মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ব্রিটেন সফরে রয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর সফরে খালিস্তানপন্থী (Khalistani) উগ্রপন্থীরা তাঁকে হেনস্থা করার চেষ্টা করে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভারতজুড়ে। উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। বিদেশমন্ত্রীর গাড়িকে লক্ষ্য করে ছুটতে দেখা যায় খালিস্তানপন্থী এক উগ্রপন্থীকে। সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকাও ছিঁড়ে ফেলা হয়। ব্রিটিশ (United Kingdom) পুলিশের সামনেই এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাদেরকে বড়ই অসহায় মনে হতে থাকে। যখনই ঘটনা ঘটছিল তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তবে খালিস্তানপন্থীদের এমন আচরণ আরও একবার প্রশ্ন তুলল যে ব্রিটেন কি খালিস্তানপন্থীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে? এর পাশাপাশি এই ঘটনা আরও একবার সামনে আনল সে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক কতটা দুর্বল। যদি একটি দেশের বিদেশমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে কল্পনা করাই যেতে পারে সাধারণ মানুষের জন্য ব্রিটেনে নিরাপত্তার ঠিক কী অবস্থা।
নিন্দা জানিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক
ভারতের বিদেশমন্ত্রক খালিস্তানপন্থীদের (Khalistani) এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী চরমপন্থীদের উস্কানিমূলক কার্যকলাপ বলে এই ঘটনাকে অভিহিত করেছে বিদেশমন্ত্রক। একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিদেশমন্ত্রক বলেছে, ‘‘আমরা বিদেশমন্ত্রীর সফরে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ফুটেজ দেখেছি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি ব্রিটিশ সরকার তাদের কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণভাবে পালন করবে।’’
এমারজেন্সি সিনেমার প্রদর্শনের সময় চলে বিক্ষোভ
প্রসঙ্গত, ভারত বারবার বলে আসছে যে ব্রিটেনে খালিস্তানপন্থীদের (Khalistani) কার্যকলাপ বাড়ছে। সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু খালিস্তানপন্থী উগ্রপন্থীকে দেখা যায় যে ব্রিটেনে এমারজেন্সি সিনেমার প্রদর্শনের সময় তার বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে। থিয়েটারের বাইরে এই বিক্ষোভ চললেও, ব্রিটেন প্রশাসন এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি। পরবর্তীকালে ওই বিক্ষোভের পরে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। তারা জানায় যে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু যখন তাদের বলা হয় যে ভারতীয়রা সিনেমা হলের ভিতরে আছে, তখন কেন এই খালিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে কোনওরকমের মামলা রুজু করা হল না? তখন আশ্চর্যজনকভাবে ব্রিটিশ পুলিশ উত্তর দেয় যে খালিস্তানপন্থী নিজেদের অধিকারের দাবিতে এই বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
খালিস্তানপন্থীদের আপন দেশ ব্রিটেন?
খালিস্তানপন্থী (Khalistani) জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ে সম্প্রতি সামনে এসেছে এক রিপোর্টে। ১৬৫ পাতার এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কীভাবে খালিস্তানপন্থী জঙ্গিদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে ব্রিটেন এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের নাকের ডগাতেই তারা ভারত বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই রিপোর্টে ৩৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে খালিস্তান শব্দ। কিন্তু পরবর্তীকালে রিপোর্টটি ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেকের ব্যাখ্যা, চাপের কারণেই ধামাচাপা পড়েছে ওই রিপোর্ট। খালিস্তানপন্থীরা ব্রিটেনে এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের চাপে এই রিপোর্টকে ধামাচাপা দিতে হয় ব্রিটিশ সরকারকে। প্রসঙ্গত, রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন ব্রিটেনের পাঁচজন মন্ত্রী, চারজন সেক্রেটারি। ধামাচাপা পড়লেও এই রিপোর্টেই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে কীভাবে খালিস্তানপন্থী জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত চলছে ব্রিটেনে। ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে আর বেশ কিছু শিখ ও উগ্রপন্থী গ্রুপ নিজেদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে চলেছে ফান্ডিং এর জন্য। এই ফান্ডিং তারা কাজে লাগাচ্ছে ঘৃণার প্রচার ও সাম্প্রদায়িকতায়। এই আবহে মনে হচ্ছে ব্রিটেন যেন খালিস্তানপন্থীদের নিজের দেশ হয়ে উঠেছে।
হেনস্থার চেষ্টা বিদেশমন্ত্রীকে, নিরাপত্তাহীনতায় প্রবাসী ভারতীয়রা
প্রসঙ্গত ব্রিটেনে ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে হেনস্তা করার এমন প্রচেষ্টায় যে কোনও ব্যক্তি খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছেন যে খালিস্তানপন্থীদের সমস্যা ব্রিটেনে ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছেছে! খালিস্তানপন্থীদের বিক্ষোভ হামলার একাধিক ঘটনা সাম্প্রতিককালে ঘটেছে। এই সমস্ত ঘটনায় যখন তদন্তের দাবি উঠেছে সেই সময় ব্রিটেনের প্রশাসন বারবার এগুলোকে ধামাচাপা দিয়েছে। তাদের যুক্তি এগুলো নাকি বাক স্বাধীনতার অধিকার। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়রাও ভয় পাচ্ছে খালিস্তানপন্থী জঙ্গিদের এমন কাজে। এই প্রবাসী ভারতীয়রা এতটাই ভীত হয়ে রয়েছেন যে তাঁরা জানাচ্ছেন যে, কোনও মুহূর্তে তাঁদের ওপরে বড়সড় ধরনের হামলা শুরু হতে পারে এবং তাঁদেরকে ভারতে ফেরত যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে। শুধুমাত্র তাই নয়। যে সমস্ত শিখ পরিবার এই খালিস্তানপন্থী জঙ্গিদের সমর্থন করেন না, তাঁরাও ব্রিটেনে নিরাপদ নয়। একটি শিখ পরিবার সম্প্রতি একটি ভিডিও আপলোড করে টিকটকে এবং তারপর থেকেই তাঁরা জানায় যে খালিস্তানপন্থী জঙ্গিরা লাগাতার খুনের হুমকি দিচ্ছে তাঁদের।
হামলা-ভাঙচুরও ব্রিটেনে বাক স্বাধীনতা?
২০২৩ সালে একদল খালিস্তানপন্থী (Khalistani) উগ্রপন্থী ভারতীয় দূতাবাসের উপর হামলা চালায় ভয়ঙ্কর সেই হামলায় দুজন কর্মী আহত হন। কিন্তু তারপরেও নিশ্চুপ ছিল ব্রিটিশ প্রশাসন। এত সাহস খালিস্তানপন্থীরা পাচ্ছে কোথা থেকে? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, এর কারণ হল তাদের পিছনে রয়েছে একটি বড় শক্তি। যে শক্তি সরকারের নির্ণায়ক শক্তি। যাদেরকে রাজনীতির পরিভাষায় বলা যায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। ব্রিটিশ সরকারের একটাই কথা এগুলো সবটাই বাক স্বাধীনতা। কিন্তু বিদেশমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তাঁর গাড়িতে হামলা চালানোর প্রচেষ্টা, ভারতের দূতাবাসে হামলা চালানো-এগুলো কোন মাপকাঠিতে বাক স্বাধীনতা?
Leave a Reply