India: ভারত সফলভাবে চরম দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছে, বলছে নয়া গবেষণা

India eliminates extreme poverty study reveals

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত (India) সফলভাবে চরম দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছে। গত দশকে দারিদ্র্যের স্তরে সবচেয়ে তীব্র পতনও প্রত্যক্ষ করেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায়ই উঠে এসেছে এই তথ্য। ভারতের অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির ওপর “ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির চারটি সত্য” শীর্ষক একটি গবেষণায় অর্থনীতিবিদ সুরজিত এস ভল্লা এবং করণ ভাসিন ভারতের দারিদ্র্য প্রবণতার একটি যুগান্তকারী বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন। গবেষণা করা হয়েছে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালের জন্য গৃহস্থালী ভোগব্যয় সমীক্ষার ভিত্তিতে। সেখানেই জানা গিয়েছে, ভারত সফলভাবে দূর করতে পেরেছে চরম দারিদ্র্য (Poverty)।

চরম দারিদ্র্য নির্মূল (India)

সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার ১ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। ২০১১-১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১২.২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। ২০২৩-২৪ সালে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ১.৯ ডলার পিপিপি এবং ২.১৫ ডলার পিপিপি দারিদ্র্যসীমা এই ড্রামাটিক হ্রাসের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এটি ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বৈষম্য হ্রাস

এই গবেষণায়ই দেখা গিয়েছে, গত বারো বছরে ভারতে বৈষম্য কমেছে। আয়ের বৈষম্য মাপার সূচক গিনি সহগ ২০১১-১২ সালে ছিল ৩৭.৫। ২০২৩-২৪ সালে এটাই কমে ২৯.১-এ পৌঁছেছে। উচ্চ-উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ভারতের (India) এই বৈষম্য হ্রাস একটি বিরল ঘটনা। বিশ্বের মাত্র কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারত এখন এমন একটি দেশ যেখানে বৈষম্য বাড়ছে না, বরং কমছে। ভুটান এবং ডোমিনিকান রিপাবলিক এই ক্ষেত্রে বড় ধরনের হ্রাস দেখিয়েছে। তবে এই দুই দেশেই জনসংখ্যা অনেক কম। সাধারণত, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়, যেখানে ধনীরা আরও ধনী হন এবং দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যান। তবে ভারত এ ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে, যেখানে অর্থনৈতিক ফারাক বাড়ছে না, কমছে।

গরিবদের মধ্যে বাড়তি ভোগব্যয়

ভারতের জনসংখ্যার নীচের তিনটি (Poverty) দশমাংশে ভোগব্যয় বৃদ্ধির এক অভূতপূর্ব প্রবণতা দেখা গিয়েছে। গবেষণাটি দেখায়, খাদ্য, গৃহস্থালী পণ্য এবং আসবাবপত্রের মতো টেকসই সামগ্রীর ক্ষেত্রে মাসিক মাথাপিছু ভোগব্যয়ের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যে ব্যয় বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ। আর যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের মতো ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ২৪.২ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে, জনসংখ্যার নীচের ৩০ শতাংশের মাসিক মাথাপিছু ভোগব্যয় ১১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতা নির্দেশ করে যে সরকারি কল্যাণমূলক কর্মসূচি, আয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতের দরিদ্রতম পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

একটি নতুন দারিদ্র্যসীমার প্রয়োজন

গবেষকদের দাবি, ভারত প্রায় সম্পূর্ণভাবে চরম দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হয়েছে, যা খুব কম উন্নয়নশীল দেশ করতে পেরেছে। গবেষকদের যুক্তি, ভারতের বর্তমান দারিদ্র্যসীমা পুরনো এবং এটি বঞ্চনার বৃহত্তর মাত্রাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা ইউরোপীয় মান অনুসারে একটি আপেক্ষিক (India) দারিদ্র্যসীমা গ্রহণের প্রস্তাব দেন। এখানে মধ্যম আয়ের ৬০ শতাংশকে দারিদ্র্যের সীমা ধরা হয়।

ডেটার ভ্যালিডিটি

নয়া এইচসিইএস ২০২২-২৩ সমীক্ষায় যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা এইচসিইএস ২০১১-১২-র সমীক্ষার সঙ্গে তুলনীয় নাও হতে পারে – এমন একটা উদ্বেগ গবেষকদের ছিল। তাই ডেটার ভ্যালিডিটির বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাঁরা জাতীয় অর্থনৈতিক নথির সঙ্গে সমীক্ষার তথ্যের তুলনা করেছেন সার্ভে টু ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস অনুপাত ব্যবহার করে। তাই ফল সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল — ২০১১-১২ সালে ৫২.৪ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে ৪৬.৯ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ সালে ৪৭.৯ শতাংশ। এটি প্রমাণ করে যে দারিদ্র্যের হ্রাস সমীক্ষার পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে নয়, বরং এটি মানুষের জীবনযাত্রার প্রকৃত উন্নতির প্রতিফলন (Poverty)।

“আপেক্ষিক দারিদ্র্যসীমা”

গবেষকরা “আপেক্ষিক দারিদ্র্যসীমা” ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ইউরোপের অনুরূপ। এখানে দারিদ্র্য সংজ্ঞায়িত হয় মধ্যম আয়ের ৬০ শতাংশ হিসাবে। এই পদ্ধতি ভারতে প্রয়োগ করা হলে জনসংখ্যার ১৬.৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হতেন। অন্য একটি পদ্ধতিতে, গড় আয়ের ৫০ শতাংশ ব্যবহার করলে, ২৪.৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র বলে বিবেচিত হতেন। এটি ভারতের অর্থনীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন, আরও প্রাসঙ্গিক দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

দারিদ্র্য বিতর্কে পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণাটি দারিদ্র্যের স্তর নিয়ে বিতর্ক থেকে সরে এসে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখা নীতিগুলোর বোঝাপড়ার দিকে মনোযোগ দেয়। গবেষণার ফলগুলি ভল্লা প্রভৃতি (২০২২) এবং রয় ও ভ্যান ডার ওয়াইড (২০২৫)-এর পূর্ববর্তী গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা গত দশকে ভারতের দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করে।

এছাড়াও, চরম দারিদ্র্যের নির্মূলের পরে, এখন মনোযোগ দিতে হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংহতকরণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (Poverty) জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে। গবেষণাটি দেখায় যে ভারতের লক্ষ্যভিত্তিক কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক কৌশলগুলি (India) এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share