মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অভিযোগ, দেশের সেনাবাহিনীকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় ফের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্য়োপাধ্যায়। বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন ভারতীয় সেনা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্যে আপত্তি তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ব্রাত্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন তিনি। একে একে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অন্য বিজেপি বিধায়কেরা। অধিবেশনে হইহট্টগোল শুরু হয়। বার বার সতর্ক করার পরেও পরিস্থিতি না বদলানোয় শুভেন্দুকে এই অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই অধিবেশনকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়কেরা।
সেনা-র বিরোধিতায় মমতা
ধর্মতলায় (Dharmatala) তৃণমূলের ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ সরানো নিয়ে শাসক শিবিরের (TMC) নিশানায় পড়েছে সেনাবাহিনী (Indian Army)। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দাবি করেন, বিজেপির (BJP) কথাতেই এ কাজ করেছে সেনা। তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই শোরগোল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। বাংলাভাষীদের ভিনরাজ্যে হেনস্থার প্রতিবাদে ধর্মতলায় মঞ্চ গড়েছিল তৃণমূল (TMC)। কিন্তু সেনাবাহিনী এসে সেই মঞ্চ সরাতে বলে। তাঁদের যুক্তি ছিল, ওই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মঞ্চ বাঁধা যাবে না। ঘটনার পরই ওই স্থানে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। শুধু তাই নয়, সেনাকে ব্যবহার করে বিজেপি এই কাজ করিয়েছে বলেও তোপ দাগেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর মঙ্গলবার সেই প্রসঙ্গই ওঠে বিধানসভায়।
সেনাকে অসম্মান ব্রাত্য বসুর
এদিন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “গতকাল সেনাবাহিনী যেভাবে বাংলা ভাষার মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে, সেটা ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান আর্মি যেভাবে খুন করেছিল, তার মতোই।” বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলে সরব হন আর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এরপরই উত্তাপ বাড়ে। সরব হন বিজেপি বিধায়করা। ‘ইন্ডিয়ান আর্মি জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন শুভেন্দু। বিজেপির ওয়াক আউট করে বেরিয়ে যায়। এরপর শুভেন্দুকে এই অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড করেন বিমান। অর্থাৎ, চলতি অধিবেশনে বাকি দিনগুলিতেও আলোচনায় যোগ দিতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা। বাইরে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আমাকে আবারও সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেনার হয়ে বলার জন্য সাসপেন্ড হতে হয়েছে। আমি সেনার জন্য গর্ব অনুভব করি।”
সেনার যুক্তি
সোমবার ওই মঞ্চ ভাঙার ক্ষেত্রে সেনার যুক্তি ছিল, অনুমোদনের সময়কাল পেরিয়ে গিয়েছে, তারপরও বাঁধা ছিল মঞ্চ। এরপর অনুমতি পেতে গেলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলেও জানিয়েছিল সেনা। তবে মমতার বক্তব্য, আসলে এই কাজ সেনার নয়, বিজেপি সেনাকে কাজে লাগিয়ে মঞ্চ খুলিয়েছে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ভারতীয় সেনা তৃণমূলের মঞ্চ ভেঙেছে। এর বিরুদ্ধে বিধানসবার ভিতর সরব হয় বিজেপি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্ধ হয়ে গেছেন, সে কারণে এখন ভারতীয় সেনাকেও অপমান করতে ছাড়ছেন না। এই ইস্যুতে তাঁর পদত্যাগেরও দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কটাক্ষ – একটুও লজ্জা অবশিষ্ট থাকলে এখন পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত।
শুভেন্দুর দাবি
মঙ্গলবার বিধানসভা থেকে সাসপেন্ডের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, “অধিবেশন চলাকালীন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু দেশের সেনাবাহিনীকে অপমান করেন। বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে ভারতীয় সেনার তুলনা টানেন। তারই প্রতিবাদে বিধানসভার ভিতরে ইন্ডিয়ান আর্মি জিন্দাবাদ স্লোগান তুলি। স্পিকারের কাছে অনুরোধ করি, যাতে ভারতীয় সেনাকে নিয়ে যা শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন তা যেন বক্তব্যের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়।” শুভেন্দুর দাবি, তাঁদের তরফে বিধানসভায় এই দাবি করা হলেও তাতে মান্যতা দেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথা মোতাবেক নির্দেশ দেন তিনি। শুভেন্দুর কথায়, “তারপরই আমাকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমি গর্বিত। সেনাবাহিনীর অপমান আমি সহ্য করব না। তারা আমাদের দেশের গর্ব। সীমান্ত রক্ষা করে। তাদের অপমান করেছেন অরূপ বিশ্বাস। ব্রাত্য বসু বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভয়ে জওয়ানরা কাল পালিয়েছিলেন। এটা অপমান। ভারতীয় সেনা কারোর ভয়ে পালায় না। এটা দেশের অপমান। এটা বরদাস্ত করব না।”
Leave a Reply