মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য জোরালো করার পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদি ভার্চুয়ালি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ( ASEAN Summit) ভাষণে ঘোষণা করেন যে একবিংশ শতাব্দীতে ভারত ও আসিয়ান দেশগুলোর যৌথ নেতৃত্বেই গঠিত হবে নতুন ভবিষ্যৎ। মোদি তাঁর বক্তব্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আসিয়ান ভারতের (India-ASEAN Relations) অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি–র অন্যতম মূল স্তম্ভ।
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির গোষ্ঠী আসিয়ান-এর বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত না-থাকলেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi)। নিজের বক্তব্যে ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “একবিংশ শতাব্দী আমাদের শতাব্দী। এটা ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলির।” একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, আসিয়ান কমিউনিটি ভিশন ২০৪৫ এবং বিকশিত ভারত ২০৪৭ গোটা মানবতার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।” বক্তৃতায় আসিয়ান গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে বোঝাপড়ার দিকটি তুলে ধরেন মোদি। একই সঙ্গে এ বছর সফল ভাবে আসিয়ান গোষ্ঠীর সম্মেলন আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইব্রাহিমকে। ২০২৬ সালের সম্মেলন আয়োজন করবে ফিলিপিন্স। প্রসঙ্গত, এই বছরের আসিয়ান সম্মেলনকে ঐতিহাসিক বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্ব তিমুর-লেস্তে আনুষ্ঠানিকভাবে আসিয়ানের ১১তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত ২৬ বছরের মধ্যে এমনটা প্রথম হল। প্রায় ১৪ লক্ষ জনসংখ্যার এই ছোট দেশটি এখন আসিয়ানের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কাঠামোর অংশ হয়ে উঠবে।
আসিয়ানে ভারতের গুরুত্ব
আসিয়ান সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। ভারত যে আসিয়ান (India-ASEAN Relations) দেশগুলোর নেতৃত্ব দিতে চায়, তা পরিষ্কার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে আসিয়ান গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল ভারত। ভারত ওই বছর আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হিসেবে যুক্ত হয় এবং ১৯৯৫ সালে পূর্ণাঙ্গ ‘ডায়ালগ পার্টনার’ হয়। তার পরে এই গোষ্ঠীতে ভারতের প্রভাব ক্রমশ বেড়েছে। ২০১৮ সালে দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত ১০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ করেছিল ভারত। আসিয়ান সম্মেলনে রবিবার সকালেই মালয়েশিয়ায় পৌঁছন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে শোনা গিয়েছিল আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকেই মোদি এবং ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে। পরে অবশ্য জানা যায়, মোদি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন না। এদিন ভার্চুয়ালি মোদি বলেন, “ভারত সর্বদা আসিয়ানের নেতৃত্ব এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য এর নীতিকে সমর্থন করে। ভারত এবং আসিয়ান একসঙ্গে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশর প্রতিনিধিত্ব করে। কেবল ভৌগোলিক নয়, গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্কও রয়েছে এই দেশগুলোর। বলা যায়, আমরা গ্লোবাল সাউথের সহযাত্রী। একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্য করি। একইসঙ্গে নানাক্ষেত্রের নীতি নির্ধারণে নিজেদের বক্তব্য পেশ করি।”
মূল বিষয় হল অন্তর্ভুক্তি এবং স্থায়িত্ব
প্রধানমন্ত্রী মোদির (PM Modi) কথায়, “বর্তমান আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের মূল বিষয় হল অন্তর্ভুক্তি এবং স্থায়িত্ব। ভারত সর্বদা আসিয়ান-কেন্দ্রিকতা এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আসিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে আসছে। অনিশ্চয়তার এই যুগেও, ভারত-আসিয়ান অংশীদারিত্ব অগ্রগতি করেছে। একবিংশ শতাব্দী ভারত এবং আসিয়ানের শতাব্দী, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। ভারত আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। সব রকমের সঙ্কটে একসঙ্গে কাজ করবে।” উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রায় সব আসিয়ান–ভারত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, শুধু ২০২২ সালের সম্মেলন ব্যতিক্রম। বর্তমানে ১০টি দেশ আসিয়ানের সদস্য। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড, ব্রুনেই, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম। এ বারের সম্মেলনে পূর্ব তিমুরও আসিয়ানের সদস্য হয়েছে। মোদি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ভারত ও আসিয়ানের অংশীদারিত্ব আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং মূল্যবোধে আমরা অভিন্ন।’
ভারত–আসিয়ান সামুদ্রিক সহযোগিতার বছর
মোদি (PM Modi) আরও জানান, দুর্যোগ মোকাবিলা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নীল অর্থনীতিতে ভারত ও আসিয়ানের সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হয়েছে। তিনি ঘোষণা করেন, ২০২৬ সালকে ‘ভারত–আসিয়ান সামুদ্রিক সহযোগিতার বছর’ হিসেবে উদযাপন করা হবে, যা ভারত মহাসাগরজুড়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার নতুন অধ্যায় সূচিত করবে। এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী মোদি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে আলোচনার উল্লেখ করে ‘এক্স’–এ লেখেন, “আমার প্রিয় বন্ধু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তাঁকে মালয়েশিয়ার আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি এবং আসন্ন সম্মেলনগুলোর সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছি।” মোদির অনুপস্থিতিতে সোমবার আসিয়ানের ইস্ট এশিয়া সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।

Leave a Reply