Kamikaze Drone: হায়দরাবাদের হস্টেলে ২০ বছরের দুই পড়ুয়ার চমক! কলকাতার ছেলের তৈরি কামিকাজে ড্রোন কিনল সেনা

kamikaze drones for indian army developed by two studentsone of them from kolkata in their hostel of bits pilani hyderabad

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যা সিনেমায় সম্ভব নয়, তা বাস্তবে করে দেখাল কলকাতার ছেলে শৌর্য। রাজস্থানের বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হস্টেলে অসাধ্যসাধন! ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটারের বেশি বেগে উড়তে পারে, সাধারণ ড্রোনের তুলনায় গতিবেগ ছয় গুণ বেশি, এক কিলোগ্রাম পর্যন্ত বোমা বইতে পারে, ধরতে পারবে না রেডারও ভারতীয় সেনার জন্য এমনই আত্মঘাতী ড্রোন তৈরি করেছে রাজস্থানের জয়ন্ত খত্রী এবং কলকাতার শৌর্য চৌধুরী। তাঁদের তৈরি এই কামিকাজে ড্রোন (Kamikaze Drone) সকলকে চমকে দিয়েছে। জয়ন্ত ও শৌর্য-র লক্ষ্যই হল আত্মনির্ভর ভারত। বিদেশি ড্রোনের উপর ভারতীয় সেনার নির্ভরতা কমানোর জন্যই এই প্রযুক্তির প্রতি মননশীল হন তাঁরা।

সিনেমাকে হার মানাল বাস্তব

থ্রি-ইডিয়টস সিনেমায় জয় লোবোর ড্রোন তৈরির স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার কলেজের হস্টেলের ঘরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্নকে সফল করল হায়দরাবাদ বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (BITS) পিলানির দুই ছাত্র। হস্টেলের ঘরে বসে সামান্য কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার করে আত্মঘাতী মানববিহীন উড়ুক্কু যান বানিয়েছেন কলকাতার ছেলে শৌর্য ও রাজস্থানের জয়ন্ত। শৌর্য ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আর জয়ন্ত পড়াশোনা করেছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। তাঁরা দু’জনে মিলে একটি স্টার্ট-আপও খুলেছেন।

কীভাবে সেনার নজরে

জয়ন্ত জানিয়েছেন যে প্রাথমিকভাবে ড্রোন তৈরি করার পরে যাঁদের যাঁদের সম্ভব, তাঁদের ইমেল করেছিলেন। লিঙ্কডইনে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যুত্তর দেন একজন কর্নেল। হাতেকলমে ড্রোন দেখাতে তাঁদের চণ্ডীগড়ে যেতে বলা হয়। চণ্ডীগড়ে সেনা অফিসারদের সামনে দু’টি ড্রোন প্রদর্শন করেন শৌর্য ও জয়ন্ত। তার মধ্যে একটি ছিল আত্মঘাতী শ্রেণির অর্থাৎ কামিকাজে। অপরটি নজরদারির। পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলির পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ছিলেন ফৌজি জেনারেলরা। ওখান থেকেই বাহিনীকে নজরদারি ড্রোন সরবরাহের বরাত পেয়ে যান জয়ন্ত ও শৌর্য। বর্তমানে তাঁদের তৈরি ড্রোন জম্মু, হরিয়ানার চণ্ডীমন্দির, বাংলার পানাগড় এবং অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করেছে ভারতীয় ফৌজ।

রেডারে ধরা যাবে না

শৌর্য জানিয়েছেন, তাঁরা যে ড্রোন তৈরি করেছেন, তা সাধারণ ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিক্যেল’-র (ইউএভি) থেকে অনেক বেশি গতিশীল। একেবারে নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারবে। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হল যে দুই পড়ুয়ার তৈরি করা ড্রোনের নাগালই পাবে না শত্রুপক্ষ। কারণ রেডারে ধরা যাবে না কামিকাজে ড্রোনকে। ফলে অনায়াসে শত্রুদের নাকানি-চোবানি খাইয়ে দেওয়া যাবে। হায়দরাবাদের বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রোবোটিক্সের প্রতি আগ্রহ থেকে ধীরে ধীরে শৌর্য ও জয়ন্তের মধ্যে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক। প্রথম থেকেই ফৌজি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার একটা নেশা ছিল তাঁদের। এই উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি ক্লাব চালু করেন তাঁরা। স্টার্টআপ সূচনার নীল নকশাও তৈরি হয় সেখানে। মাস দুই আগে শুরু হওয়া স্টার্টআপ এর নাম দেওয়া হয় ‘অ্যাপলিয়ন ডায়নামিক্স’।

ড্রোনকে আরও ঘাতক করে তোলার পরিকল্পনা

‘অ্যাপলিয়ন ডায়নামিক্স’-এ সামরিক ড্রোন নিয়ে কাজ করছেন হায়দরাবাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বিতীয় বর্ষের অন্তত ছ’জন পড়ুয়া। উল্লম্ব ভাবে ওঠানামায় সক্ষম মানববিহীন উড়ুক্কু যান তৈরিতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছেন তাঁরা। চলছে স্থায়ী ডানাওয়ালা (Fixed Wing) ড্রোন তৈরির কাজও। কারণ, ফৌজকে শুধুমাত্র আত্মঘাতী ড্রোন সরবরাহ করে ক্ষান্ত থাকতে নারাজ জয়ন্ত এবং শৌর্য। এর পাশাপাশি কৃত্রিম মেধা বা এআই (AI) ব্যবহার করে ড্রোনকে আরও ঘাতক করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে ‘অ্যাপলিয়ন ডায়নামিক্স’-এর। স্টার্টআপটির সঙ্গে জড়িতেরা মাঝেমধ্যেই সেনাবাহিনীর জওয়ান এবং অফিসারদের ড্রোন সংক্রান্ত নানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। জয়ন্ত ও শৌর্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিআইটিএস পিলানির অধ্যাপক সঙ্কেত গোয়েল।

আধুনিক যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার

২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ফৌজি অভিযানগুলিতে ড্রোনের ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়তে শুরু করে। ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বর্তমানে যুদ্ধ বা জঙ্গি দমন অভিযানে মানববিহীন উড়ুক্কু যানের ব্যবহার ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এত দিন পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সক্ষম ড্রোন ছিল আমেরিকা, রাশিয়া, চিন এবং তুরস্ক-সহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কাছে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভারতের নামও। চলতি বছরের মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে ভারতীয় ড্রোনের পরাক্রম প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব। সূত্রের খবর, ওই সংঘাতে ইজরায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি স্কাইস্ট্রাইকার আত্মঘাতী মানববিহীন যানটির বহুল ব্যবহার করে সেনা। পাক ভূমির একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিতে এগুলি আছড়ে পড়েছিল।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share