গ্যালারিতে বসে তাঁর ব্যাটিং দেখেছেন। এর থেকে অনুপ্রেরণার আর কিছু হতে পারে না শেফালির কাছে। তিনি বললেন, “শচিন স্যারকে দেখে আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছিল। ওঁর সঙ্গে আমার কথা হয়। উনি সবসময় আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগান। উনি কিংবদন্তি। ওঁর কাছে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। চেষ্টা করি শেখার। খুব ভাল লাগছে যে উনি আমার খেলা দেখলেন।”

নজির গড়লেন হরমনপ্রীত

ফাইনাল জেতার জন্য গোটা দলের প্রশংসা শোনা গিয়েছে হরমনপ্রীতের গলায়। পাশাপাশি কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত দু’বছরে অমল মুজুমদার যে পরিশ্রম করেছেন তারও প্রশংসা শোনা গিয়েছেন অধিনায়কের গলায়। তাঁদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন হরমনপ্রীত। পরিসংখ্যান বলছে, মহিলাদের ক্রিকেট সবচেয়ে বয়স্ক ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার নজির গড়লেন হরমনপ্রীত। এছাড়াও আইসিসি টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে সর্বাধিক রান করা ক্রিকেটার হিসেবে টেক্কা দিলেন অস্ট্রেলিয়ার বেলিন্ডা ক্লার্ককে। তিনিই এতদিন শীর্ষে ছিলেন। আইসিসি নকআউট ম্যাচে হরমনপ্রীতের মোট রান এখন ৩৩১, গড় ১১০.৩৩। রয়েছে একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফ-সেঞ্চুরি। এই তালিকায় এতদিন শীর্ষে ছিলেন বেলিন্ডা ক্লার্ক, যাঁর রান ছিল ৩৩০। চারটি হাফ-সেঞ্চুরি ছিল তাঁর ঝুলিতে, সর্বোচ্চ স্কোর ৯১।

৪৫ দিন ঘুমোইনি বিশ্বকাপের জন্য

তৃতীয় বারের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ভারতের মেয়েরা। ঘরের মাঠে লিখে ফেলেছেন ইতিহাস। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে আবেগ প্রবণ স্মৃতি মান্ধানা বললেন, ‘এটা আমার জন্য আবেগপ্রবণ এক স্মৃতি। আমি জানি না, কী করতে হবে। এখনও ঘোরের মধ্যে আছি। আমি মাঠে আবেগপ্রবণ হই না। কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ, ভাবতে পারছি না। আমাদের ঘাড়ে অনেক বড় দায়িত্ব ছিল বিশ্বকাপ জেতার। আমি জানি না শেষ ৪০ দিন কী ভাবে কাটিয়েছি। ৪৫ দিন ঘুমোইনি বিশ্বকাপের জন্য। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল কোয়ালিফাই করতে পারেনি নকআউটে। গ্রুপ পর্বেই ছিটকে গিয়েছিলাম। আমাদের সবার কাছে কঠিন লড়াই ছিল। আমাদের ফোকাস ছিল ফিটনেস নিয়ে কাজ করা। আমাদের শক্তি হচ্ছে কেউ ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলে না। সবাই এগিয়ে যেতে চায়। আমরা সবাই একে অন্যের সাফল্য উপভোগ করি।’ কোচ অমোল মজ়ুমদারও আনন্দে আত্মহারা। কোচ হিসেবে তাঁর লড়াইও এ দিন স্বার্থক হলো। আবেগে ভাসলেন কোচ অমল মজুমদার বলেন, ‘কোনও সন্দেহ নেই, দারুণ জয়। এই জয় দলের মেয়েদের প্রাপ্য ছিল। ওদের পরিশ্রম সামনে থেকে দেখেছি। আমি হারকে হার হিসেবে দেখিনি। দেখেছি কোথায় খামতি ছিল। যেই ম্যাচে দাপট দেখিয়েছি সেগুলিকে কাজে লাগিয়েছি। আমরা কিছু ভুল করলে, তার থেকে শিক্ষা নিয়েছি। যার ফল এই বিশ্বকাপ জয়। শেফালি বর্মা, ম্যাজিকাল। সেমি ফাইনালে এসে কোনও চাপ ছাড়া খেলেছে। বল হাতে উইকেট তুলল। শেষ দুই বছরে আমরা ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। আমি এর থেকে বেশি কিছু চাইতে পারি না।’

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share