India Canada Relation: কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে শুভেচ্ছা মোদির, সহজ হবে দুদেশের সম্পর্ক?

india canada relation mark carney wins election, what it means for delhi

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কানাডায় মিটেছে নির্বাচন। ফের ঝড় তুলেছে লিবারল পার্টি। মঙ্গলবার ছিল ফলাফল ঘোষণা। আপাতত কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী পদে পাকাপাকিভাবে থাকছেন মার্ক কার্নি। জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের মাস কয়েক পরেই নির্বাচিত হয়েছিল তাঁর নাম। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ট্রুডো ‘জেদী’ হলেও, মার্ক কার্নি কিন্তু তেমন নয়। বছর কয়েক আগেই নিজ্জর-কাণ্ডের জেরে ট্রুডোর সময়কালে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে কানাডার (India Canada Relation)। এবার সেই দেশে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন, সেই বিষিয়ে যাওয়া সম্পর্ক নতুন করে স্বাভাবিক হতে পারে বলেও অনুমান একাংশের। নির্বাচনের আগে রাম নবমীর উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগদানের মধ্য দিয়ে কার্নি একপ্রকার বার্তাই দিয়েছেন—ভারতের সঙ্গে তিক্ততা ভুলে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে তিনি অগ্রসর হতে চান।

কার্নিকে শুভেচ্ছা মোদির

কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়া এবং লিবারেল পার্টির জয়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্ক কার্নিকে (Mark Carney) অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্নিকে উদ্দেশ্য করে এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘ভারত এবং কানাডা অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসনের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার এবং প্রাণবন্ত মানুষে-মানুষে সম্পর্কে আবদ্ধ। আমাদের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের জনগণের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী থাকছেন মার্ক কার্নিই। সোমবার ফেডেরাল সরকারের নির্বাচনে জয়ী কার্নির লিবারেল পার্টি। পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে প্রতিপক্ষ পিয়ের পলিয়েভেরের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টিকে। দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল পার্টিই আবারও কানাডার শাসনভার হাতে তুলে নেবে। কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মার্ক কার্নি। জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার বার্তা দিয়েছিলেন লিবারেল পার্টির নতুন দলনেতা। কার্নি বলেছিলেন, ‘সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৈচিত্রময় করতে আগ্রহী কানাডা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের একাধিক সুযোগ রয়েছে। তার জন্য আমাদের একে অপরের মূল্যবোধকে সম্মান জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর আমি অবশ্যই নতুন করে সম্পর্ক তৈরির সুযোগ খুঁজব।’

ট্রুডোর আমলে ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক

ট্রুডোর আমলে ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় নয়াদিল্লিকে দায়ী করেছিলেন কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। শুরু থেকেই যাবতীয় অভিযোগ নাকচ করে এসেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি ট্রুডো প্রশাসন। বিতর্কের জেরে কূটনীতিকদের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত ও কানাডা। ভারত অস্থায়ীভাবে কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক মহলের মতে, এই আবহে প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাঙ্ক অফ কানাডা এবং ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর কার্নির বার্তা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

নির্বাচনে এনডিপির ভরাডুবি

কার্নি সরাসরি হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা ইস্যুতে মুখ না খুললেও একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বহুস্তরীয়—ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে সমাধান করা সম্ভব।” ট্রুডোর নীতিতে প্রবাসী কট্টর শিখ গোষ্ঠীর প্রভাব এবং এনডিপি নেতা জগমিত সিংয়ের সমর্থন লাভের জন্য আপসের রাজনীতি ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিল কানাডার। তবে এইবার নির্বাচনে এনডিপির ভরাডুবি এবং জগমিত সিংয়ের পদত্যাগ সেই বাধাগুলিকে অনেকটাই সরিয়ে দিয়েছে।

ভারত-কানাডা বাণিজ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বর্তমানে কানাডায় প্রায় ১৮ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ এবং ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী রয়েছেন। ২০২৩ সালে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৩.৪৯ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারে পৌঁছায়, যদিও সিইপিএ (Comprehensive Economic Partnership Agreement) আলোচনাগুলি তিক্ত সম্পর্কের কারণে স্থগিত ছিল। কার্নির সময়ে সেই আলোচনাগুলির নতুনভাবে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি আগেই বলেছিলেন, “আমরা নতুন মিত্র খুঁজছি এবং ভারত সেই তালিকায় শীর্ষে।”

ভারতের প্রতিক্রিয়া

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারত ইতিমধ্যে কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশনার পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করছে। কার্নির জাতীয়তাবাদী অবস্থান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মোকাবিলায় কানাডার অর্থনীতি ও বিদেশনীতিতে ভারসাম্য আনার উদ্যোগ—এই সবই ভারত-কানাডা সম্পর্ককে নতুন রূপ দিতে পারে। জাস্টিন ট্রুডোর অধীনে যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল, তা মার্ক কার্নির সময়ে আবার উপরে উঠতে পারে বলেই আশা করছে দুই দেশ।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share