মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন! আর সেই উৎসবের তালিকায় অন্যতম হলো জামাই ষষ্ঠী (Jamai Sasthi)। বাঙালির আর পাঁচটা উৎসবের মতোই এই উৎসবেও থাকে দেদার খানাপিনা! ভুরিভোজ বাদ দিয়ে বাঙালির কোনো উৎসবের উদযাপন সম্পূর্ণ হয় না। তবে সুস্থ শরীরের জন্য খাবারে বিশেষ রাশ জরুরি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, খাবারের সময়ে পরিমাণে বিশেষ নজরদারি জরুরি। তবেই সুস্থ ভাবে উৎসব উপভোগ সম্ভব।
জামাই ষষ্ঠীর ভুরিভোজে কোন দিকে নজরদারির পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা?
পরিমাণে বাড়তি রাশ!
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণ খাবার খেয়ে নেওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক বেশি পরিমাণ খাবার একসঙ্গে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই বারবার অল্প পরিমাণ খাবার খাওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের একাংশের পরামর্শ, যত সুস্বাদু খাবার থাকুক না কেন, একসঙ্গে না খেয়ে, সারাদিনে ভাগ করে খেলেই সমস্যা অনেকটা এড়ানো যাবে।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারে নিয়ন্ত্রণ!
বাঙালির ভুরিভোজে লুচি, পোলাও, ভাত আর আলুর দম, এগুলো বাদ দেওয়া খুব মুশকিল (Jamai Sasthi)। বেশিরভাগ বাঙালির পছন্দের এই খাবার কিন্তু বিপদ ডাকতে পারে। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থুলতা এই তিন সমস্যা এখন প্রায় দেখা যায়। তাই খাদ্যাভাস নিয়ে মানুষের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস, ডায়েবেটিস এবং স্থুলতার মতো সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই লুচি, ভাত কিংবা পোলাওয়ের মতো খাবার একসঙ্গে একেবারেই খাওয়া চলবে না বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, উৎসবের দিনে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় যেকোনও একটি পদ অত্যন্ত কম পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
প্রাণীজ প্রোটিনের দিকে নজরদারি জরুরি!
হরেক পদের মাছ কিংবা মাংস ছাড়া বাঙালির খাওয়া-দাওয়া অসম্পূর্ণ! তবে এক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি জরুরি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকেই জামাইষষ্ঠীর মেনুতে ইলিশ (Jamai Sasthi), চিংড়ির মতো মাছের পাশপাশি মটন কারির মতো পদ রাখেন। আর এর জেরেই বড় সমস্যা হতে পারে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ইলিশ মাছ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আবার মটনে বাড়তে পারে কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট (Jamai Sasthi Special)। একসঙ্গে এত রকমের প্রাণীজ প্রোটিন খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। রক্তচাপ বাড়তে পারে, বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাই তাঁদের পরামর্শ, প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। পরিমিত পরিমাণে যেকোনও এক রকমের প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। তবে কখনোই যথেচ্ছ নয়।
মিষ্টির ক্ষেত্রে নজরদারি প্রয়োজন! (Jamai Sasthi)
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, মিষ্টি খাওয়ার ক্ষেত্রে নজরদারি প্রয়োজন। ডায়বেটিস এবং স্থুলতার মতো রোগ রুখতে নিয়মিত মিষ্টি জাতীয় খাবারে রাশ জরুরি। বাঙালির ভুরিভোজে মিষ্টি থাকেই। শেষ পাতে মিষ্টি দই থেকে রসগোল্লা, সন্দেশের নানান পদ। কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, ডায়বেটিস আক্রান্ত হলে মিষ্টি একেবারেই খাওয়া চলবে না। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে, মারাত্মক বিপদ হতে পারে। তবে ডায়বেটিস না থাকলেও মিষ্টি খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশ জুড়ে বাড়ছে ডায়বেটিস। তাই কমবেশি সকলের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই মিষ্টি খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সমস্যা জটিল হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
স্বাস্থ্যকর কোন পদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল?
পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যকর খাবারেও উৎসব উদযাপন সম্ভব। তাঁরা জানাচ্ছেন, জামাই ষষ্ঠীতে (Jamai Sasthi) নানান রকমের পদ তৈরি করে সাজিয়ে খাবার দেওয়ার রেওয়াজ জারি থাকুক। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার। তাঁদের পরামর্শ, নানান রকমের মিষ্টিতে প্লেট সাজানোর পরিবর্তে, নানান রকমের ফল দেওয়া যেতে পারে। আপেল, আম, বেদানা, জামের মতো নানান রঙের ফল একসঙ্গে সাজিয়ে দিলে, দেখতেও ভালো লাগবে আবার সবগুলোই স্বাস্থ্যকর। ফলে সমস্যা হবে না।
দুপুরের ভুরিভোজে ময়দার তৈরি লুচির পরিবর্তে বাজরা কিংবা মিলেটের মতো দানাশস্য দিয়ে তৈরি রুটি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাগি, মিলেট কিংবা বাজরার তৈরি রুটির ভিতরে বিভিন্ন সব্জির পুর ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে নানান স্বাদ এবং রঙের খাবার হবে। এগুলো স্বাস্থ্যকর। শরীরে বাড়তি কার্বোহাইড্রেট যাওয়ার ঝুঁকি কমবে। বরং এই সব দানাশস্য দিয়ে তৈরি রুটি বা পরোটা শরীরের জন্য উপকারি। পেশি মজবুত করতে, হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। আবার রকমারি পদ ও হবে।
মটন কিংবা চিকেনের অতিরিক্ত মশলা দেওয়া পদের পরিবর্তে গ্রিলড কিংবা বেকড করা পদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এতে তেল ও মশলা কম লাগবে। আবার প্রাণীজ প্রোটিনের গুণ শরীরে পৌঁছবে। হজমের গোলমালের ঝুঁকিও কমবে।
Leave a Reply