মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং আধুনিক ব্যস্ততাময় জীবনযাত্রার কারণে বদহজমের (Indigestion) সমস্যায় ভুগছেন সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁদের হাতে কোনও স্থায়ী সমাধানও নেই। দোকানে ওষুধ কিনতে পাওয়া যায় অ্যান্টাসিড জাতীয়। অনেকেই ব্যবহার করেন। তবে এতে সাময়িক উপশম পাওয়া যায়। চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য অনেকেই বর্তমানে ঝুঁকছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে। বলা ভালো প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে। দেখা যাচ্ছে বর্তমানকালে দীর্ঘস্থায়ী বদহজম সমস্যার সমাধানে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা (Ayurvedic Healing) পদ্ধতি বেশ ভালোই ফল দিচ্ছে।
বদহজম (Indigestion) নিয়ে কী লেখা রয়েছে আয়ুর্বেদিক গ্রন্থগুলিতে
প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক গ্রন্থগুলি অনুসারে, বদহজম মূলত হজমের আগুন বা অগ্নির ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার খাওয়া, উদ্বেগ এবং ক্রোধের মতো মানসিক ব্যধির কারণে হজম অগ্নি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখনই এটি অমা (বিষাক্ত পদার্থ) তৈরি করে। এর ফলে পেট ফেঁপে যায়, ভারী হয়, ঢেকুর ওঠে, অ্যাসিডিটি এবং ক্ষুধা হ্রাস পায়। রাসায়নিক-ভিত্তিক ওষুধের উপর নির্ভরতা এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মানুষ যতই সতর্ক হচ্ছে, বদহজমের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রকৃতি এবং ভারসাম্যের উপর ভিত্তি করে একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সরকার…
কোন কোন আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে মিলবে সুরাহা, এবার সেগুলি নিয়েই আমরা আলোচনা করব (Indigestion)
ত্রিফলা চূর্ণ: ত্রিফলা চূর্ণ বদহজমের সমস্যায় বেশ কার্যকরী এবং উপযোগী বলেই জানা যায়। ত্রিফলা চূর্ণ আসলে তৈরি হয় আমলকি হরিতকি এবং বিভিতকি দিয়ে। আয়ুর্বেদিক এই মিশ্রণ বদহজমে দুর্দান্ত কাজ দেয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে হজম শক্তিকে উন্নত করতে ও পেটের রোগের সমাধানেও এর জুড়ি মেলা ভার।
জোয়ান এবং মৌরি: খাবারের পরে (Indigestion) ভাজা জোয়ান এবং মৌরির মিশ্রণ চিবিয়ে খেলে তা হজমে সাহায্য করে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মিশ্রণের নিয়মিত ব্যবহারে পেট ফাঁপা কম হয় এবং অ্যাসিডিটির সমস্য়া (Ayurvedic Healing) থেকেও মুক্তি মেলে।
জিরে-তুলসী চা: জিরার বীজ এবং তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি চা, বদহজমে ভালো সুফল দেয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই চা পেট খারাপের মতো রোগ দূর করে এবং হজম শক্তি উন্নত করে।
টকরা: আয়ুর্বেদের এই উপাদানকে অন্ত্রের জন্য অমৃত বলা হয়। হজম শক্তি বাড়ানোর এই উপাদান ভাজা জিরে, কালো লবণ এবং পুদিনা দিয়ে তৈরি করা হয়। একে মশলা বাটারমিল্কও বলা হয়ে থাকে। খাবারের পরে এটি পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভ্যঙ্গ (তেল মালিশ): উষ্ণ তিলের তেল দিয়ে শরীর প্রতিদিন মালিশ করলে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয় বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। এরফলে উদ্বেগজনিত বদহজম হ্রাস পায়।
পঞ্চকর্ম ডিটক্স পদ্ধতি: দীর্ঘস্থায়ী হজমজনিত সমস্যার জন্য, আয়ুর্বেদিক কেন্দ্রগুলি পঞ্চকর্মের পরামর্শ দেয়। পঞ্চকর্ম হলো আয়ুর্বেদের একটি পুরনো ডিটক্সিফিকেশন বা শরীর পরিষ্কারের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পাঁচটি পদ্ধতির মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করা হয়। এগুলি হল-
১. বামন: চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বমির মাধ্যমে শরীর পরিষ্কার করা।
২. বিরেচন: চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে শোধন বা purgation এর মাধ্যমে অন্ত্র পরিষ্কার করা।
৩. বাস্তি: ভেষজ তেল বা অন্য কোনও তরল পদার্থ দিয়ে কোলন বা বৃহদান্ত্র পরিষ্কার করা।
৪. নিষ্ঠা: নাকের মাধ্যমে স্নায়ু এবং সংবেদী অঙ্গ পরিষ্কার করা।
৫. রক্তমোক্ষণ: শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করে দেওয়া।
বদহজম থেকে বাঁচতে এগুলি করতে হবে
● পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে জল (প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস)
● প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক অনুশীলন করলে বদ হজম বা পেট ফাঁপা কমবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
● একেবারে পেট পুরে না খাওয়া। অল্প অল্প করে বেশি বারে খেতে হবে।
● খাওয়ার সময় মুখ বন্ধ করে খাবারগুলি ভালো করে চিবিয়ে গিলতে হবে।
● কফি বা চা পান না করলে ভালো হয়।
● মদ বা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতেই হবে।
● রাতের খাবার হালকা হতে হবে।
● রাতের খাবার বেশি রাতে খাওয়া যাবে না। সন্ধ্যার কিছু পরেই সেরে ফেলতে হবে।
● ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া যাবে না।
● অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
● কোনও খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা এড়িয়ে চলতে হবে।
Leave a Reply