মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মহলে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে পাকিস্তান (India Pakistan Conflict)। ভারতের সফল সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) পর এক ভয়াবহ ছবি উঠে এসেছে পাক মুলুকে। এই অভিযানে নিহত জঙ্গিদের মরদেহ মোড়া হয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায়! শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের মুরিদকে ফুটবল স্টেডিয়ামে সেনা ও আইএসআই কর্তাদের উপস্থিতিতে জঙ্গিদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় ফের একবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। প্রকাশ্যে এসেছে তাদের সন্ত্রাস-যোগ।
সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যুতে ‘শোকপালন’ পাকিস্তানের
সেনা থেকে আইএসআই। পুলিশ থেকে আমলা। সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যুতে এবার ‘শোকপালন’ করতে দেখা গেল পাক সরকারের একাধিক ব্যক্তিকে। বুধবার গভীর রাতে অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। নয়টি জঙ্গি ঘাঁটির অন্তত ৭০টি জঙ্গির মৃত্যু (কারও মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি) হয়েছে এই স্ট্রাইকে। এবার সেইসব সন্ত্রাসীদের শেষকৃত্যে দেখা মিলল পাক সেনা থেকে আধিকারিকের। পিটিআই রিপোর্ট মোতাবেক, মুরিদকে-তে থাকা জঙ্গিদের হেডকোয়ার্টারে এয়ার স্ট্রাইকের জেরে মারা গিয়েছে তিন জঙ্গি কারি আবদুল মালিক, খালিদ ও মুদাসির। নিহত হয়েছে বিলাল টেরর ক্যাম্পের প্রধান ইয়াকুব মুঘল। এই ক্যাম্প বহু বছর ধরে ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদি হামলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এদের শেষকৃত্যেই উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানি সেনা কর্তাদের। জঙ্গিদের শেষকৃত্যের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
পাক সেনার সঙ্গেই কুখ্যাত জঙ্গি হাফিজ আব্দুল রউফ
শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে সামরিক পোশাকে, বুকভরা ব্যাজ নিয়ে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর শীর্ষ আধিকারিক এবং পাঞ্জাব পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছেন। তবে, শুধু পাক সেনা ও আধিকারিকরা নন, তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন লস্কর-ই-তৈবার কুখ্যাত জঙ্গি হাফিজ আব্দুল রউফ। স্পষ্টতই খোলামেলাভাবে আয়োজন করা এই শেষকৃত্য সন্ত্রাসবাদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনের একটি প্রমাণ। পিটিআইয়ের রিপোর্ট মোতবেক, হাফিজ সইদের নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জামাত-উদ-দাওয়াও সদস্যরাও ছিলেন এই শেষকৃত্যে। এই সংগঠন দুটি রাষ্ট্রসংঘ-স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন, যাদের নাম জড়িয়ে আছে কাশ্মীর, দিল্লি, মুম্বই সহ ভারতের নানা প্রান্তে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায়।
জঙ্গিদের গায়ে পাকিস্তানের পতাকা
সাধারণত ভারতে জাতীয় পতাকা মোড়ানো হয় সেই সব মানুষদের কফিনে, যাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন—যেমন সেনা, পুলিশ অথবা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তারা। সেই মর্যাদা পাওয়া মানেই জাতীয় বীরের স্বীকৃতি। কিন্তু এবার পাকিস্তানে একই সম্মান দেওয়া হল জঙ্গিদের? এই ঘটনায় স্তম্ভিত ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মহল ও সাধারণ মানুষ। সেনা অফিসারদের উপস্থিতি, জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিন — কী বার্তা দিচ্ছে পাকিস্তান? মুরিদকে ফুটবল স্টেডিয়ামে যে জঙ্গিদের শেষকৃত্য হল, সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসাররাও। এর ফলে জঙ্গিদের প্রতি পাকিস্তান (India Pakistan Conflict) সরকারের সক্রিয় সমর্থনের অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এই ভিডিও প্রকাশের পর ভারতীয় কূটনীতিকরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ জোরদার করেছে। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, “পাকিস্তান তার মাটিতে জঙ্গি (militants) ঘাঁটি ধ্বংস করার কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের সেনা ও পুলিশ জঙ্গিদের সমর্থন করছে।” রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাকিস্তানের দ্বৈত চরিত্রের প্রমাণ
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কূটনীতিকদের মত, এই ভিডিও পাকিস্তানের দ্বৈত চরিত্রের প্রমাণ। একদিকে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে, অন্যদিকে জঙ্গিদের শেষকৃত্যে অংশ নেয় তাদের সেনা ও পুলিশ। প্রাক্তন কূটনীতিক মঞ্জু শেঠ বলেন, “এটি কেবল পাকিস্তানের সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর জঙ্গিদের (militants) সঙ্গে সংযোগের প্রমাণ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা। পাকিস্তানের (India Pakistan Conflict) এই আচরণ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইকে দুর্বল করছে। এই ঘটনা রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য বিশ্ব শক্তির কাছে উত্থাপন করা উচিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।” পহেলগাঁও হামলার (militants) প্রেক্ষাপটে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর (Operation Sindoor) প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ভারতের নির্ভুল হামলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। তবে এই ভিডিও দেখায় যে পাকিস্তান তার অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আনছে না।”
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত জঙ্গি রাষ্ট্র পাকিস্তান
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বরং এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জেহাদের প্রতি সমর্থনের প্রতীক। অ্যাবোটাবাদে যেখানে ওসামা বিন লাদেন সেনা নিরাপত্তায় আত্মগোপনে ছিলেন, বালাকোটে যেখানে জইশের ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালিত হত, কিংবা মুরিদকে, যেখানে লস্করের জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় সম্মানে কবর দেওয়া হয় — সবই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদতের প্রমাণ। এখনও যদি আর্থিক সহায়তা বন্ধ না হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক মহল — বিশেষ করে এফএটিএফ, রাষ্ট্রসংঘ এবং পশ্চিমের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি — চোখ বুজে থাকলে তা হবে একপ্রকার সহযোগিতা। ভারত বহুদিন ধরেই এই সত্য জানত। এখন তার ভিডিও প্রমাণ সামনে এসেছে। এই ভিডিও প্রমাণ করে পাকিস্তান আসলে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি জঙ্গি রাষ্ট্র।
Leave a Reply