মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “বাংলাদেশের বিষয়টি আমি বন্ধু মোদির ওপরই ছেড়ে দিলাম।” দিন কয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিক এই কথাটাই বলেছিলেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তারপরেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh Crisis) রাজনৈতিক মহলে।
মোদি ও ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক (Bangladesh Crisis)
ভারতের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, মোদি ও ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ওঠে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে ইসলামপন্থী শক্তির উত্থান নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এবং এটি কীভাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের পরিকল্পনা
জানা গিয়েছে, ট্রাম্প বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। ভারত যেভাবে দেশটিকে পরিচালিত করতে চায়, সেটিকেই সমর্থন করবে। ট্রাম্পের এই অবস্থান ইউনূস সরকার এবং বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের কৌশল নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা ভারত-বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাহায্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল। ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা অংশ, পাকিস্তান ও তুরস্কের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকদের, যেমন ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সাহায্যের ওপর নির্ভর করছিলেন, যাতে তিনি ক্ষমতায় আরও বেশি দিন (Donald Trump) থাকতে পারেন।
নয়া রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা
বাংলাদেশের নতুন সরকার, বিশেষ করে (Bangladesh Crisis) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (ADSM) নেতারা, যারা এখন ক্ষমতায় রয়েছেন এবং নয়া রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছে, তারা আমেরিকার সমর্থন এবং জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের (OSF) সাহায্যের আশায় ছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক প্রভাব কমানোর কাজ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের কার্যক্রম বন্ধ করার কথা বলেন। এর পরেই ইউনূস, এডিএসএম নেতারা এবং বাংলাদেশি ইসলামপন্থীদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এডিএসএমের নেতারা যখন শুনেছেন আমেরিকা বাংলাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত ভারতের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে, তখনই ভয় পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এক দিকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন এবং ওএসএফের সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আর অন্যদিকে সিদ্ধান্তের বিষয়টি ভারতের হাতে ছেড়ে দেওয়া – জোড়া ফলায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা।
ভারতের সাফ কথা
ভারত অবশ্য প্রথমেই বাংলাদেশকে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে নয়াদিল্লি সাফ জানিয়ে দেয়, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তবে দুই দেশের মধ্যে যে কোনও গঠনমূলক আলোচনা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন ঢাকায় একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে (Bangladesh Crisis)। ভারতের এই অবস্থানে যারপরনাই ক্ষুব্ধ ইউনূস ও তার উপদেষ্টারা। কারণ নয়াদিল্লির এই অবস্থান তাদের বৈধতাই অস্বীকার করেছে। ইউনূস ও তার উপদেষ্টারা মূলত ভারত-বিরোধী। কারণ তারা ইসলামপন্থী। ভারতের চেয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা করতেই তারা বেশি আগ্রহী। ট্রাম্পের বক্তব্য তাদের এই ভারত-বিরোধী পরিকল্পনায়ও বাধা সৃষ্টি করেছে। তারা এখন বুঝতে পারছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে কোনও অপচেষ্টা করলে নয়াদিল্লি কঠোর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে (Donald Trump)।
জোট বাঁধছে বিএনপি এবং আওয়ামি লিগ
ট্রাম্পের বক্তব্যে খুশি বিএনপি এবং আওয়ামি লিগ। বিএনপি চায় বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন হোক। আর ইউনূস নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসনের সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। বিএনপি বারবার বলেছে, নির্বাচনের আগে মৌলিক কিছু সংস্কার করা যেতে পারে, তবে ব্যাপক সংস্কারের জন্য গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারেরই ম্যান্ডেট থাকা উচিত (Bangladesh Crisis)। বিএনপির দৃঢ় সন্দেহ, ইউনূস শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং এডিএসএম নেতাদের তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের সময় দিতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তাই তারা এডিএসএম নেতাদের সংগঠিত হওয়ার সময় দিতে চায় না। ফলে বিএনপি ও ইউনূস সরকারের মধ্যে সংঘর্ষের পথ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে (Donald Trump)।
ইউনূস সরকারের প্রস্তাব
বিএনপিকে দুর্বল করতে ইউনূস সরকার দুটি নতুন প্রস্তাব এনেছে— প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং জাতীয় সংসদের জন্য একটি প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ তৈরি করে তাতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সদস্য মনোনীত করা। প্রত্যাশিতভাবেই বিএনপি এই সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। কারণ এগুলি বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে এবং জাতীয় নির্বাচন আরও পিছিয়ে যাবে। ভারতও চায়, দ্রুত নির্বাচন হোক বাংলাদেশে। কারণ নয়াদিল্লি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গেই গঠনমূলক আলোচনা করবে। ইউনূস সরকার যারা দেশের চরমপন্থী ইসলামপন্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, তারা বাংলাদেশ জামাতে ইসলামিকে তাদের পাশে পেয়েছে। জামাত স্থানীয় নির্বাচন আগে করা এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। এর জেরেও বিলিম্বত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন।
বিএনপি-জামাতের মধ্যে বিভেদ
জামাতের এই অবস্থান বিএনপি এবং জামাতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। একসময় বন্ধুত্ব থাকলেও, এখন তাদের মধ্যে স্পষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিএনপি ও জামাত অতীতেও জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বিএনপি ও জামাত নির্বাচনের পক্ষে এবং সংস্কার নিয়ে পরস্পরবিরোধী ও বিপরীত অবস্থান নিচ্ছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিবৃতিও দিয়েছে। বিএনপির আশঙ্কা, ইউনূস শাসনব্যবস্থা, বিশেষ করে এডিএসএম নেতারা, গোপনে তাদের দলকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে (Donald Trump)। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিএনপিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। আওয়ামি লিগ বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। আর জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মতো অন্যান্য দলগুলি জনসমর্থনহীন প্রান্তিক দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিএনপি-আওয়ামি লিগ সমঝোতা!
বিপদে পড়ে বিএনপি-আওয়ামি লিগ সমঝোতার পথে এগোতে পারে। তারা বলছে, এই জোট গঠন জরুরি, কারণ তারা (বিএনপি নেতারা) মনে করছে যে ইউনুস শাসনব্যবস্থা বিএনপির বিরুদ্ধে গুরুতর পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি, জামাত ও ইসলামপন্থীদের প্রতিহত করতেও এটি প্রয়োজন। কারণ পাকিস্তান ও অন্যান্য ইসলামি দেশগুলোর সহায়তায় তারা বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক বিএনপি নেত্রী (Bangladesh Crisis) বলেন, “আওয়ামি লিগ নেতৃত্বশূন্য এবং সংগঠনগতভাবে বিশৃঙ্খল হলেও, তাদের অনেক বাংলাদেশির সমর্থন রয়েছে, এটি অস্বীকার করা যাবে না। তাই আওয়ামি লিগকে একেবারে বাতিল করা যাবে না। আওয়ামি লিগের সঙ্গে জোট বাঁধলে আমাদের লাভ হবে।”
এছাড়া, বিএনপি বাংলাদেশের ইতিহাস পুনর্লিখন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা মুছে ফেলার প্রস্তাবেরও তীব্র বিরোধিতা করেছে। জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লি এখন বাংলাদেশে দ্রুত সংসদীয় নির্বাচনের জন্য চাপ দেবে। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “যত দেরি হবে, ইসলামপন্থীরা তত শক্তিশালী হবে। আমরা ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসনকে এটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারা বুঝতে পেরেছে যে নির্বাচন বিলম্বিত হলে পাকিস্তান ও চিনের মতো শক্তিগুলো সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা (Donald Trump) এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে চায় (Bangladesh Crisis)।”
Leave a Reply