মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আইআইটি রুরকি (IIT Roorkee) বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) মডেল তৈরি করেছে, যা ঐতিহাসিক মোদি লিপিকে দেবনাগরী লিপিতে রূপান্তর করতে পারে। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক স্পর্শ মিত্তল। এটি কেবল প্রযুক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ, ভারতের বিস্মৃত ভাষাতাত্ত্বিক (Devanagari) ঐতিহ্যের এক ডিজিটাল পুনর্জন্ম, এবং ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’, ‘ভাষিণী’, ‘ভারত জিপিটি’, ও ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর মতো জাতীয় উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
দুটি শক্তিশালী উপকরণ (IIT Roorkee)
এই উদ্যোগের মূল দুটি শক্তিশালী উপকরণ হল ১) মোদি স্ক্রিপ্ট কনভার্সান নেটওয়ার্ক (এমওএসসি)। এটি একটি একটি উন্নত ভিশন-ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল, যা প্রচলিত অপটিকাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর) টুলগুলোর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এবং ২) মোদি দেবনাগরী ট্রান্সলিটারেটেড ডেটাসেট। এটি হল মোদি লিপিতে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির প্রথম এবং একমাত্র ব্যাপক ডেটাসেট, যেখানে প্রামাণ্য দেবনাগরী প্রতিলিপি যুক্ত রয়েছে। প্রসঙ্গত, এই দুটি টুলই হাগিং ফেস প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বিশ্বব্যাপী গবেষক, ডেভেলপার ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি এই উদ্ভাবনের ওপর ভিত্তি করে আরও গবেষণা ও উন্নয়ন চালাতে পারে। এটি প্রাচীন ভাষা বিষয়ক এআইয়ের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ।
মোদি লিপি
মোদি লিপি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পদবির সঙ্গে বিভ্রান্ত হবার মতো নয়। এটি একটি আধা-সাঁড়াশি ধরণের লিপি যা ঐতিহাসিকভাবে মহারাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্য ও পশ্চিম অংশে ব্যবহৃত হত। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের শাসন কালে জারি করা রাজকীয় ফরমান, পেশওয়াদের আমলের প্রশাসনিক নথিপত্র, এবং ব্রিটিশ শাসনের সময় ভূমি ও আইনি রেকর্ড – সব কিছুর জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দী এই মোদি লিপিই ছিল সরকারিভাবে স্বীকৃত ভাষা (IIT Roorkee)। তবে এত সমৃদ্ধ ব্যবহার থাকা সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক শাসকরা দেবনাগরী (Devanagari) ও ইংরেজি চাপিয়ে দেওয়ায় মোদি লিপির ব্যবহার কমে যায়। ধীরে ধীরে এই লিপির চর্চাও প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যায়। বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি মোদি লিপিতে লেখা নথি দেশে বিভিন্ন আর্কাইভ, মন্দির, ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং সরকারি দফতরে পড়ে রয়েছে। এর অধিকাংশই অপঠিত, কারণ দক্ষ পাঠকের অভাব রয়েছে।
কী বললেন প্রধান গবেষক?
এই প্রেক্ষাপটেই এসেছে মোদিএসসিনেট। সর্বাধুনিক ভিশন-ল্যাঙ্গুয়েজ এআই ব্যবহার করে নির্মিত এই মডেলটি হাতে লেখা মোদি অক্ষরকে চিনতে পারে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে তা বুঝে যথাযথভাবে দেবনাগরীতে রূপান্তর করতে পারে। সাধারণ ওসিআর সিস্টেম যেখানে হাতে লেখা, অলঙ্করণযুক্ত বা পুরোনো ক্ষয়প্রাপ্ত লেখার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, সেখানে মোদি লিপির গতি, শৈল্পিক বৈচিত্র্য এবং সাঁড়াশি প্রকৃতিকে চমৎকার নিখুঁতভাবে সামলাতে পারে। আইআইটি রূরকির প্রধাণ গবেষক তথা প্রকল্পের প্রধান অধ্যাপক স্পর্শ মিত্তল বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ট্রান্সলিটারেশন সরঞ্জাম নয়। এটি একটি যন্ত্র, যা কালি ও কালের মাঝে চাপা পড়া সভ্যতার জ্ঞানকে উন্মোচন করতে সক্ষম, আর্কাইভে সংরক্ষিত, হারিয়ে যাওয়া উপভাষায় লুকিয়ে থাকা ঐতিহ্যকে জাগিয়ে তুলতে পারে।” তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি এআই তৈরি করছি, যা ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, উত্তরাধিকারকে (Devanagari) বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং ভারতীয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায় উন্মোচনের পথ খুলে দেয় (IIT Roorkee)।”
প্রযুক্তির ভিত্তি
গবেষকরা শুধু একটি মডেল তৈরি করেই থেমে থাকেননি, তাঁরা এই প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছেন মোদিট্রান্স নামের একটি বিশেষভাবে সংগৃহীত, উচ্চমানের ডেটাসেটের মাধ্যমে, যা প্রামাণিক মোদী লিপিতে লেখা ২০০০-রও বেশি স্ক্যান করা পাণ্ডুলিপির ছবি নিয়ে গঠিত। এই পাণ্ডুলিপিগুলি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল, শিবকালীন (১৭শ শতাব্দী) – ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সময়কাল, পেশওয়াকালীন (১৮শ শতাব্দী)- পেশওয়া প্রশাসনের অধীনে এবং আঙ্গলকালীন (১৯শ শতাব্দী) – ব্রিটিশ শাসনের সময়। প্রতিটি পাণ্ডুলিপির সঙ্গে অভিজ্ঞ ভাষাবিদদের দ্বারা যাচাই করা দেবনাগরী লিপ্যন্তর যুক্ত রয়েছে, যা এটিকে শুধুই একটি প্রযুক্তিগত উপাদান নয় বরং বিপুল মূল্যমানের একটি ভাষাগত ঐতিহ্য-ভান্ডারে পরিণত করেছে। গবেষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে এমন একটি টুল, যা একদিকে অ্যাকাডেমিক কড়াকড়ি বজায় রাখে, অন্যদিকে ব্যবহারিক প্রয়োগে উপযোগী, ঐতিহ্য সংরক্ষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এক বিরল কৃতিত্ব (IIT Roorkee)।
একাধিক প্রধান মিশনের সঙ্গে যুক্ত
এই এআই মডেলটি ভারতের একাধিক প্রধান মিশনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এগুলি হল, ডিজিটাল ইন্ডিয়া – লক্ষ (Devanagari) লক্ষ প্রাচীন পান্ডুলিপিকে যন্ত্র-পঠনযোগ্য রূপে রূপান্তর করে ডিজিটালকরণে সহায়তা করছে। ভাষিণী – বহু-ভাষিক ভাষা প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমর্থন জোগাচ্ছে। ভারতজিপিটি– ভারতীয় প্রসঙ্গকে ভিত্তি করে বৃহৎ ভাষা মডেল গঠনের ভিত্তি তৈরি করছে। এবং ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন মিশন– আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ এবং লিপ্যন্তরের মাধ্যমে ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক। বৈশ্বিক পর্যায়ে এই উদ্যোগটি রাষ্ট্রসংঘের মজবুত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১১.৪-কে সরাসরি সমর্থন করে- বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও রক্ষার প্রচেষ্টা জোরদার করা (IIT Roorkee)।
যখন জলবায়ু পরিবর্তন, সময় এবং অবহেলা প্রাচীন নথিগুলোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে, তখন এই ধরনের এআই ভিত্তিক কাঠামো বিশ্বব্যাপী প্রয়োগযোগ্য হতে পারে। এই টুলের মাধ্যমে তামিলনাড়ুর সংস্কৃত (Devanagari) গ্রন্থ লিপি হোক বা লাদাখের তিব্বতি পান্ডুলিপি, কিংবা খেমার, পালি ও থাই ভাষার শিলালিপি – সব ক্ষেত্রেই এআই সাহায্য করতে পারে (IIT Roorkee)।
Leave a Reply