India’s Electronics: মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পে সাফল্য! ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন খাতে গত এক দশকে ছয় গুণ বৃদ্ধি

india’s electronics manufacturing grows 6-fold in a decade modi govt targets $500 billion ecosystem by 2030

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের ইলেকট্রনিক্স (India’s Electronics) উৎপাদন খাতে গত এক দশকে ছয় গুণ বৃদ্ধি ঘটেছে। এই বৃদ্ধিকে সামনে রেখে মোদি সরকার (Modi Govt Targets) ২০৩০–৩১ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক্স ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। আইফোন, স্মার্ট টিভি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ছাড়াও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টও ভারতে তৈরির ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। রোবোটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, কফি মেশিন, বিল্ট-ইন-রেফ্রিজরেটর এবং এয়ার ফ্রায়ারের মতো পণ্য যেগুলি আগে পুরোপুরি ভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো, সেগুলি এ বার ভারতে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

উৎপাদন ও রফতানিতে রেকর্ড বৃদ্ধি

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪–১৫ সালে যেখানে ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১.৯ লক্ষ কোটি টাকা, তা ২০২৪–২৫ সালে বেড়ে হয়েছে ১১.৩ লক্ষ কোটিতে। পাশাপাশি রফতানিতেও বিশাল বৃদ্ধি ঘটেছে— ৩৮,০০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে  ৩.২৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে, অর্থাৎ আট গুণেরও বেশি। এই খাতে প্রায় ২৫ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যা ভারতের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সরকার বলছে, এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির পিছনে রয়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘আত্মনির্ভর ভারত’, এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) স্কিম-এর মতো উদ্যোগ। এ ছাড়াও, দক্ষ জনশক্তি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স খাতে গতি এনেছে। ২০২০–২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত এই খাতে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) এসেছে।

সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপে গতি

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কৌশলগত নীতিগত সহায়তা দেশীয় উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে এবং বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।” ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারতের ইলেকট্রনিক্স রফতানির শীর্ষ পাঁচটি গন্তব্য দেশ হলো— যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য এবং ইতালি। সরকারের লক্ষ্য, বর্তমান গতি বজায় রেখে ২০৩০–৩১ সালের মধ্যে ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন খাতকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেমে রূপান্তরিত করা। এর মধ্যে থাকবে উপাদান (component), উৎপাদনের সম্প্রসারণ, বিশ্ববাজারে আরও সংহত হওয়া এবং ডিজাইন-কেন্দ্রিক উদ্ভাবনে জোর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক বৈচিত্র্য এবং অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কারণে ভারত পূর্ব এশীয় অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম একটি বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতকারক কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে।

বড় বড় কোম্পানি দেশেই পণ্য তৈরি করছে

ভারতে ইলেকট্রনিক শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, ভারতে তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্স (BIS)-এর কোয়ালিটি কন্ট্রোল অর্ডার (QCO)-এর সার্টিফিকেশনের দরকার পড়ে। গত ৮-৯ মাসে সেই এই তালিকায় যোগ হয়েছে একাধিক ইলেট্রনিক্স প্রোডাক্ট। ইউরেকা ফোর্বসের রোবোটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের বড় বাজার রয়েছে ভারতে। এই পণ্য তৈরির জন্য ডিক্সন টেকনোলজির সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই সংস্থা। ভারতে পণ্য তৈরির বিষয়ে ডিক্সন টেকনোলজিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অতুল লাল বলেছেন, ‘বিআইএস-এর নিয়ম অনেক ব্রান্ডের কাছেই এখন ট্রিগার হিসাবে কাজ করছে। যদিও কিছু পণ্যের বাজার সত্যিই খুবই ছোট। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই প্রবণতা ব্যবসার সুযোগ তৈরি করেছে।’ ইউরেকা ফোর্বসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ভারতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। ডিক্সন টেকনোলজি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অন্যতম বৃহৎ কন্ট্র্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার।

আমদানি সংক্রান্ত জটিলতাও কমেছে

ডিক্সনের মতো একাধিক সংস্থার ইতিমধ্যেই ভারতে উৎপাদন কেন্দ্র খুলেছে। যার মধ্যে অন্যতম ইউরোপের সংস্থা লিবহের। সম্প্রতি অওরঙ্গাবাদে বিল্ট-ইন-রেফ্রিজরেটরের প্ল্যান্ট তৈরি করেছে এই সংস্থা। বছরে মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার ইউনিটের বিক্রি থাকলেও কারখানা তৈরি করেছে এই সংস্থা। ওই সংস্থার ভারতীয় শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সেলস) কপিল আগরওয়াল বলেছেন, ‘আগে আমরা জার্মানি থেকে আমদানি করতাম। ফ্যাক্টরি সার্টিফিকেশন খুবই বিরক্তিকর একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু প্ল্যান্ট তৈরি হওয়ায় আমদানি সংক্রান্ত জটিলতাও কমেছে। আমাদের বিশ্বাস এই পণ্যের বাজার আগামী দিনে অনেকটা বাড়বে।’ ক্রম্পটন গ্রিভেস, হ্যাভেলস ইন্ডিয়ার মতো একাধিক সংস্থা অ্যানুয়াল রিপোর্টে নিজেদের পণ্য স্থানীয় স্তরে তৈরির ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে। গত এক বছরে এই সব সংস্থা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে লোকালাইজ প্রোডাকশনও বাড়িয়েছে।

মোবাইল উৎপাদনে ভারতের নজির

ভারতের মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্প এই খাতে সবচেয়ে বড় সাফল্যের গল্প। গত এক দশকে এই খাত ২৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে— ২০১৪–১৫ সালে ১৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০২৪–২৫ সালে তা পৌঁছেছে ৫.৪৫ লক্ষ কোটিতে। বর্তমানে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী দেশ। ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ২টি মোবাইল উৎপাদন ইউনিট ছিল, এখন সেই সংখ্যা ৩০০-রও বেশি। রফতানিতে এসেছে ১২৭ গুণ বৃদ্ধি— ২ লক্ষ কোটি টাকা, যার মধ্যে শুধুমাত্র অ্যাপল একাই ১.১ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ডিভাইস রফতানি করেছে ২০২৪ সালে। একটি বড় মাইলফলক হিসেবে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারত চিনকে টপকে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন রফতানির দিক থেকে শীর্ষে পৌঁছেছে— যা বৈশ্বিক সাপ্লাই চেনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share