মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে মন্থা (Cyclone Montha)। বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে স্থলভাগের দিকে আসতে আসতে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে আরও শক্তি বেড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। মঙ্গলবার সন্ধ্যা বা রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে ১১০ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এর প্রভাবে অন্ধ্র এবং ওড়িশার উপকূলে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা৷ তবে বাদ যাবে না বাংলাও ৷ ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে বঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর ৷ সেই সঙ্গে ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷
অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব
অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্যোগ শুরু হয়েছে ওড়িশা এবং তামিলনাড়ুতেও। অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে ১৯টি জেলায় ঝড়বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন জেলায় দুর্যোগের কমলা সতর্কতা এবং চার জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা এবং রাতের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মাঝে কোথাও আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণি। ওই সময় মন্থার সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু জানিয়েছেন, সে রাজ্যের ৩,৭৭৮টি গ্রামে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী কিছু এলাকাতেও। সেখানেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে প্রশাসন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দর থেকে বেশ কিছু উড়ান বাতিল করা হয়েছে।
সতর্কতা ওড়িশায়
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে ওড়িশার দক্ষিণ ভাগের আট জেলায়। ওড়িশার গঞ্জাম, গজপটি, কোরাপুট, রায়গড় এবং মালাকানগিরি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই জেলাগুলিতেও দুর্যোগের লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। এ ছাড়া পুরী-সহ ওড়িশার ১১ জেলায় জারি রয়েছে ঝড়বৃষ্টির কমলা সতর্কতা। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। দুর্যোগ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আগে দুই রাজ্যেই নিচু এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করেছে প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব কতটা
রাতের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলাতেও। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী দুই জেলা— দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে বইতে পারে দমকা হাওয়াও। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৷ বেশ কয়েকটি জেলায় হতে পারে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টিও ৷ ঘূর্ণিঝড়ের পরোক্ষ প্রভাব থাকায় বাংলার উপকূলবর্তী এলাকার জেলা প্রশাসনকে ইতিমধ্যেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷
জেলায় জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ও মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। আজ, মঙ্গলবারের মধ্যে বাংলার উপকূলে মৎস্যজীবীদের ফিরে আসতে নির্দেশ। আগামিকাল ২৮ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলার উপকূলে সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা মৎস্যজীবীদের। উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে অতি ভারী বৃষ্টি অর্থাৎ ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ওই দিন ভারী বৃষ্টি হবে মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরেও। ৩০ অক্টোবর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা মালদা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ি জেলাতে। ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। উপকূলের জেলা দিয়ে শুরু হয়ে উত্তরবঙ্গ লাগোয়া জেলা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে হবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে।
কলকাতায় মন্থার প্রভাব
কলকাতায় আজ, মঙ্গলবার সকালে ঝলমলে আকাশ। পরে আংশিক মেঘলা আকাশ। বিকেলের দিকে মেঘলা আকাশ এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা। আজ, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি কলকাতাতে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বইবে।
বন্ধ বিমান ও রেল পরিষেবা
মন্থার কারণে ওড়িশা এবং বিশাখাপত্তনমের মধ্য দিয়ে যাওয়া ৩২টি দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এই নিয়ে ভুবনেশ্বরের ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা (সিপিআরও) দীপক রাউত এএনআইকে বলেন, ‘যাত্রীরা যাতে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য আমরা বিশাখাপত্তনমের মধ্য দিয়ে যাওয়া ৩২টি ট্রেন বাতিল করেছি। আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি; এদিকে লোকাল মেমু এবং অন্যান্য ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বাতিল ট্রেনের তালিকা সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা হয়েছে… ডাইভারশনের বিষয়ে, টাটানগর-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেসের পথ পরিবর্তন করা হয়েছে এবং দুটি ট্রেনকে সংক্ষিপ্তভাবে থামানো হয়েছে- ভুবনেশ্বর-জগদলপুর এক্সপ্রেস এবং রাউরকেলা-জগদলপুর এক্সপ্রেস।’এছাড়া ইস্ট কোস্ট রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশাখাপত্তনম- তিরুপতি, বিশাখাপত্তনম-চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম- কিরণদুল, বিশাখাপত্তনম-কোরাপুট রুটে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে ৬৫টিরও বেশি লোকাল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করেছে রেল। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মন্থার কারণে মঙ্গলবার অন্ধ্রপ্রদেশের গন্নাভরম বিমানবন্দরে ৩০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাখপত্তনম বিমানবন্দর থেকেও মঙ্গলবারের জন্য সমস্ত ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করা হয়েছে।

Leave a Reply