Operation Sindoor: ‘‘১০ মে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ থামেনি’’, অপারেশন সিঁদুরের অনেক না বলা কথা শোনালেন সেনাপ্রধান

operation sindoor indian army chief said war with pakistan didn't end on may 10

মাধ্য়ম নিউজ ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরে পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার জবাবে ৭ মে শুরু হওয়া ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) কেবলমাত্র তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়নি, বরং এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। শুক্রবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আপনারা হয়ত ভাবছেন ১০ মে যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে; না, তা নয়। এটি আরও অনেক দিন ধরে চলেছে, অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার সবকিছু বলা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, সীমান্তে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাস এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এবং নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অনুপ্রবেশের চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সীমান্তে অনুপ্রবেশ এখনও বন্ধ হয়নি

শুক্রবার দিল্লিতে একটি বই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে জেনারেল দ্বিবেদী জানান, সিঁদুর অভিযানের প্রভাব সীমান্তে কতটা পড়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ, সীমান্তে অনুপ্রবেশ এখনও বন্ধ হয়নি। পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত দেওয়াও চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ন্ত্রণ রেখার পরিস্থিতির উপরে সিঁদুর অভিযানের প্রভাব কতটা পড়েছে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। পাকিস্তানের মদতে সন্ত্রাস কি বন্ধ হয়েছে? আমি মনে করি না। কারণ, নিয়ন্ত্রণরেখায় এখনও অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছে। আমরা সকলে জানি, কত জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, কত জন পালিয়ে গিয়েছে।’’

অপারেশন সিঁদুর: দ্য আনটোল্ড স্টোরি

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা, তার জবাবে গত ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা (Indian Army)। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে সংঘাত শুরু হয়। অবশেষে ১০ মে পাকিস্তানের (Pakistan) অনুরোধেই দুই দেশের ডিজিএমও (DGMO) স্তরে বৈঠক হয়। তারপরই সংঘর্ষ বিরতি হয়। অপারেশন সিঁদুরে (Operation Sindoor) কী কী হয়েছিল, তা নিয়েই বই প্রকাশ করলেন সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সেখানেই তিনি জানালেন যে ১০ মে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত শেষ হয়নি। ‘অপারেশন সিঁদুর: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব ইন্ডিয়া’জ ডিপ স্ট্রাইক ইনসাইড পাকিস্তান’ শীর্ষক বইটি প্রকাশিত হয় শুক্রবার। এই বইটি লিখেছেন প্রাক্তন সেনা কর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেজিএস ধিলন। তিনি উল্লেখ করেন যে এই অভিযান শুধুমাত্র ভারতীয় সেনার সামরিক অভিযানই ছিল না, একইসঙ্গে সেনার সাহসিকতা, পেশাদারিত্বকেও তুলে ধরেছিল। জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, “এই দিকগুলি সাধারণত না শোনা, না বলা থেকে যায়, কারণ উর্দিধারীরা এই কথাগুলি বলতে পারেন না। নিয়ন্ত্রণ রেখায় এই ধরনের সংঘাতে আমরা অভ্যস্ত কিন্তু আমরা বুঝি না যে এর অনুভূতি, ক্ষতি, লাভ ও কী কী প্রতিবন্ধকতা থাকে। অপারেশন সিঁদুরেও না বলা কাহিনি ছিল।”

বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়

সিঁদুর অভিযানের সময় ভারতের বাহিনীগুলির মধ্যে সমন্বয়েরও প্রশংসা করেছেন দ্বিবেদী। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেক বাহিনীর আধিকারিকেরা নিজেদের নির্দেশ নিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে অবহিত ছিলেন। সেই মতো পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা। তিনি বায়ু, নৌ এবং স্থলসেনাকে এক কমান্ডারের অধীনে (থিয়েটারাইজেশন) নিয়ে আসার বিষয়েও সওয়াল করেছেন। তাঁর মতে, কাজ সম্পাদনের জন্য এক জন কমান্ডার থাকা প্রয়োজন। অভিযান চলাকালীন তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়কে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন এবং ভারতীয় সেনার সমন্বিত অগ্রযাত্রাকে “একটি ছন্দময় তরঙ্গের মতো” বলে আখ্যা দেন, যেখানে “প্রত্যেকে একে অপরের সঙ্গে সমন্বিত ছিল এবং নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন ছিল।” তিনি ব্যাখ্যা করেন যে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে তিন বাহিনী ছাড়াও অসামরিক ও সাইবার সংস্থাগুলো যুক্ত থাকে, সেখানে একীভূত কমান্ড কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “এত সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হলে থিয়েটারাইজেশনই সমাধান। ঐক্যবদ্ধ কমান্ড অপরিহার্য; কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য একজন মাত্র কমান্ডার থাকা প্রয়োজন।”

জিএসটি সংস্কারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত

কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি সংস্কারের সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। ড্রোনের উপরে জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন জেনারেল দ্বিবেদী। জেনারেল দ্বিবেদী সাম্প্রতিক জিএসটি সংস্কারকে সেনার আধুনিকীকরণে ত্বরান্বিত করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ড্রোনে জিএসটি ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা “বৃহৎ পরিসরে ক্রয়” সম্ভব করবে। তিনি আরও বলেন, এই সংস্কার প্রতিরক্ষা করিডরগুলিকে শক্তিশালী করবে এবং ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির অংশগ্রহণ বাড়াবে। “আমাদের প্রতিরক্ষা করিডরগুলো বড় ধাক্কা পাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং স্টার্ট-আপগুলো, যাদের প্রায়ই সীমিত সম্পদ থাকে, তারা এই জিএসটি কাট থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share