John Kiriakou: ‘পাকিস্তানের পারভেজ মোশারফকে কিনে নিয়েছিল আমেরিকা’, ফাঁস করলেন সিআইএর প্রাক্তন কর্তা

John kiriakou us control Pakistan nuclear Saudi shield aq khan revelations

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কীভাবে ওয়াশিংটন কোটি কোটি ডলার সাহায্যের বিনিময়ে পাকিস্তানের (Pakistan) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফকে কিনে নিয়েছিল, তা ফাঁস করে দিলেন জন কিরিয়াকু (John Kiriakou)। তাঁর দাবি, একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কিরিয়াকু সিআইএতে ১৫ বছর কাজ করেছেন। এর মধ্যে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক, পারমাণবিক কূটনীতিতে সৌদি প্রভাব এবং দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তনশীল ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে একাধিক খোলামেলা মন্তব্যও করেছেন।

মার্কিন বিদেশনীতির সমালোচনা (John Kiriakou)

কিরিয়াকু আমেরিকার বিদেশনীতিতে বেছে নেওয়া নৈতিকতারও সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ওয়াশিংটন স্বচ্ছন্দ্যে একনায়কদের সঙ্গে কাজ করে এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কিরিয়াকু বলেন, “পারভেজ মোশারফ পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, ওয়াশিংটন বিশাল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে মূলত তাঁকে কিনেই নিয়েছিল। তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একনায়কদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসে। সেখানে জনমত বা গণমাধ্যম নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমরা আসলে মোশারফকে একরকম কিনেই নিয়েছিলাম।” কিরিয়াকু বলেন, “আমরা লাখ লাখ ডলার সাহায্য দিয়েছিলাম – সামরিক ও অর্থনৈতিক এবং তার বদলে মোশারফ আমাদের যা খুশি, তা-ই করতে দিয়েছিলেন।”

মোশারফ দ্বিমুখী খেলা খেলেছিলেন

প্রাক্তন সিআইএ কর্তা আরও বলেন, “মোশারফ দ্বিমুখী খেলা খেলেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে আমেরিকার পাশে দাঁড়ালেও, গোপনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও জঙ্গি সংগঠনগুলিকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।” তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আল-কায়েদাকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত ছিল না, তারা চিন্তিত ছিল ভারতের ব্যাপারে। মোশারফ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বের ভান করতেন, অথচ ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে যেতেন (Pakistan)।”

বড় নীতিগত ভুল

কিরিয়াকু (John Kiriakou) জানান, সৌদি আরব হস্তক্ষেপ করায় আমেরিকা পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানকে নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। সৌদিরা পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার জনককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করেছিল। তিনি বলেন, “যদি আমরা ইজরায়েলের মতো পথ অবলম্বান করতাম, তাহলে আমরা তাঁকে হত্যা করতাম। তাঁকে খুঁজে পাওয়া খুব সহজ ছিল। কিন্তু সৌদিরা এসে বলল, ‘দয়া করে তাঁকে ছেড়ে দিন। আমরা একিউ খানকে পছন্দ করি। আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করছি।’” একে তিনি একটি বড় নীতিগত ভুল বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “হোয়াইট হাউস সিআইএ এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছিল যেন তারা খানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করে। এটা নিশ্চিতভাবেই সৌদিদের চাপের কারণেই হয়েছিল।”

বিনিয়োগের প্রতিদান চাইছে!

কিরিয়াকুর (John Kiriakou) দাবি, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে খানকে রক্ষা করার কারণ তাদের নিজস্ব পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তিনি ইঙ্গিত দেন, রিয়াধ দীর্ঘমেয়াদে একটি সমান্তরাল পারমাণবিক সক্ষমতা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছিল। তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই ভাবতাম, সৌদিরাও কি নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা তৈরি করছে না?” তিনি এই পর্যবেক্ষণকে সাম্প্রতিক সৌদি–পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তির সঙ্গে যুক্ত করেন। তাঁর ইঙ্গিত, রিয়াধ হয়তো এখন তাদের বিনিয়োগের প্রতিদান চাইছে (Pakistan)।

আমেরিকার বিদেশনীতির ভণ্ডামি

কিরিয়াকু আমেরিকার বিদেশনীতির ভণ্ডামির সমালোচনা করে বলেন, “ওয়াশিংটন বেছে বেছে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়, অথচ স্বচ্ছন্দে একনায়কদের সঙ্গে কাজ করে। আসলে আমরা নিজেদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বাতিঘর হিসেবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসি। কিন্তু এটি সত্য নয়। আমরা যা করি, তা আমাদের তাৎক্ষণিক স্বার্থেই করি।”

মার্কিন-সৌদি সম্পর্ক লেনদেনভিত্তিক

তাঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে (John Kiriakou) সৌদির সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপেই লেনদেনভিত্তিক। তিনি বলেন, “সৌদি আরবে আমাদের বিদেশনীতি খুবই সহজ। আমরা তাদের কাছ থেকে তেল কিনি, আর তারা আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে।” কিরিয়াকু মনে করিয়ে দেন, এক সৌদি প্রহরী তাঁকে বলেছিল, “তুমি ভাড়াটে কর্মচারী। আমরা টাকা দিয়ে তোমায় এনেছি, যাতে তুমি এসে আমাদের রক্ষা করো।” কিরিয়াকু বলেন, “বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য এখন পরিবর্তনের পথে। কারণ সৌদি আরব, চিন ও ভারত নিজেদের কৌশলগত ভূমিকা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে (Pakistan)।” তিনি বলেন,
“আমরা তেলের সমুদ্রে বসে আছি। আমাদের আর সৌদিদের প্রয়োজন নেই। তারা এখন তাদের সম্ভাবনা বিবেচনা করে চিন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছে। আমরা আসলে বিশ্ব পরিচালনার এক নয়া রূপান্তর প্রত্যক্ষ করছি (John Kiriakou)।”

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share