India Turkey Relation: ভারত-বিরোধী অবস্থানের খেসারত দিচ্ছে তুরস্ক! ৭৭০ কোটি টাকার লোকসান

india turkey relation delhi sends stern message to erdogan support Pakistan is not right

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একবার নয়, বিপদের সময় বার-বার তুরস্কের (India Turkey Relation) জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। বন্ধু ভেবে বিপর্যয় মোকাবিলা, মেডিক্যাল (Medical) ছাড়াও দিয়েছে আর্থিক সাহায্য (Finance)। অথচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেই ভারতেরই ক্ষতি চাইল তুরস্ক (Turkey)। তাই তুরস্ক বয়কটের ডাক দিল ভারত। তাতেই মাথায় হাত তুরস্ক প্রধান এর্দোগানের। পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়ার খেসারত দিতে হল তুরস্ককে। ক্ষতির মুখে পড়ল তুরস্কের অর্থনীতি। একই সঙ্গ পাকিস্তানের সেই ‘বন্ধু’কেই এবার কড়া বার্তা দিল বিদেশ মন্ত্রকও। বলা হল, তুরস্ক পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ করতে বলবে, এই আশা রাখে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে তুরস্কের সংস্থা সেলেবির অনুমতি বাতিল নিয়েও অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

বিদেশমন্ত্রকের বার্তা

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনার এক মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আমাদের আশা, তুরস্ক পাকিস্তানকে অনুরোধ করবে তারা যেন সীমান্তে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা এবং মদত দেওয়া বন্ধ করে। যে সন্ত্রাসবাদের রাজত্ব গড়ে উঠেছে গত কয়েক দশক ধরে, তার বিরুদ্ধে যেন পাকিস্তানকে পদক্ষেপ করতে বলে তুরস্ক, এটাই আমাদের আশা।’’ যে কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠে একে অপরের সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে, তুরস্কের প্রসঙ্গে এ কথাও জানান জয়সওয়াল। রণধীর বলেন, “প্রত্যেকের স্পর্শকাতর বিষয় এবং উদ্বেগের বিষয়গুলি উপলব্ধি করার মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।” বিশ্লেষকদের মতে, এইভাবে আঙ্কারাকে বিদেশমন্ত্রকের তরফে বার্তা দেওয়া হল।

সেলেবির অনুমতি বাতিল

তুরস্ক নিয়ে ভারতের অবস্থান কী, সেলেবি নিয়েই বা কেন্দ্রীয় সরকার কী ভাবছে, এদিন জানতে চাওয়া হলে রণধীর বলেন, ‘‘সেলেবির ‘সুরক্ষা ছাড়পত্র’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অসামরিক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। ভারতে অবস্থিত তুরস্কের দূতাবাসের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলায় সেলেবি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, তাঁরা গত ১৭ বছর ধরে ভারতে পরিষেবা দিচ্ছেন। কখনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। কোনও সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান সম্ভব। কেন্দ্রের তরফে আদালতে জানানো হয়, জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সেলেবির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মুম্বই, নয়াদিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আমেদাবাদ-সহ দেশের ৯টি বিমানবন্দরে একাধিক উড়ান সংস্থার হয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর একাধিক কাজ করার ভার ছিল সেলেবি-র উপর।

কেন এই অবস্থান

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ে প্রকাশ্যেই পাকিস্তানকে সমর্থন এবং অস্ত্র–সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল তুরস্কের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানকে অন্তত ৪০০টি ড্রোনও দিয়েছিল তুরস্ক বলে জানা গিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হামলার সময়ে সেই ড্রোন ব্যবহার করাও হয়। এর পরেই তুরস্কের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ভারত। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে। এর সঙ্গেই তুরস্কের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ বার তুরস্ককে কড়া বার্তা দিল ভারত।

৭৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে তুরস্ক

সবচেয়ে বেশি ধাক্কা এসেছে তুরস্কের দ্রুত প্রসারমান ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ ইন্ডাস্ট্রিতে। গত কয়েক বছর ধরে ধনী ও প্রভাবশালী ভারতীয়দের বিয়ের জন্য পছন্দের জায়গা ছিল তুরস্ক। তবে সম্প্রতি ভারতীয় পরিবারগুলোর এক বড় অংশ তাদের বিয়ের আয়োজন তুরস্কে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আনুমানিক ৭৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হতে চলেছে বলে জানিয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা। ২০২৪ সালে তুরস্কে প্রায় ৫০টি ভারতীয় অভিজাত পরিবারের বিয়ে হয়। যেগুলোর প্রতিটির বাজেট ছিল ২৫ কোটি থেকে ৬৬ কোটি টাকার মধ্যে। শুধু হোটেল নয়, এই বিয়েগুলো স্থানীয় ফুলের দোকান, ক্যাটারিং, সজ্জা, ট্রাভেল এজেন্ট থেকে শুরু করে সঙ্গীত শিল্পীদেরও কাজ দিত। ভারতীয় ওয়েডিং মার্কেট তুরস্কের ব্যবসার আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছিল।

তুরস্কের পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালে তুরস্কে নির্ধারিত ৫০টি বিয়ের মধ্যে ৩০টির বুকিং ইতোমধ্যেই বাতিল হয়ে গিয়েছে বা স্থগিত হয়েছে। ভারতীয় পরিবারগুলোর বার্তা স্পষ্ট, যারা দেশের বিরোধিতা করবে, তাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নয়। এর ফলে রাজস্থান, গোয়া, কেরল, উদয়পুরের মতো জায়গায় বিয়ের জন্য আগ্রহ বাড়ছে। এতে করে দেশের পর্যটন খাতও চাঙ্গা হচ্ছে, এবং কূটনৈতিক অর্থনৈতিক বার্তা স্পষ্ট হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ওয়েডিং ট্যুরিজম থেকে প্রতি বছর তুরস্কে প্রায় ১,১৭০ কোটি টাকা আয় হত। এই বিপুল রাজস্ব এখন ঝুঁকির মুখে। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব তুরস্কের পর্যটন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি ৭০ শতাংশ ভারতীয় তুরস্কে ঘুরতে যাওয়া বাতিল করেছে ৷ বিশ্লেষকদের মতে, এর্দোগান সরকারের কূটনৈতিক কৌশলের এটি বড় ধরনের ব্যর্থতা।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share