Déjà Vu: শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পর এবার নেপাল, দুবাই পালানোর প্রস্তুতি অলির!

Déjà vu in Nepal after sri lanka Bangladesh violent

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের পর এবার উত্তপ্ত ভারতের আরও এক পড়শি দেশ নেপাল (Déjà Vu)। প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন কেপি শর্মা অলি। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে নিহত হন ১৯জন তরুণ (Nepal)। আন্দোলনকারীদের রোষের আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহাল ওরফে প্রচণ্ডর বাড়ি। ভাঙচুর করা হয়েছে শের বাহাদুর দেউবার বাড়ি। পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁর তিন মন্ত্রীকে।

দুবাই পালানোর প্রস্তুতি! (Déjà Vu)

জানা গিয়েছে, চিকিৎসার নাম করে দেশ ছেড়ে দুবাই পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অলি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই দৃশ্য নতুন নয়। ২০২২ সালে এমন আন্দোলন শুরু হয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। তার ঠিক দুবছর পরে আন্দোলনকারীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। এই নাটকেরই তৃতীয় অঙ্ক শুরু হয়েছে নেপালে।

প্রথমে আগুন জ্বলে শ্রীলঙ্কায়

২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রথম বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করল শ্রীলঙ্কায়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবনে ঢুকে তাঁকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তাঁর পুলে শ্রীলঙ্কাবাসীর সাঁতার কাটার ছবি এবং তাঁর রান্নাঘরে রান্না করার দৃশ্য বিশ্বজুড়ে চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। “আরাগালয়া” (সংগ্রাম) আন্দোলন শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া পরিস্থিতির মধ্যে একটি রাজনৈতিক রাজবংশের পতন ঘটিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে দুই নেতাকে।

“বাংলা স্প্রিং”

দুবছর পরে ২০২৪ সালের অগাস্টে বাংলাদেশ তার নিজস্ব “বাংলা স্প্রিং”-এর সাক্ষী হল। প্রতিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল একটি বিতর্কিত চাকরির কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন হিসেবে। দ্রুত তা দেশব্যাপী হিংসায় পরিণত হয়। ৫ অগাস্ট পতাকা হাতে প্রতিবাদকারীরা স্লোগান দিয়ে চিৎকার করছিল, দখল নেওয়া ট্যাংকের ওপরে উঠে নাচছিল এবং শেষমেশ শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে ঢোকে। তার আগেই অবশ্য বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসেন হাসিনা। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান তাঁর পদত্যাগ নিশ্চিত করেন। দেশের রাশ হাতে যায় অন্তর্বর্তী সরকারের। জানা গিয়েছে, হাসিনার হেলিকপ্টার আগরতলায় অবতরণ করে। কারণ নয়াদিল্লি তাঁকে জরুরি প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছিল। প্রতিবাদকারীরা তাঁর বাসভবন ভেঙে লুটপাট করে সমস্ত জিনিসপত্র। ঘটনাটিকে তারা “অবৈধভাবে নাগরিক হত্যা আদেশ জারি করার স্থান থেকে প্রাসাদ পুনঃঅধিকার” বলে অভিহিত করল। হিংসার মাত্রা ছিল আকাশ ছোঁওয়া। মাত্র এক রবিবারেই ৯১ জন নিহত হন। জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর অগাস্টের প্রথম দিকে অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয় (Nepal)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন হাসিনার ছেলে সাজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুরোধ করেন তাঁর মায়ের ১৫ বছরের সরকারের পতন রোধ করার জন্য। ফেসবুকে তিনি লেখেন, “আপনাদের আমাদের মানুষ ও দেশকে নিরাপদ রাখতে হবে এবং সংবিধান রক্ষা করতে হবে।” যদিও সেনা ২০০৭ সালের মতো অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সেবারের মতো এবারও বেছে নেয় জনতার পাশে দাঁড়ানোর পথ (Déjà Vu)।

নেপালেও শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের প্রতিধ্বনি!

ফেরা যাক ২০২৫ সালে। কাঠমাণ্ডুতে (নেপালের রাজধানী) এখন ঝংকৃত হচ্ছে কলম্বো (শ্রীলঙ্কার রাজধানী) ও ঢাকার (বাংলাদেশের রাজধানী) সুর। প্রতিবাদকারীরা শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, কারফিউ ভেঙেছে। দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে উত্তাল করেছে দেশ। অলি, যাঁকে এক সময় অটল মনে করা হত, তিনিও এখন হাসিনা এবং রাজাপক্ষের মতো কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই তিন দেশেই আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত এক। শ্রীলঙ্কায় এর সূচনা হয়েছিল অর্থনৈতিক দেউলিয়া থেকে, বাংলাদেশে তা ছিল বিতর্কিত চাকরি কোটা ব্যবস্থা, আর নেপালে সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা (Nepal)। এই তিনটি দেশের অশান্তিতে অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। কলম্বোয় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস আক্রমণ, ঢাকায় শেখ হাসিনার বাসভবনে লুটপাট, এবং ভক্তপুরে কেপি শর্মা ওলির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ (Déjà Vu)।

তামাম বিশ্ব এগুলিকে গণতান্ত্রিক বিপ্লব আখ্যা দিচ্ছে। কিন্তু এই অঞ্চলের জন্য এগুলি আসলে অস্থিরতার একটি চক্র এবং বহিরাগত প্রভাবিত রূপান্তরের প্রতীক। তাই নেপালের সংকট কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ অধ্যায় মাত্র (Déjà Vu)।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share