মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সিবিএসই (CBSE) সম্প্রতি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস প্রকাশ করল। এই সদ্য প্রকাশিত পাঠ্যক্রমে বিস্তারিতভাবে শিক্ষাবর্ষের সম্পূর্ণ কার্যক্রম (CBSE Syllabus) উল্লিখিত রয়েছে। ২০২৬ সালের সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষার জন্য কী কী জরুরি, কী কী বদল আসছে নিয়মে তা সবই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এখানে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমূল বদল আনছে সিবিএসই। এবার থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা বছরে দু’বার বোর্ড পরীক্ষা (CBSE) দিতে পারবেন। একটি হবে ফেব্রুয়ারি মাসে এবং আরেকটি হবে এপ্রিলে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নিয়ম চালু হতে চলেছে।
বিস্তারিত জানবেন কোথা থেকে
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির (৯, ১০, ১১ এবং ১২) পাঠ্যক্রম ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা বোর্ডের একাডেমিক ওয়েবসাইট cbseacademic.nic.in থেকে সিবিএসই নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম দেখে নিতে পারেন। ২০২৬ সালের সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষার জন্য কী কী জরুরি, কী কী বদল আসছে নিয়মে তা সবই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এখানে। ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক (NCF) ২০২৩-এর সুপারিশ অনুসারে স্কুলগুলিকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার চাহিদা পূরণের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং নমনীয় শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বোর্ড। এতে আরও বলা হয়েছে যে স্কুলগুলিকে শিক্ষাকে আরও আকর্ষক এবং অর্থবহ করার জন্য প্রোজেক্ট-ভিত্তিক শিক্ষা, রিসার্চ-চালিত পদ্ধতি এবং প্রযুক্তি-সক্ষম শিক্ষার উপর জোর দেওয়া উচিত।
দশম শ্রেণির সিলেবাসে কী কী বদল
গ্রেডিং সিস্টেম: ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে ৯ পয়েন্ট গ্রেডিং সিস্টেমের কথা। এর মাধ্যমে নম্বরকে সহজেই গ্রেডে রূপান্তর করা হবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য বোর্ড পরীক্ষা হবে ৮০ নম্বরের, এর সঙ্গে বাধ্যতামূলক বিষয়ও রয়েছে। আর এর সঙ্গে ২০ নম্বর থাকবে শিক্ষার্থীদের আভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য। এতে পাশ করতে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
স্কিল-বেসড বিষয়: পড়ুয়ারা তিনটি স্কিল-বেসড বিষয়ের ক্ষেত্রে যে কোনও একটি বেছে নিতে পারবেন– কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এছাড়া নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি অথবা হিন্দি যে কোনও একটি ভাষা বেছে নিতে হবে।
কোর বিষয়: সিবিএসই জানিয়েছে, যদি কোনও ছাত্র-ছাত্রী একটি কোনও কোর বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, যেমন গণিত, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান কিংবা ভাষার কোনও পেপারে, কিন্তু কোনও স্কিল বিষয়ে বা ঐচ্ছিক বিষয়ে পাশ করে থাকেন, তাহলে যে বিষয়ে ফেল করেছে পড়ুয়া তার বদলে রেজাল্ট গণনার সময় পাশ করা বিষয়গুলি বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস
২০২৬ সালে যারা দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দেবেন, তাদেরকেও ৯ পয়েন্টের গ্রেডিং সিস্টেমে মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া চারটি নতুন স্কিল ইলেক্টিভ বিষয় যুক্ত হয়েছে পাঠ্যক্রমে। এর মধ্যে রয়েছে ল্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাসোসিয়েট, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি ট্রেনার, ডিজাইন থিঙ্কিং, ইনোভেশন। তবে ইনফরমেটিক্স প্র্যাক্টিসেস, কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি এই তিনটি বিষয়ের ক্ষেত্রে যে কোনও একটি বিষয় বেছে নেবেন শিক্ষার্থীরা। দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে ৭টি প্রধান শিখন ক্ষেত্র রয়েছে- ভাষা, কলাবিদ্যা, গণিত, বিজ্ঞান, স্কিল বিষয়, জেনারেল স্টাডিজ, স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা।
নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এবার থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমল বদল এনেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা এবার থেকে দু’বার বোর্ড পরীক্ষা (CBSE) দিতে পারবেন। যার মধ্যে একটি হবে ফেব্রুয়ারি মাসে আর অপরটি হবে এপ্রিলে। এই নিয়ম চালু হতে চলেছে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই। তবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বছর একবার করেই আয়োজিত হবে। ২০২৬ সালে সিবিএসইর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখ থেকে। বোর্ড অনুমান করছে ২০২৬ সালে মোট ২০ লক্ষ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষা দিতে চলেছে।
কেন এই পরিকল্পনা
ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (NEP) ২০২০-র সুপারিশ মেনে, বছরে দু’বার বোর্ড পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর ফলে প্রথমবার পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না হলে, দ্বিতীয়বার সেই বিষয়ে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফের পরীক্ষায় বসা যাবে। প্রথম পরীক্ষার পরই হাতে মার্কশিট পাওয়া যাবে না। ডিজি লকার থেকে প্রাপ্ত নম্বর ব্যবহার করে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ থাকবে। তবে চূড়ান্ত রেজাল্ট দ্বিতীয় পরীক্ষার পর প্রকাশিত হবে। যদি কোনও শিক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষার পর রেজাল্ট দেখে সন্তুষ্ট থাকেন, তবে তার দ্বিতীয় পরীক্ষায় বসার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ, চাইলে দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য ‘অপ্ট-আউট’ করার সুযোগও থাকছে। পড়ুয়াদের উপর চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পরীক্ষার নম্বরের উপরে নির্ভরশীল না থেকে এখন পড়ুয়ারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে।
Leave a Reply