National Herald Case: বিপাকে সনিয়া-রাহুল, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় গান্ধীদের হতে পারে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড!

national herald case what does ed chargesheet say against sonia and rahul gandhi

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) অস্বস্তি বাড়ল সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) ও রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi)। মঙ্গলবার ওই মামলায় দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। চার্জশিটে নাম রয়েছে সনিয়া ও রাহুলের। নাম রয়েছে কগ্রেসের ওভারসিজ ইউনিটের প্রধান শ্যাম পিত্রোদারও। নাম আছে কংগ্রেস নেতা সুমন দুবের। আগামী ২৫ এপ্রিল বিশেষ আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সম্প্রতি ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ৬৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি।

আদালতে চার্জশিট পেশ ইডির

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে চার্জশিট দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই প্রথম বার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। টাকা তছরুপের মামলায় মঙ্গলবার জেরা করা হয় সনিয়ার জামাই রবার্ট বঢরাকে। তার কয়েক ঘণ্টা পরে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া এবং সাংসদ রাহুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে ইডি। এপ্রিলের শুরুর দিকে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা করেছিল ইডি। বিশেষ বিচারক বিশাল গগনে সেই চার্জশিট পর্যালোচনা করেন। তার পরেই মঙ্গলবার তা গৃহীত হয়। বিশেষ বিচারক বিশাল জানিয়েছেন, ওই দিন কেস ডায়েরি দাখিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে তদন্তকারী অফিসার এবং ইডির আইনজীবীকে।

কী কী রয়েছে ইডির চার্জশিটে

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ২০১৭ সালের আয়কর মূল্যায়ন আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের চার্জশিটে অভিযোগ করেছে যে, অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল) এবং ইয়ং ইন্ডিয়ানের প্রধান কর্মকর্তাদের সাথে, তালিকাভুক্ত নয় এমন একটি পাবলিক কোম্পানি এজেএল-এর ২,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের জন্য একটি “অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র” করেছিলেন। সংবাদসংস্থা পিটিআই এমনটাই জানিয়েছে। ইডি উল্লেখ করেছে যে, এজেএল-এর ৯৯ শতাংশ শেয়ার মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইয়ং ইন্ডিয়ান-একটি বেসরকারি সংস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। ইয়ং ইন্ডিয়ানে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর প্রত্যেকের ৩৮ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে, বাকি ২৪ শতাংশ যৌথভাবে ছিল প্রয়াত মতিলাল ভোরা এবং অস্কার ফার্নান্দেজের, যাদেরকে ইডি গান্ধী পরিবারের “ঘনিষ্ঠ সহযোগী” বলে বর্ণনা করেছে।

কর ফাঁকির অভিযোগ

চার্জশিটে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, অভিযুক্তরা ৯০.২১ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ, যা আগে এআইসিসি কর্তৃক এজেএলকে দেওয়া হয়েছিল, তা ৯.০২ কোটি টাকার ইক্যুইটি শেয়ারে রূপান্তর করার ষড়যন্ত্র করেছিল, যা পরে নামমাত্র মূল্যে ইয়ং ইন্ডিয়ানে স্থানান্তরিত করা হয়। ইডির দাবি, এই পদক্ষেপ কার্যকরভাবে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীকে এজেএলের বিশাল রিয়েল এস্টেট সম্পদের “লাভজনক মালিকানা” প্রদান করেছে। যদিও ইয়ং ইন্ডিয়া কোম্পানি আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত ছিল। ইডি বলেছে যে কোম্পানিটি কোনও দাতব্য কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। চার্জশিটে ২০১৭ সালের আয়কর মূল্যায়ন আদেশের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বলা হয় ইয়ং ইন্ডিয়া ৪১৪ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দিয়েছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

আর্থিক জালিয়াতি সংক্রান্ত পিএমএলএ আইনের ৩ ও ৪ নম্বর ধারার আওতায় আর্থিক নয়ছয় ও তার জন্য শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন ইডির বিশেষ সরকারি কৌঁসুলী এনকে মাত্তা ৷ এদিন বিচারক বলেন, “অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে নথিভুক্ত করা হোক৷” পরবর্তী শুনানির মধ্যে বিচারক গগনে ইডিকে অভিযোগের সফ্ট কপি ও তথ্যগুলির ওসিআর ফরম্যাট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ৷

৬৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

সম্প্রতি এই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) সনিয়া এবং রাহুলের ৬৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে ইডি। শনিবারই দিল্লি, মুম্বই ও লখনউয়ের রেজিস্ট্রি অফিসগুলিকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হয়। কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাসোসিয়েট জার্নালস লিমিটেডের (AJL) বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগের তদন্তে নেমে এই স্থায়ী সম্পত্তিগুলি নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছে ইডি। দিল্লি ও মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকায় বাড়ি, লখনউয়ের বিশ্বেশ্বরনাথ রোডে এজেএল বিল্ডিং এবং দিল্লির বাহাদুর শাহ জাফর মার্গে ন্যাশনাল হেরাল্ড হাউস নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছে ইডি। সেজন্য ওইসব সম্পত্তি খালি করতে বলা হয়েছে ইডির তরফে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা কী

এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ইডি দিল্লি, মুম্বই ও লখনউতে মোট ৬৬১ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি এবং ৯০.২ কোটি টাকার এজেএল শেয়ার প্রাথমিকভাবে বাজেয়াপ্ত করে। ২০১৪ সালের ২৬ জুন নয়া দিল্লির মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পাটিয়ালা হাউস কোর্টের জারি করা নির্দেশের ভিত্তিতে ২০২১ সালে ইডি এই মামলার তদন্ত শুরু করে। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল হেরাল্ড হল এজেএল প্রকাশিত একটি সংবাদমাধ্যম। ইয়ং ইন্ডিয়ানের মালিকাধীন এই সংবাদমাধ্যম। ইয়ং ইন্ডিয়ানে ৩৮ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে সনিয়া ও রাহুলের। অভিযোগ, এজেএল নামে যে সংস্থার হাতে ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রটির মালিকানা ছিল, বাজারে কোটি কোটি টাকার দেনা ছিল তাদের। যার বেশির ভাগটাই কংগ্রেসের কাছ থেকে নেওয়া।

রাজনৈতিক দল হয়ে বাণিজ্যিক সংস্থাকে ঋণ কীভাবে

জওহরলাল নেহরু প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হেরাল্ড (National Herald Case) সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় ২০০৮ সালে। সেই অবস্থাতেই সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে সোনিয়া, রাহুল এবং কংগ্রেস নেতাদের ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা। ইয়ং ইন্ডিয়ান মাত্র ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে এজেএলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, যার সম্পত্তির মোট মূল্য ২,০০০ কোটিরও বেশি। কিছুদিন পর কংগ্রেসের তরফে ‘দেনার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়’ বলে ন্যাশনাল হেরাল্ডের ঋণ মুকুব করে দেওয়া হয়। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস এমনটা করতে পারে না। স্বামীর যুক্তি, কংগ্রেস রাজনৈতিক দল। তাই তারা কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে ঋণ দিতে পারে না। কারণ তারা নিজেরা ঋণ দেয় না। ২০২১ সালে টাকা নয়ছয়ের তদন্ত শুরু করে ইডি।

সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট তাৎপর্যপূর্ণ

ইতিমধ্যে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) ইডি রাহুল এবং সোনিয়াকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শেষবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রাহুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। তাঁর মাকেও ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড (ওয়াইআইএল)-এ তার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার হরিয়ানার একটি রিয়েল এস্টেট চুক্তির সঙ্গে জড়িত অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তকারী সংস্থা ব্যবসায়ী রবার্ট বঢ়রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আগামিকাল ফের তাঁকে তলব করা হয়েছে। রবার্ট, কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধির স্বামী, রাহুল গান্ধির শ্যালক। এই জিজ্ঞাসাবাদের কিছুক্ষণের মধ্যেই সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার ঘটনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share