Calcutta Stock Exchange: বন্ধ হয়ে গেল শতাব্দী-প্রাচীন কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ, কারণ কি জানেন?

Calcutta stock exchange closing down after 117 years explaination

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এক সময় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পাঙ্গা নিত কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ (Calcutta Stock Exchange)। সেখানেই এখন ঝুলল তালা। বহু বছরের আইনি ও নিয়ন্ত্রক জটিলতার পর এটি এবার শেষবারের মতো (Shut Down) কালীপুজো ও দীপাবলি উদযাপন করল। ২০ অক্টোবর স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেল ১১৭ বছর বয়সি কলকাতার এক সময়ের গর্ব এই স্টক এক্সচেঞ্জ। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) হল ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ২০১৩ সালে নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থতার জেরে এই সেবি-ই সিএসইতে লেনদেন স্থগিত করে দিয়েছিল। গত দশ বছর ধরে লেনদেন ফের চালু করা এবং সেবির নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করার নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, শেষমেশ ঝাঁপ ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এক্সচেঞ্জটি।

সেবির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ (Calcutta Stock Exchange)

আগে যদিও সিএসই আদালতের মাধ্যমে সেবির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনা করেছিল, তবে গত বছর পর্যন্ত কোনও অনুকূল রায় মেলেনি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সিএসই বোর্ড সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টে চলতে থাকা মামলাগুলি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা স্বেচ্ছায় কার্যকলাপ বন্ধের আবেদন করে। সিএসইর চেয়ারম্যান দীপঙ্কর বসু বলেন, “স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসা থেকে প্রস্থান সংক্রান্ত অনুমোদনটি ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের কাছে গৃহীত হয়েছে। সেই অনুযায়ী সিএসই সেবির কাছে এক্সচেঞ্জ বন্ধ সংক্রান্ত আবেদন জমা দিয়েছে। সেবি ইতিমধ্যেই একটি মূল্যায়ন সংস্থা নিয়োগ করেছে, যা বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যায়নের কাজ করছে (Closing Down)।”

হোল্ডিং কোম্পানি

জানা গিয়েছে, যদি সেবি প্রত্যাহারের অনুমতি দেয়, তবে সিএসই একটি হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবেই থাকবে, যদিও তার সহযোগী সংস্থা সিএসই ক্যাপিটেল মার্কেটস প্রাইভেট লিমিটেড জাতীয় শেয়ারবাজার এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন চালিয়ে যাবে (Calcutta Stock Exchange)। ইএম বাইপাসে সিএসইর তিন একর জমি সৃজন গ্রুপের কাছে ২৫৩ কোটি টাকায় বিক্রির প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে সেবি। সেবির চূড়ান্ত অনুমোদনের পরেই সম্পন্ন হবে এই কাজ। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ। একসময় এটি ছিল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিদ্বন্দ্বী। এটি কলকাতার আর্থিক ইতিহাসের একটি প্রতীক। লায়ন্স রেঞ্জ এলাকার আর্থিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল এটি। সিএসইর সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে ২০১৩ সালে, যখন সেবি তাদের ট্রেডিং কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক্সচেঞ্জটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম লঙ্ঘন করেছিল। যার জেরে এই পদক্ষেপ করে সেবি (Shut Down)।

আদালতের দ্বারস্থও হয়েছে

এরপর সংস্থাটি একাধিকবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য। তবে তাতে কোনও লাভ হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক চাপের বহর, কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সিএসইতে ঝাঁপ পড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল, প্রাসঙ্গিকতা হারানো। এই সংস্থা এঁটে উঠতে পারেনি বিএসই এবং এনএসইর সঙ্গে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে ডট কম বুমের পর থেকে সিএসই ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। প্রযুক্তি-নির্ভর আর্থিক খাতের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এই শেয়ার বাজারটি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে।

শেয়ার ব্রোকার কেতন পারেখ

এই এক্সচেঞ্জ বন্ধের কফিনে শেষ পেরেকটি সম্ভবত পোঁতা হয় ২০০১ সালে, পেশায় শেয়ার ব্রোকার কেতন পারেখের হাতযশে। সংস্থার আইনি ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেন পারেখ। ফলে কঠোর নিয়মকানুন আরোপিত হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। সময়ের সঙ্গে নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়াই শেষ পর্যন্ত কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অভিজ্ঞ স্টকব্রোকার সিদ্ধার্থ থিরানি বলেন, “আমরা প্রতিদিনের লেনদেন শুরু করতাম দেবী লক্ষ্মীর প্রার্থনা করে। এভাবেই চলেছিল ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত, যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা লেনদেন স্থগিত করে। এবারের দীপাবলি সেই ঐতিহ্যের বিদায়ের মতো মনে হচ্ছে (Calcutta Stock Exchange)।”

ভারতের মূলধন বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সেবির কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল সংস্থা বন্ধের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব। ২৫ এপ্রিল সেই প্রস্তাব অনুমোদিত হয় শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা। এই প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ সম্পূর্ণ করার জন্য সেবি নিয়োগ করে রাজবংশী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে। এটি হল কোনও একটি এক্সচেঞ্জকে তালাবন্ধের অনুমোদন দেওয়ার আগে শেষ ধাপ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রতিবেদনে সংস্থার চেয়ারম্যান বসু বলেছিলেন, “১,৭৪৯টি তালিকাভুক্ত ব্যবসা ও ৬৫০ জন নিবন্ধিত সদস্য নিয়ে এই এক্সচেঞ্জটি ভারতের মূলধন বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।” ওই অর্থবর্ষে পরিচালক হিসেবে সভায় অংশগ্রহণের জন্য (Shut Down) তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৫.৯ লাখ টাকা। কর্মীদের ভিআরএস দিয়ে এবং কিছু কর্মীকে চুক্তিভিত্তিকভাবে রেখে কোনওক্রমে চলছিল সংস্থাটি। এবার সেখানেই পড়ল ঝাঁপ। হ্যাঁ, চিরতরে (Calcutta Stock Exchange)।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share