মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কর্মচারী ভবিষ্য নিধি তথা ইপিএফও বা এমপ্লয়েজ প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর (Employees’ Provident Fund – EPFO) নিয়মে বড় বদল আনল কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ড। এবার থেকে ইপিএফের টাকা তোলার নিয়ম আরও সহজ হবে। এবার থেকে পিএফ-এ জমানো ১০০ শতাংশ টাকাই তুলতে পারবেন সদস্যরা। সোমবার অছি পরিষদের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। যার মাধ্যমে এবার থেকে পড়াশোনা, বিয়ে-সহ একাধিক জরুরি পরিস্থিতিতে পিএফ-র সম্পূর্ণ টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহকরা। তবে, একই সঙ্গে নতুন কিছু শর্তও জুড়ছে, যাতে অবসরের পর হাতখালি না হয়ে যায় এবং পেনশন খাতে যথেষ্ট টাকা জমে থাকে।
ইপিএফও-কে আরও সহজ করার সিদ্ধান্ত
সোমবার কেন্দ্রীয় শ্রম, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যর সভাপতিত্বে বসেছিল সেন্ট্রাল বোর্ড অব ট্রাস্ট-র ২৩৮ তম সভা। সেখানেই ইপিএফ-র ‘উদারীকরণ’-সহ টাকা তোলার প্রক্রিয়াকে সরল করা, বিশ্বাস প্রকল্পের ঘোষণা, ইপিএফ ৩.০ – কার্যকর করার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লি সূত্রে খবর, আংশিক টাকা তোলার জন্য থাকা ১৩টি পুরনো নিয়মকেও একত্র করে একটিই নিয়ম ধার্য করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দরকারে-অদরকারে ইপিএফও সদস্যরা নিজেদের টাকা তুলতে পারবেন। নতুন নিয়মে (EPFO new rules) তিনটি নতুন শ্রেণিতে টাকা তোলার সুযোগ থাকবে। আগে নানা ধরনের কারণে টাকা তোলার আলাদা আলাদা নিয়ম ছিল। এবার থেকে পুরো ব্যবস্থাকে সহজ করে তিনটি শ্রেণিতে আনা হয়েছে—এক, প্রয়োজনীয় খরচ— যেমন অসুস্থতা, পড়াশোনা বা ছেলেমেয়ের বিয়ে জন্য। দুই, ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা বা মেরামতির জন্য এবং তিন, বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনও কারণ না জানিয়েই টাকা তোলা যাবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে বদল
ইপিএফও-র (EPFO) পরিষেবা আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে চালু হচ্ছে ‘ইপিএফও ৩.০’ প্রকল্প। এতে থাকবে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে—অনেক দ্রুত টাকা তোলা যাবে। টাকা তোলার জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে, বেতন থেকে সরাসরি কন্ট্রিবিউশন জমা হয়ে যাবে, ডকুমেন্টেশনের ঝক্কি কমবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, পড়াশোনার জন্য ১০ বার সম্পূর্ণ টাকা তোলা যাবে। বিয়ের জন্য এই সুবিধা পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ পাঁচবার। এর আগে বিয়ে ও শিক্ষার জন্য মিলিয়ে ৩ বার পর্যন্ত টাকা তোলার নিয়ম ছিল। বাড়ি তৈরির জন্য টাকা তুলতে গেলে ন্যূনতম চাকরির মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়েছে ৫ বছর থেকে ১২ মাসে। শিক্ষা ও বিয়ের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম চাকরির মেয়াদ ৭ বছর থেকে কমিয়ে ১২ মাস করা হয়েছে।
অবসরের সময় একটি বড় অঙ্কের টাকা
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক জানিয়েছে, নতুন নিয়মে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে ২৫ শতাংশ ব্যালেন্স রাখা বাধ্যতামূলক। ইপিএফ (EPFO) অ্যাকাউন্টে মোট টাকার অন্তত ২৫ শতাংশ সবসময় রাখতে হবে সদস্যদের। সরকার বলছে, এর ফলে সদস্যরা ৮.২৫ শতাংশ হারে সুদ পেতে থাকবেন এবং জমা হবে। কখনওই সুদ পেতে কোনও অসুবিধা হবে না সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের। আগে ইপিএফও-র টাকা তোলার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বেকারত্ব বা লকআউট ইত্যাদি কারণ জানানো বাধ্যতামূলক ছিল। এখন থেকে সেই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
একটি বিশেষ কমিটি গঠন
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুপারিশ অনুযায়ী তহবিল পরিচালনা ও বিনিয়োগে সংস্কারের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করবে ইপিএফও (EPFO)। বর্তমানে ইপিএফও-র ১৫ শতাংশ টাকা শেয়ার মার্কেটে, ৪৫–৬৫ শতাংশ সরকারি বন্ডে এবং ২০–৪৫ শতাংশ কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ হয়। আরবিআই কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগের ন্যূনতম সীমা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তা ছাড়া নতুন ফান্ড ম্যানেজার নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। ঋণ পোর্টফোলিও পরিচালনার জন্য আগামী পাঁচ বছরের জন্য চারটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে— স্টেট ব্যাঙ্ক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, এইচডিএফসি, আদিত্য বিড়লা সান লাইফ ও ইউটিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। এই নতুন নিয়মে সদস্যরা সহজে ও দ্রুত তাদের ইপিএফ টাকার একটি বড় অংশ তুলতে পারবেন, আবার একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও বজায় থাকবে। সরকার বলছে, এই পরিবর্তনের ফলে কর্মজীবী মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হবে।
বাড়িতে বসেই ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট
টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়ম পরিবর্তন করার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ (CBT)। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, এখন থেকে বাড়িতে বসেই ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট হাতে পাবেন গ্রাহকরা। তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এর জন্য ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ। প্রভিডেন্ট ফান্ড পরিষেবাকে আধুনিক করতে ইপিএফও ৩.০ (EPFO 3.0) চালুর অনুমোদন মিলেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে চলা পিএফ বকেয়া ও জরিমানা সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে চালু করা হচ্ছে ‘বিশ্বাস স্কিম’।
Leave a Reply