Bangladesh Concert Vandalized: সংস্কৃতির ঠাঁই নেই ইউনূসের বাংলাদেশে! ছায়ানট, উদীচীর পর হামলা জেমসের কনসার্টে

bangladesh singer james concert vandalized muslim mob attacks music stage with stones and bricks

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নতুন বাংলাদেশে শিল্প-সংস্কৃতির কোনও ঠাঁই নেই। চলছে শুধু মৌলবাদীদের তাণ্ডব। শুধু ভারতীয় নয়, এবার বাংলাদেশি শিল্পীরাও হামলার মুখে। ইসলামি কট্টরপন্থীদের কাছে সঙ্গীত নাকি ‘হারাম’। এর আগে তাই বাংলাদেশে ছায়ানট থেকে উদীচীতে হামলা হয়েছে। এবার ফরিদপুরে জনপ্রিয় গায়ক জেমসের কনসার্টে হামলা হল। এই হামলায় অন্তত ৩০ জন জখম হয়েছন বলে জানা গিয়েছে।

জেমসের অনুষ্ঠানে ইট বৃষ্টি

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা বিদ্যালয়ের ১৮৫ তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে গিয়েছিলেন জেমস ও তাঁর ব্যান্ড। সেখানে হঠাৎ হামলা চালায় কিছুজন। ছোড়া হয় পাথর। আহত হয় বেশ কয়েকজন। এরপরই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, একদল মানুষ জেমসের অনুষ্ঠান দেখার জন্য স্কুলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। বাধা দিতেই ইট পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এরপর হামলাকারীরা ঢুকে সোজা জেমসের স্টেজ দখল করার চেষ্টা করে, এমনটাই দাবি আয়োজকদের। ইট বৃষ্টি থেকে কোনওমতে রক্ষা পান জেমস।

জেমসের কনসার্ট বাতিল

অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বেনজীর আহমেদ তাবরিজ বলেন, নগর বাউল জেমসের গান শুনতে আসা বহিরাগত দর্শকরা গান শুনতে স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারায় তারা বাইরে থেকে ইট ছোড়ায় জেমসের সংগীতানুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। এতে কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমসহ ২৫-৩০ জন আহত হন বলেও জানান তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, বহিরাগতদের ঢুকতে না দেওয়ায় হালকা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শেষ পর্যন্ত জেমসের কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে।

মঞ্চ দখল করে সেখানে ভাঙচুর কেন

ঘটনাটিকে ‘হালকা’ করে দেখানোর জন্য আয়োজকদের তরফ থেকে পরে গভীর রাতে দাবি করা হয়, অনুষ্ঠানস্থলে না ঢুকতে পেরেই নাকি এই হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। যদিও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে দুটো বড় স্ক্রিনে জেমসের গান দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিকে, যদি অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকাই উদ্দেশ্য হবে, তাহলে মঞ্চ দখল করে সেখানে ভাঙচুর কেন হয়? এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বাংলাদেশির দাবি, এটা জামাতপন্থীদের হামলা ছিল। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-অগস্টের সেই ‘বিপ্লবে’ জেমস শেখ হাসিনার বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছিলেন। তবে ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশে এবার তাঁর কনসার্ট পণ্ড হল।

সাংস্কৃতিক কর্মী থেকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আক্রমণ

২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুরের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে স্কুলে জেমসের নগর বাউল ব্যান্ডের সংগীত পরিবেশনের কথা ছিল। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্কুল চত্বর ছিল সরগরম। এরই মাঝে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় জেমসের কনসার্ট। বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে একের পর সাংস্কৃতিক কর্মী থেকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনায় চারিদিকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জুলাই আন্দোলনের পরই জলের গানের সঙ্গীত শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে কয়েকদিন আগে হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ছায়ানট, উদিচীর মত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মত বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমও। আর এবার অশান্ত বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের টার্গেটে জেমসের কনসার্ট। কট্টরপন্থিদের নিশানায় এবার বাংলার রকস্টার জেমস। হামলাকারীদের মূল দাবি ছিল কোনও ধরনের সঙ্গীত অনুষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।

উদ্বিগ্ন জেমসের ভারতীয় ভক্তরাও

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ‘বহিরাগত’ তাণ্ডবে আহত অন্তত ১৫ থেকে ২৫ জন ছাত্র। জানা গিয়েছে, হামলা চালালেও শেষপর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে বাধা পেয়ে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন ওই আক্রমণকারীরা। শিল্পীর শারীরিক কোনও ক্ষতি হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলে আক্রমণের ভিডিও আপলোড করে দীপ হালদার নামের একজন এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, জমায়েত করা ওই ব্যক্তিরা চায় না বাংলাদেশে কোনও সঙ্গীত বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক। সমাজমাধ্যমে তিনি আরও লিখেছেন, শিল্পী কোনওমতে ওই অঞ্চল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। ভারতীয় পরিচালক অনুরাগ বসুর ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’ চলচ্চিত্রে ‘আলবিদা’ গান গেয়েছিলেন জেমস। হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন তাঁর ভারতীয় ভক্তেরাও।

সমালোচনার ঝড় সাংস্কৃতিক মহলে

ঘটনাটি সামনে এনে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “ছায়ানটের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল চেতনা গড়ে তোলার জন্য তৈরি উদীচীও ভস্মীভূত হয়েছে। আজ জিহাদিরা প্রখ্যাত শিল্পী জেমসকে মঞ্চে উঠতে দেয়নি।” তসলিমা নাসরিন আরও উল্লেখ করেন, কয়েকদিন আগে আলী আকবর খানের নাতি শিল্পী সিরাজ আলি খান ঢাকায় এসেও কোনও অনুষ্ঠান না করেই ভারতে ফিরে গিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, শিল্পী, সংগীত ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ না হলে তিনি আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। একইভাবে, ওস্তাদ রশিদ খানের পুত্র আরমান খানও সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন বলে জানান তসলিমা। উল্লেখ্য, জেমস বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক-গীতিকার ও সুরকার। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। হিন্দি ছবির ‘গ্যাংস্টার’ ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ র মত একাধিক ছবিতে তিনি একের পর এক জনপ্রিয় গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন। তাঁর কনসার্টে হামলার ঘটনা বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির বাড়বাড়ন্তের জলন্ত ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সমালোচকদের অভিযোগ, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ । তাঁদের মতে, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share