Durgapur Gangrape: আরজি করের ছায়া দুর্গাপুরে! গণধর্ষণের শিকার ওড়িশার ডাক্তারি পড়ুয়া, মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলছেন না কেন? প্রশ্ন বিজেপির

Durgapur Gangrape

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি৷ অভিযুক্তের বিচার চলছে। এর মাঝেই ফের চিকিৎসক পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল৷ এবার দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া ওই তরুণী উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেনি৷ ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ।

এই রাজ্যে সুরক্ষিত নয় মেয়ে 

শুক্রবার রাতে এক পরিচিতের সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন নির্যাতিতা। অভিযোগ, কয়েক জন যুবক তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। তার পর টেনেহিঁচড়ে ওই তরুণীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘নির্যাতিতা’র বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে। নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের দাবি, পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করেছে৷ এরা সকলেই তাঁর অপরিচিত বলেও জানিয়েছেন নির্যাতিতা৷ এই ঘটনার রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুর্গাপুর শহরে। মেয়েকে আর এই রাজ্যে রেখে পড়াতে চাইছেন না পরিবারের সদস্যরা। নির্যাতিতার বাবা বলছেন, “আমার মেয়ে এখানে সুরক্ষিত নয়। আমি এখানে আর ওকে পড়াব না। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে চলে যাব।”

রাস্তার ধারে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন ডাক্তারির ওই পড়ুয়া। অভিযোগ ওই ছাত্রী ও তাঁর সঙ্গী দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন মোহনবাগান অ্যাভিনিউ রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলেন৷ অন্ধকারে সেখানেই পাঁচজন ছেলে ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গলের ভিতরে। অভিযোগ, নির্যাতনের আগে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল এবং টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। পুরুষ সঙ্গীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় পালিয়ে গেলেও পরে তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করান ওই সঙ্গীই। যদিও ওই সঙ্গীর দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখতে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “তদন্ত চলছে। পুলিশের কাছে নতুন তথ্য এলে তা জানানো হবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি সংবেদনশীল। তাই সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

নির্যাতিতার বাড়ি ওড়িশার জলেশ্বরে

দুর্গাপুরে বেশ কয়েকটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজ-সহ ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ রয়েছে। ভিন রাজ্যের বহু ছাত্র-ছাত্রী এই কলেজগুলিতে পড়াশোনা করতে আসে। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা দুর্গাপুর এই প্রথম বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার মোহনবাগান অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকাটি জঙ্গল ঘেরা। রাতে এই এলাকা একেবারেই নির্জন থাকে৷ শুক্রবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে নির্যাতিতা তরুনীর পরিবারের দাবি। এই মুহূর্তে বেসরকারি যে মেডিক্যাল কলেজে ওই তরুণী এমবিবিএস-এর দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছিল সেখানেই চিকিৎসাধীন৷ মেয়ের উপর এই ধরনের অত্যাচারের ঘটনার কথা শুনে ওড়িশার জলেশ্বর থেকে তার পরিবার শনিবার সকালে এসে পৌঁছয় বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে।

আরজি কর কাণ্ডের ছায়া

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারির এক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছিল। ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস রায় ঘোষণা করেন। তিনি জানান, দোষীর সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বস্তুত, আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়ের নাম করেছিল সিবিআই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে। আরজিকরের এক বছরের মাথায় ফের রাজ্যে নারী নির্যাতন।

ঘটনার প্রতিবাদে সরব বিজেপি

ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি। তাঁদের অভিযোগ, “আরজি করের ঘটনায় যেমন সত্য গোপন করা হয়েছিল, এখানেও সেই চেষ্টা চলছে।” বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, “এই রাজ্যে ধর্ষণ মানেই প্রশাসনের নীরবতা। মুখ্যমন্ত্রী মুখ খুলছেন না কেন?” অন্যদিকে, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আরজি কর, কসবা প্রতিটি ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কারণ দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না। ফাঁসি পর্যন্ত যাচ্ছে না কোনও মামলা। বিচার হচ্ছে না, তাই অপরাধীরা আরও বেপরোয়া।” ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। আরজি কর, কসবা কাণ্ডের রেশ টেনে তিনি বলছেন, “দোষীদের সঠিকভাবে ধরে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি না দেওয়ার কারণেই এভাবে যৌন নির্যাতনের ঘটনা, ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গে কোনও রেপিস্ট বা খুনের চরম শাস্তি হতে দেখছি না। কারও ফাঁসি হতে দেখিনি। আমরা যতই দৌড়াই কিন্তু কোনও একটা অদৃশ্য হাতের জন্য কোনও দোষীর সেইভাবে শাস্তি হচ্ছে না। বিচার পেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share