মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর হাসপাতলে (RG Kar Case) মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যাকাণ্ড সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে। ন্যায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন হচ্ছে সর্বত্র। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় মহিলাদের জন্য দু'দিনের আত্মরক্ষা কর্মশালা ‘মিশন সাহসী’ (Mission Sahasi) অনুষ্ঠিত করল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। রাজ্যে ক্রমবর্ধমান যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ-আন্দোলনের পাশাপাশি আত্মরক্ষার পাঠে নারী সামাজে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
৩০০ জন তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় (Mission Sahasi)
১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া কমপ্লেক্সে, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP) আত্মরক্ষার বিশেষ কর্মশালা 'মিশন সহসী'-র (Mission Sahasi) শিবির আয়োজন করেছিল। এই কর্মশালায় প্রায় ৩০০ জন তরুণী অংশগ্রহণ করেছিলেন। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিখ্যাত মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞ, গ্র্যান্ডমাস্টার শিফুজি শৌর্য ভরদ্বাজ। দুই দিনে টানা ১২ ঘণ্টা করে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেন তিনি। একইভাবে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, এবিভিপি-র রাষ্ট্রীয় সংগঠন সম্পাদক আশীষ চৌহান এবং রাষ্ট্রীয় সম্পাদক শালিনী ভার্মা। স্কুল, কালেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নার্সিং কলেজের ছাত্রী সহ আরও অনেক মেয়েরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মানসিক শক্তিকে আরও উচ্চ স্তরে নিয়ে যায়
'মিশন সাহসী' হল এবিভিপি-এর চলমান কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি প্রধান ধারা, যেখানে তরুণী, যুবতী, ছাত্রী সহ সমাজের নানা বর্গের মহিলাদের আত্মরক্ষার কৌশলের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ হয়ে থাকে। এই কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করা। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আশিস চৌহান এই উদ্যোগের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “মিশন সাহসী (Mission Sahasi) মহিলাদের শক্তিশালী করে দাঁড়াতে সক্ষম করে, তাঁদের আত্মরক্ষার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে। অটল সাহসের সঙ্গে যেকোনও চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিক শক্তিকে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যায়। সম্প্রতি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই প্রশিক্ষণ একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এই রাজ্য সন্দেশখালির মতো নারী নির্যাতনের ঘটনা মানুষের মনকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আমরা ২০১৯ সাল থেকে এই মিশন সহসীর কাজ শুরু করেছিলাম। ইতিমধ্যেই ভারত জুড়ে দেড় কোটির বেশি মেয়েকে আত্মরক্ষামূলক কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছি। পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ করে হত্যার ঘটনা ক্রমবর্ধমান ভাবে ঘটে চলেছে। এই রাজ্যের সরকার নারী সুরক্ষা নিয়ে অত্যন্ত উদাসীন। তাই মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটা নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে মিশন সাহসী একটি প্রতিবাদের ভাষা।”
আন্দোলনের সঙ্গে চাই সমাধানও
এই কর্মশালাটিকে (Mission Sahasi) মহিলাদের ক্ষমতায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আরও বিষয়টি প্রসাঙ্গিক। নারী নির্যাতনের ঘটনা রাজ্যে মারাত্মক আকার নিয়েছে। এবিভিপির রাষ্ট্রীয় সম্পাদক শালিনী ভার্মা অনুষ্ঠানে বলেন, “মিশন সহসীর উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের যুবতী মহিলাদের আত্মরক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজন। নির্মমভাবে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এটি একটি সংঘটিত জঘন্য অপরাধ। এবিভিপি-র কর্মীরা প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ করছে এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে একই সময়ে মিশন সাহসী অভিযান শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ রাজ্যের মহিলাদের আত্মরক্ষার দক্ষতা শিখতে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করবে। আমরা মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল, প্যারামেডিক্যাল কলেজ এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটের শত শত মেয়েরা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এবার তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস বা জেলায় মেয়েদের আরও শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গে চলমান সমস্যার একটি যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা। শুধু আন্দোলন নয়, চাই সমাধানের রাস্তাও।”
মেয়েদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ মমতা সরকার
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তুলসী সরকার বলেন, “রাজ্যের মেয়েদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ মমতা সরকার। তাই আমরা মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি (Mission Sahasi) নিয়েছি। দুই দিনে মোট চারটি অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন আত্মরক্ষার কৌশল শিখেছেন। এরপর আমরা জেলা স্তরে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করব। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করব।”
মেয়দের নির্ভীক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে
একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সভাপতি রশ্মি সামন্ত। তিনি বলেন, “মিশন সাহসী (Mission Sahasi) হল এবিভিপির একটি মহৎ উদ্যোগ। যার লক্ষ্য মেয়েদের একটি শক্তিশালী এবং নির্ভীক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একটি উন্নত জীবন প্রদান করা। এই প্রশিক্ষণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং এটি বাংলার ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব তৈরি করবে। আমরা আশাবাদী যে বাংলা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং এবিভিপি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
আরও পড়ুনঃ ‘‘ট্রান্সজেন্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতাতেন সন্দীপ, কামড়াতেন-মারতেন’’! বিস্ফোরক দাবি
মামলায় গ্রেফতার এখনও পর্যন্ত ৩
উল্লেখ্য, গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিক্যাল (RG Kar Case) কলেজ ও হাসপাতালের হলে চতুর্থ তলায় সেমিনার অর্ধনগ্ন অবস্থায় এক মহিলা চিকিৎসককে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষায় জানা যায় যে যৌন নিপীড়ন করে খুন করা হয়েছিল। মামলার তদন্ত পুলিশ করলেও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে সিবিআই তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে হাসপাতলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, টালা থানার ওসি এবং এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনার দিন থেকে ন্যায় বিচারের দাবিতে বিদ্যার্থী পরিষদ 'লক্ষ্মীর সুরক্ষা', স্বাস্থ্য ভাবন অভিযান, মশাল মিছিল, রাত দখল-সহ একাধিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গিয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours