Modi-Vance Meeting: ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির জন্য আলোচনা এগোচ্ছে, ভান্সের সন্তানদের সঙ্গে মজা মোদির

modi vance meeting us vice president welcome progress on india us trade pact

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত-আমেরিকা (Modi-Vance Meeting) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষর করতে চায় দুই দেশ। চিনের সঙ্গে আমেরিকার বানিজ্য-যুদ্ধের আবহেই ৪ দিনের ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন, তাঁদের মধ্যে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয়। এই বৈঠকে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সদর্থক আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

বাণিজ্য-চুক্তির দিকে তাকিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন

ভারতের ওপর চাপানো অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির (Modi-Vance Meeting) অগ্রগতির জন্যই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে। এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভান্স দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে জোর দেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। ভারতের সঙ্গে এই বাণিজ্য চুক্তিটি হলে তা বিশ্বের বৃহত্তম পণ্য প্রস্তুতকারক চিনের সঙ্গে তাঁদের বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করবে আমেরিকাকে। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, জুলাই মাসের শেষেই এই বাণিজ্য চুক্তিটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী দিল্লি। সূত্রের খবর, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াদিল্লির এক কর্তা জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং জেডি ভান্সের মধ্যে বৈঠকের পরপরই, এই সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শীঘ্রই আইএমএফ বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনে যাবেন। সেখানে তিনি ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করবেন বলেও জানা গিয়েছে।

ভারতীয় পোশাকে ভান্সের সন্তানরা

সোমবার সকালেই ভারতে পৌঁছন ভান্স। সকাল ১০টার কিছু আগে দিল্লির পালাম বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে তাঁর বিমান। ভান্সের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী উষা ভান্স এবং তিন শিশুসন্তান— ইওয়ান, বিবেক ও মিরাবেল। তিন সন্তানেরই পরনে ছিল ভারতীয় পোশাক। দুই পুত্র পরেছিল কুর্তা-পাঞ্জাবি। কন্যার পরনে ছিল চোলি-লেহঙ্গা। পালাম বিমানঘাঁটিতে ভান্সকে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় রেল এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বিমানঘাঁটিতে ভান্সকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদির ৭ লোক কল্যাণ মার্গের সরকারি বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের সময়ও স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে গিয়েছিলেন ভান্স। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময়েও ভান্সের তিন সন্তানের পরনে ছিল ভারতীয় পোশাক। ইওয়ানের পরনে কালো বন্ধগলা, বিবেক সেজেছিল কুর্তা এবং জহর কোটে। হালকা রঙের চুড়িদার পরেছিল ছোট্ট মিরাবেল।

প্রধানমন্ত্রী না ‘দাদু’ মোদি

সোমবার রাতে সপরিবারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান ভান্স। গাড়ি থেকে নেমেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিব্যি ভাব হয়ে যায় ভান্সের (Modi-Vance Meeting) তিন সন্তানের। ভান্স পরিবারকে নিজের বাসভবন ঘুরিয়ে দেখান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাড়িতে গিয়ে রীতিমতো হুটোপাটিতে মাতে তিন খুদে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কোলে চড়তে দেখা গিয়েছে ইওয়ান এবং বিবেককে। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদি নন, ‘দাদু’ মোদি। ভান্সের তিন সন্তানকে ময়ূরের পালক উপহার দেন মোদি। ভান্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তরফে শুভেচ্ছাবার্তা দেন মোদিকে। মোদিও ‘বন্ধু’ ট্রাম্পকে ভান্সের মাধ্যমে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। বৈঠকের শেষে ভান্স এবং তাঁর পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ছিল বিশেষ নৈশভোজের আসর।

জ্বালানি, প্রতিরক্ষা নানা ক্ষেত্রে সাহায্যের বার্তা

বাণিজ্যচুক্তির পাশাপাশি এদিন জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, কৌশলগত প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে মোদি ও ভান্সের মধ্যে আলোচনা হয়। নানা ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের। চলতি বছরের শেষের দিকে ভারত সফরে আসতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মোদি-ভান্স বৈঠকের পর। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে জয়পুর যাবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমের ফোর্ট-সহ নানা স্থাপত্য ঘুরে দেখবেন তিনি। তারপর রাজস্থান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে বক্তৃতাও দেবেন।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য

কিছুদিন আগে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কের কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে আপাতত ৯০ দিনের জন্য সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন তিনি। দুই দেশের স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তিতে অনেকটাই এগিয়েছে ভারত ও আমেরিকা। ২০৩০ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে চুক্তি করতে চায় নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটন। এখন যা প্রায় ১৯,১০০ কোটি ডলার। অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব এবং এই আলোচনায় ভারতের প্রধান প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়াল সম্প্রতি জানিয়েছেন, মে-র শেষে মুখোমুখি বৈঠক শুরু হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত সময়সীমা মেনেই সব কিছু এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে এগোনো সম্ভব বলেও মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

 

 

 

 

 

 

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share