মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের বিদেশনীতির অন্তঃস্থলে রয়েছে বৌদ্ধধর্ম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফরে বারবার তারই প্রমাণ মিলেছে। ঠিক যেমন থাইল্যান্ড সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওয়াট ফো নামে বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা (India Sri Lanka Relation) সফরে গিয়ে অনুরাধাপুরার মহাবোধি মন্দিরও দর্শন করলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রথম রাজধানী ছিল অনুরাধাপুরা (PM Modi in Anuradhapura)। এই শহরের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ২ হাজার বছরের পুরনো। আগেও এখানে গিয়েছিলেন মোদি। দ্বীতিয়বার তাঁর এই মন্দির পরিদর্শনে আপ্লুত বৌদ্ধ সমাজ।
বোধি বৃক্ষের আধ্যাত্মিক শক্তি অনুভব করেন মোদি
প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবার শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ফের একবার অনুরাধাপুরার মহাবোধি মন্দির (PM Modi in Anuradhapura) দর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানায়েক। বোধি বৃক্ষের সামনেও প্রার্থনা করেন মোদি। বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভদন্ত কে মেধঙ্কারা থেরো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার জয়া শ্রী মহাবোধি মন্দির পরিদর্শন করার জন্য ভীষণ খুশি। তিনি বলেন, “এটি প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বিতীয় বার অনুরাধাপুরায় আগমন। আমরা খুব খুশি। বোধি বৃক্ষের আধ্যাত্মিক গুরুত্বও উল্লেখযোগ্য। এখানে এসে বোধি দর্শন করা এবং আশীর্বাদ প্রার্থনা করা, এটা সবার মনেও আসে না। যারা ‘পুণ্য’ অর্জন করেছেন, কেবল তারাই এই চিন্তা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি হয়তো প্রথমবার এখানে এসে বোধি বৃক্ষের আধ্যাত্মিক শক্তি অনুভব করেছিলেন, এবং সেই অনুভূতির কারণে তিনি দ্বিতীয়বার এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
‘রক্ষা সূত্র’ পরিয়ে স্বাগত মোদিকে
এ দিন অনুরাধাপুরা (PM Modi in Anuradhapura) বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে মোদিকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয় শ্রীলঙ্কার (India Sri Lanka Relation) বায়ুসেনা। পরে মহা বোধি মন্দিরে যান তিনি। সেখানকার প্রধান পুরোহিত মোদির কব্জিতে বেঁধে দেন পবিত্র ‘রক্ষা সূত্র’। পরে ফেরার পথে আকাশ থেকে দেখতে পাওয়া রাম সেতুর দৃশ্য সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আজ রামনবমীর পুণ্য দিবসে, শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার সময়ে আমি আকাশ থেকে রাম সেতুর পবিত্র দৃশ্য দেখতে পেলাম। ঐশ্বরিক যোগে রাম সেতু দর্শনের সময়েই দেখতে পেলাম অযোধ্যার রামলালার সূর্য তিলকও।’’ অনুরাধাপুরায় ভারতের সাহায্যে তৈরি দু’টি রেল প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সংস্থার তৈরি ওই দু’টি প্রকল্পকে শ্রীলঙ্কার পরিকাঠামোয় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে মনে করা হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে এই সফরের সময়ে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য শ্রীলঙ্কাবাসী ও সে দেশের প্রেসিডেন্ট দিশানায়েককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদি।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় (India Sri Lanka Relation) এই বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্দেশ্য ছিল, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের দিকটি তুলে ধরা। বৌদ্ধধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান অনুরাধাপুরের মহাবোধি বৃক্ষে শ্রদ্ধাও জানিয়েছিলেন মোদি। এই মন্দিরটি ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার গভীর সভ্যতাগত সম্পর্কের এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। বৌদ্ধদের বিশ্বাস, অনুরাধাপুরার মহাবোধি বৃক্ষটি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ভারত থেকে সঙ্ঘমিত্রা মহাথেরী দ্বারা শ্রীলঙ্কায় আনা বোধি গাছের শাখা থেকে জন্ম নিয়েছিল।
ভারতের বিদেশনীতির প্রাণকেন্দ্রে বৌদ্ধধর্ম
তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন সম্রাট অশোকের সময় থেকেই ভারতের বিদেশনীতির প্রাণকেন্দ্রে বৌদ্ধধর্ম। ২০২৪-এর ইন্ডিয়ান-এশিয়ান সম্মেলনে লাওসের প্রেসিডেন্টকে একটি পিতলের বুদ্ধমূর্তি উপহার দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ওই একই বছরে বৌদ্ধধর্মের বেশ কিছু নিদর্শন ভারত থেকে পাঠানো হয়েছিল তাইল্যান্ডে। ২০২২-এ নেপালের লুম্বিনি পরিদর্শন করেন মোদি। ওই বছর বৌদ্ধধর্মের বেশ কিছু নিদর্শন পাঠানো হয়েছিল মঙ্গোলিয়ায়। ২০১৯ সালে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি বুদ্ধ মূর্তি উন্মোচন করেন। ২০১৬-তে ভিয়েতনামে গিয়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোদি। চিনের দা জিংসান মন্দির ও বিগ ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডা দর্শন করে দুই দেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী যখন জাপান সফরে যান, তখন তোজি ও কিংকাজু মন্দির দর্শন করে জাপানের সঙ্গে ভারতের বৌদ্ধধর্মের নিবিড় যোগ তুলে ধরেন।
অনুরাধাপুরার সঙ্গে বুদ্ধ-গয়ার যোগ
রাজা হর্ষবর্ধন যেমন বৌদ্ধ-মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, ঠিক তেমনই প্রধানমন্ত্রী মোদির তত্ত্বাবধানে ভারতই প্রথম বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে বৌদ্ধধর্মের দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে উপস্থিত হয়েছিলেন বহু জ্ঞানী মানুষ। বিশ্বের নানা সমস্যা সমাধানে বৌদ্ধ দর্শন কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, তা নিয়ে ওই সম্মেলনে কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ২০২৩-এ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও নরেন্দ্র মোদি দিল্লির বুদ্ধ জয়ন্তী পার্কে বাল বোধি বৃক্ষও দর্শন করেন। বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে যে ভারত ও জাপানের এক বিশেষ যোগ আছে, তা বোঝাতেই ওই দর্শন করেছিলেন তাঁরা। ২০২৫ ফের শ্রীলঙ্কায় (India Sri Lanka Relation) বৌদ্ধধর্মের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রির দাবি, অনুরাধাপুরায় (PM Modi in Anuradhapura) প্রধানমন্ত্রীর বোধিবৃক্ষ দর্শন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ওই বোধিবৃক্ষের সঙ্গে যোগ রয়েছে বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষের। যা দু’দেশের বিশেষ সম্পর্কের চিহ্ন।
Leave a Reply