মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে পৌঁছেছে। ভারতের কঠোর পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, তারা ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি (Simla Agreement) সহ ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা হচ্ছে।
সিমলা চুক্তি কী
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধের পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি (India-Pak Simla Agreement) স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি মূলত একটি শান্তিচুক্তি, যার আওতায় নিয়ন্ত্রণরেখার দুই তরফে শান্তি বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় দুই দেশ। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই, হিমাচলপ্রদেশের সিমলায় ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর ভুট্টোর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে গণ্য হয় এই চুক্তি। এর ফলে যুদ্ধ ভুলে দুই দেশের মধ্য়ে পারস্পরিক সৌজন্য বজায় রাখার পাশাপাশি, সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে শান্তি টিকিয়ে রাখতে সম্মত হয় দুই দেশ।
চুক্তিতে কী ছিল
দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
যাবতীয় সংঘাত, মতানৈক্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে মেটাবে দুই দেশ, পারস্পরিক বোঝাপড়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
কোনও পক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটাবে না, কোনও সংগঠন বা গোষ্ঠী শান্তি ও সম্প্রীতি ভঙ্গ করতে চাইলে, তা রুখবে।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান, পরস্পরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমিকতাকে সম্মান জানাবে দুই দেশ। একে অপরের অভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না।
রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি মেনে কেউ কাউকে হুমকি দেবে না, কেউ কারও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর বলপ্রয়োগ করবে না।
ওই চুক্তি মেনে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের যে ১৩০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা ভারত দখল করেছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ টুরটুক এবং চালুঙ্কা ধরে রাখে ভারত।
আর এই সিমলা চুক্তির পরই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান, যার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারত।
চুক্তির পরবর্তী প্রভাব
চুক্তিটি (India-Pak Simla Agreement) একটি কূটনৈতিক কাঠামো তৈরি করলেও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক চিরস্থায়ী শান্তি দেখেনি। সিয়াচেন সংঘর্ষ (১৯৮৪), কারগিল যুদ্ধ (১৯৯৯) এবং নিয়মিত সীমান্ত উত্তেজনা প্রমাণ করে যে, সিমলা চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়নি। ভারত আজও সিমলা চুক্তিকে আন্তর্জাতিক ফোরামে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে। পাকিস্তান কখনো কখনো কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চায়, যা এই চুক্তির ব্যাখ্যা নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি করে।
চুক্তির স্থগিতকরণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ
পাকিস্তানের তরফ থেকে সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একটি বড় ধাক্কা। এটি একদিকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করছে, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে থাকা একটি ঐতিহাসিক চুক্তির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও চুক্তিটি অনেক সময়েই উপেক্ষিত হয়েছে, তবু এটি দুই দেশের সম্পর্কের মৌলিক কাঠামো হিসেবে গণ্য ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ ও উপযোগিতা নিয়ে ফের একবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
Leave a Reply