মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় আফগানিস্তান সম্পর্কে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রইল ভারত (India)। নয়াদিল্লির প্রতিনিধি সাফ জানিয়ে দেন, আগের মতো কাজ চালিয়ে যাওয়া পদ্ধতি সম্ভবত সেই ফল এনে দেবে না, যা বৈশ্বিক সম্প্রদায় আফগান (Taliban) জনগণের জন্য কল্পনা করে।
জার্মানির খসড়া প্রস্তাব (India)
রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৯৩। সেখানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে গ্রহণ করা হয় জার্মানির প্রস্তাবিত একটি খসড়া প্রস্তাব। প্রস্তাবটি ১১৬টি ভোটে গৃহীত হয়। প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ২টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। এর মধ্যে ছিল ভারতও।
কেন ভোট দেয়নি ভারত
কেন ভোটদানে বিরত ছিল ভারত? এর উত্তরে রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত পার্বতনেনি হরিশ বলেন, “সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে কোনও সুসংগঠিত নীতির মধ্যে নীতিগত উপকরণগুলির একটি সুষম সংমিশ্রণ থাকতে হবে — যেখানে ইতিবাচক আচরণকে উৎসাহ দেওয়া হবে এবং ক্ষতিকর কাজকর্মকে নিরুৎসাহিত করা হবে।” তিনি বলেন, “আমাদের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র দণ্ডমূলক পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে কোনও কৌশল সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাষ্ট্রসংঘ এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অন্যান্য সংঘাত-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও সূক্ষ্ম পন্থা গ্রহণ করেছে।” হরিশ বলেন, “ভারত আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।” তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টা পরিচালিত হওয়া উচিত এমনভাবে যাতে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা মনোনীত সত্তা ও ব্যক্তিবর্গ, আল কায়েদা ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠী, আইএসআইএল ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি — যার মধ্যে লস্কর-ই-তৈবা এবং জৈশ-ই-মহম্মদের মতো গোষ্ঠী ও তাদের আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষকরা (Taliban) অন্তর্ভুক্ত — যাতে আর আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করতে (India) না পারে।” ভারতের নিশানায় যে পাকিস্তান, তা স্পষ্ট এই ইঙ্গিতেই।
আঞ্চলিক সহযোগিতাকে স্বীকৃতি
খসড়া প্রস্তাবটি আঞ্চলিক সহযোগিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক অংশীদার এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলির অবদানকে আফগান জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছে। এর মধ্যে ভারতের, ইরানের ও তুরস্কের মতো দেশগুলির প্রদত্ত শিক্ষার সুযোগ এবং কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানে আফগান শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত। এই সুযোগগুলি আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের প্রতি আঞ্চলিক ঐক্য ও বিনিয়োগের একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে তালিবানকে তাদের বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তুলতে এবং এই বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার সুবিধা নিতে প্রয়োজনীয় কাঠামো গঠনের আহ্বানও জানানো হয়েছে।
এশিয়ার ‘ল্যান্ড ব্রিজ’
প্রস্তাবটি আফগানিস্তানের সম্ভাব্য ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াকে সংযুক্ত করতে পারে। এছাড়া আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তঃআঞ্চলিক অর্থনৈতিক (Taliban) প্রক্রিয়ায় একীভূত হওয়াকেও স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে (India)। এটি আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যেখানে দেশটি এশিয়ার একটি ‘ল্যান্ড ব্রিজ’ হিসেবে কাজ করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতের মানবিক সহায়তা দান
এছাড়াও প্রস্তাবটিতে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে আঞ্চলিক সংযুক্তি প্রকল্পগুলির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেগুলি দেশটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিতে যেতে পারে। হরিশ বলেন, “আফগানিস্তানে ভারতের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে মানবিক সহায়তা দান এবং আফগান জনগণের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ বাস্তবায়ন।” তিনি বলেন, “আমরা রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও খেলাধুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আফগান জনগণকে সাহায্য করা যায়। আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে ভারতের প্রতিশ্রুতি প্রমাণিত হয়েছে দেশের সকল প্রদেশজুড়ে ৫০০-রও বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পের মাধ্যমে (India)।”
তালিবানের কাবুল দখল
জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের (Taliban) অগাস্টে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে তালিবান। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ভারত প্রায় ৫০,০০০ মেট্রিক টন গম, ৩৩০ মেট্রিক টনেরও বেশি ওষুধ ও টিকা, ৪০,০০০ লিটার কীটনাশক মালাথিয়ন এবং ৫৮.৬ মেট্রিক টন অন্যান্য জরুরি সামগ্রী সরবরাহ করেছে। ভারতের এই সাহায্য চরম সংকটে থাকা লাখো আফগানকে সাহায্য করেছে। রাষ্ট্রসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দফতর (UNODC)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে, ভারত আফগানিস্তানে মাদক নিরাময় কর্মসূচির জন্য, বিশেষ করে নারীদের জন্য ৮৪ মেট্রিক টন সহায়তা ও ওষুধ এবং ৩২ মেট্রিক টন সামাজিক সহায়তা সামগ্রী পাঠিয়েছে। ভারত এখনও আফগান ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি ও ফেলোশিপ দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সাল (Taliban) থেকে ভারত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রায় ২,০০০ জন আফগান শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জন নারী (India)।
Leave a Reply