মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শীঘ্রই অতীত হতে চলেছে এদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস-এর ব্যবহার? নির্ভুল দেশীয় নেভিগেশন সিস্টেম (NavIC Navigation System) কি হাতের মুঠোয় করে ফেলল নরেন্দ্র মোদির ভারত? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ বুধবার এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। শততম উৎক্ষেপণে (ISRO 100th Mission) সফলভাবে মহাকাশে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রতিস্থাপন করল এনভিএস-০২ উপগ্রহকে। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ভোর ৬টা ২৩ মিনিটে স্যাটেলাইটকে নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেয় জিওসিনক্রোনাস লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি-এফ১৫) রকেট। কিছুক্ষণ পরই, নির্দিষ্ট কক্ষপথে উপগ্রহটিকে প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়।
মহাকাশ প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভর ভারত (ISRO 100th Mission)
জিএসএলভি-এফ১৫ হল ভারতের নিজস্ব জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকলের ১৭তম উৎক্ষেপণ এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্রায়োজেনিক স্টেজ (ইঞ্জিন) ব্যবহৃত একাদশতম অভিযান। এদিনের সফল অভিযানের (ISRO 100th Mission) মাধ্যমে অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরতার জায়গা ফের একবার মজবুত করল ভারত। সক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে এবারের উৎক্ষেপণে ৩.৪ ব্যাসের ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল রকেটের পেলোড ফেয়ারিং (রকেটের মাথায় রাখা স্যাটেলাইটের রক্ষাত্মক বর্ম)।
ইসরো জানিয়েছে, এনভিএস-০২ উপগ্রহ ভারতের নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় (NavIC Navigation System) সহায়তা প্রদান করবে। এতে রয়েছে দেশে তৈরি এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা অ্যাটমিক ঘড়ির কম্বিনেশন, যার মাধ্যমে নির্ভুল সময় (গন্তব্যে পৌঁছনোর) উপলব্ধ হবে। এনভিএস-০২ উপগ্রহটি হল ভারতে তৈরি দ্বিতীয় প্রজন্মের নেভিগেশন সিরিজের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট। ২০২৩ সালের মে মাসে এই সিরিজের প্রথম উপগ্রহ এনভিএস-০১ উৎক্ষেপিত হয়েছিল।
এনভিএস-০২ স্যাটেলাইট আদতে ঠিক কী?
দীর্ঘদিন ধরেই ভারত মার্কিন নেভিগেশন সিস্টেম জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)-এর মতো নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম তৈরি (NavIC Navigation System) করার কাজ করছে। ভারতের এই স্বাধীন আঞ্চলিক সিস্টেমের নাম— ইন্ডিয়ান নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টিলেশন (সংক্ষেপে ‘নাবিক’)। ইসরো নির্মিত এই প্রকল্পের প্রথম উপগ্রহ ছিল এনভিএস-০১। এদিন এই সিরিজের দ্বিতীয় উপগ্রহ উৎক্ষেপণ (ISRO 100th Mission) হল। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ‘নাবিক’ সিস্টেমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বুধবার যে উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, তার সক্ষমতা, নির্ভুলতা, পারফরম্যান্সের ধার ও ভার পূর্বসুরীর তুলনায় ঢের বেশি।
জিপিএস-এর শক্তিশালী বিকল্প হয়ে উঠছে ‘নাবিক’
নিজস্ব উপগ্রহ-ভিত্তিক নেভিগেশন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ভারত যে কতটা বদ্ধপরিকর তার প্রমাণ এদিনের এনভিএস-০২ অভিযান। আরও বেশি নিখুঁত, আরও বেশি নির্ভরযোগ্যতা এবং ক্ষমতাবৃদ্ধি— এই তিনের মিশেল রয়েছে নতুন স্যাটেলাইটে। এর ফলে, কৃষি থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা এবং জাতীয় নিরাপত্তা— সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ‘নাবিক’ (NavIC Navigation System)। এদিনের সফল উৎক্ষেপণের (ISRO 100th Mission) ফলে একদিকে ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা আরও প্রতিষ্ঠিত হল। একইভাবে, মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিশ্বের দরবারে ভারতের ক্ষমতাও এক কদম এগলো।
Leave a Reply