মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওকাণ্ডের (Pahalgam Attack) পর এবার পাকিস্তানকে আক্ষরিক অর্থেই ভাতে মারতে উদ্যোগী হল ভারত। মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ে গুলি করে খুন করা হয়েছে এক নেপালি-সহ ২৮ জনকে। এঁদের মধ্যে ২৭ জনই হিন্দু। পর্যটকরা হিন্দু কিনা তা জেনেই, তার পরে (Indus Waters Treaty) গুলি করে জঙ্গিরা। পাক-মদতপুষ্ট এই জঙ্গিদের খোঁজে উপত্যকাজুড়ে চলছে তল্লাশি।
কূটনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ (Pahalgam Attack)
পর্যটকদের ওপর হামলার কারণে এবার মোদি সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত এই পদক্ষেপগুলির জেরে পাকিস্তান যে ঘোর বিপাকে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বুধবার রাতে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষ হয় রাত ৯টা নাগাদ। তার পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। তিনিই জানান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া পাঁচটি পদক্ষেপের কথা। বিদেশ সচিব জানান, জম্মু-কাশ্মীরে সম্প্রতি সফলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপত্যকায় উন্নতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। সেই আবহে এই হামলা।
প্রথম পদক্ষেপ – সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে পাঁচটি প্রধান পদক্ষেপ করেছে, তার মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলির – রবি, বিয়াস ও শতদ্রুর জল নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলির সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর অধিকার কায়েম রাখে। তবে এই তিন নদীর সীমিত জল ব্যবহারের অধিকার ভারতের রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ এবং উত্তেজনার আবহেও এই চুক্তি টিকে ছিল দশকজুড়ে। এই চুক্তিটি আপাতত স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। শর্ত হল, পাকিস্তানকে বিশ্বাসযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়ভাবে সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদে সমর্থন জোগানো বন্ধ করতে হবে। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত হল, যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, ততদিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে (Pahalgam Attack)।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ – আটারি চেক পোস্ট বন্ধ
ভারত-আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে এই পথে সব ধরনের সীমান্ত পারাপার বন্ধ হয়েছে। এতে মানুষ ও পণ্য চলাচলও স্থগিত করা হয়েছে। যারা ইতিমধ্যেই বৈধ নথিপত্র নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে এসেছেন, তাঁদের ২০২৫ সালের ১ মে-র মধ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। এই প্রধান স্থলবন্দর বন্ধের উদ্দেশ্য হল, ভবিষ্যতে সীমান্ত পারাপার আরও সীমিত করা এবং পাকিস্তানের প্রতি কঠোর বার্তা পাঠানো (Indus Waters Treaty)।
তৃতীয় পদক্ষেপ – পাকিস্তানিদের সার্ক ভিসা বাতিল
তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্পের অধীনে কোনও পাকিস্তানিকে আর ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আগে এই ভিসায় ভারতে আসার জন্য পাকিস্তানিদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই সব অনুমতিই বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। এই ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সব পাক নাগরিক এখনও ভারতে রয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ভারত ছাড়তে হবে। প্রসঙ্গত, সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প হল সার্কের সদস্য দেশগুলির মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ চুক্তি, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভিসা ছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা – এই সাত দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন নাগরিকরা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তুলে নেওয়া হচ্ছে এই অনুমতি (Pahalgam Attack)।
চতুর্থ পদক্ষেপ – দূতাবাস কর্তাদের নির্দেশ
চতুর্থ পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামাবাদে উপস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বায়ু উপদেষ্টাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত। তুলে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের সহকারিদেরও। একই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বায়ু উপদেষ্টাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাতা’ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হচ্ছে। ভারত ছাড়ার জন্য তাঁদের এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে (Indus Waters Treaty)।
পঞ্চম পদক্ষেপ – দূতবাসে কর্মী সংকোচন
পঞ্চম পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১ মে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে (Pahalgam Attack)।
প্রসঙ্গত, এদিনের ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ সরকারের পদস্থ কর্তারা। এই সভায়ই বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। পহেলগাঁওয়ে হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে ভারতীয় সেনা ও পুলিশ ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সাতজন জঙ্গির একটি দল এই হামলা চালায় (Indus Waters Treaty)। এদের মধ্যে কয়েকজন পাকিস্তানিও ছিল (Pahalgam Attack)।
Leave a Reply