মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওকাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Water Treaty) স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। তার জেরে ভরা গ্রীষ্মে প্লাবিত হয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাংশ (Bangladesh)। ভারতের এহেন পদক্ষেপের জেরে ভীত বাংলাদেশ সরকারও।
বিপজ্জনক খেলা (Indus Water Treaty)
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে ভারতের নিরাপত্তাকে হুমকি দেওয়ার বিপজ্জনক খেলা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানের আইএসআইকে মুক্ত হস্তে কাজ করতে দেওয়া এবং ভারতের শিলিগুড়ি করিডর ও সুন্দরবনের মংলা বন্দরের কাছাকাছি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে চিনকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো থেকে ঢাকাকে সরে আসতে হবে। নাহলে দিল্লি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল কিংবা আরও কয়েকটি পরিকাঠামো প্রকল্প বন্ধ করার চেয়েও ঢের বেশি কঠোর পদক্ষেপ করার কথা ভাবতে পারে। ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত হওয়ার পর পাকিস্তানের দশা দেখে বাংলাদেশ সহ নিম্নাঞ্চলের দেশগুলিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এই চুক্তি তিনটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (কার্গিল সহ) এবং ২০০৮-এর মুম্বই হত্যাকাণ্ডের মতো একাধিক জঙ্গি হামলা সহ্য করেছিল। তাই এই উদ্বেগ যুক্তিসঙ্গত, বিশেষত যখন আগামী বছর ৩০ বছরের পুরানো গঙ্গা জল চুক্তি নবীকরণের কথা রয়েছে।
ভারতের শতাধিক নদী বাংলাদেশে গিয়েছে
গঙ্গার বাইরে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র-সহ বারাক, ফেনির মতো শতাধিক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ২০১৯ সালে ভারত ফেনি নদীর জল বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে। অন্যান্য নদীর ক্ষেত্রে কোনও চুক্তি নেই। যদিও তাতে উদ্বেগ কমেনি। ভারত ঢাকার সঙ্গে সঠিক সময়ে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, বন্যা সতর্কতা আদানপ্রদান করে। এই তথ্য প্রবাহে সামান্য বিঘ্নও বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে (Indus Water Treaty)। দিল্লি জল বা আবহাওয়াকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেই পারে। কারণ উত্তর ভারতের বেশিরভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তিই হয়েছে তিব্বতে। যখনই রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়, তখনই বেজিং থেকে তথ্যপ্রবাহ ধীর হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রসহ এই নদীগুলির প্রধান জলাধার রয়েছে ভারতেই। তাছাড়া, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভারত সতর্কও রয়েছে। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে, দিল্লি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশাল জলাধার সহ একাধিক বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। এগুলি উজানের প্রবাহে অপ্রত্যাশিত ওঠানামা মোকাবিলায় সাহায্য করবে (Bangladesh)।
ঢাকা ভারতের উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে
আসল কথা হল, বাংলাদেশকে বুঝতে হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কানাডা ও মেক্সিকোর মতো দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য সহযোগীর ওপরও পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করতে পারে, তবে কোনও সম্পর্ক বা চুক্তিই যাচাই-বাছাইয়ের ঊর্ধ্বে নয়। ভারত কঠোর শক্তি ব্যবহার এড়িয়ে চলে কারণ সে তার উন্নয়নের গতিপথ থেকে বিচ্যুত হতে চায় না। ১৯৯১ সালে উদারীকরণের পর থেকে ৬ শতাংশেরও বেশি গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম (Indus Water Treaty)। ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিনিময়ে ঢাকা ভারতের উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে তার চরম মূল্য দিতে হবে ইউনূসের দেশকে। শেখ হাসিনা এটি বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন। এর সুবিধা শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সমগ্র বিমস্টেক উপঅঞ্চলেও বিস্তৃত হয়েছিল। ২০১৫ সালে গঠিত এই গোষ্ঠীটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের অকার্যকর প্রক্রিয়া এড়িয়ে অগ্রগতির লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
সার্কের ব্যর্থতা
দুর্ভাগ্যবশত, মহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই এই ধারাকে উল্টে দেন। তিনি কখনও বিবিআইএন (BBIN)-এর উল্লেখ করেননি। বরং বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককে মজবুত করার দিকে ঝুঁকেছেন। মাত্র আট মাসের মধ্যে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছায় – এমনকি ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ পাকিস্তানি পণ্য পরিবহণের শক্তি যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তাও বাতিল করে দেয় (Bangladesh)। সার্কের ব্যর্থতা ও এর পিছনের কারণগুলি সকলেই জানেন। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কে বাংলাদেশ বা এই অঞ্চলের লাভকে উপেক্ষাই করা যায়। তবুও ইউনূস ইসলামাবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে রাজনীতিকীকরণের লক্ষ্যেই কেবল সার্ককে সমর্থন করছেন (Indus Water Treaty)। এটি একটি দশক প্রাচীন পরিকল্পনা, যা বর্তমান ভূ-রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক, যেখানে ভারত বৈশ্বিক মহাশক্তির অবস্থান জোগাড় করতে তৎপর। বুধবার, মোদি পাকিস্তানের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। সকল পাক নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানিদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড়ের স্কিমও বাতিল করা হয়েছে।
ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ
ইউনূস দায়িত্ব নিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে। সম্প্রতি তিনি দিল্লিকে স্টেকহোল্ডার না করে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় বাজার দখলের লক্ষ্যে বাংলাদেশে চিনা বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সন্ত্রাসের সঙ্গে খেলাধুলা করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। একসময় উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১০ ট্রাক অস্ত্রের মামলা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসকে সমর্থনের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। ইউনূস প্রশাসন সেই মামলায় অভিযুক্ত সকলকেই মুক্তি দিয়েছে (Bangladesh)। মারণাত্মক সন্ত্রাসী সংগঠন আনসারুল্লাহ্ বাংলা টিমের প্রধান এখন মুক্ত। নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরিরের পোস্টার বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। আল-কায়েদার পতাকা চোখে পড়ে ঢাকার যত্রতত্র। এগুলো কি ইউনূসের ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনার অংশ?
ভারতের সন্ত্রাস বিষয়ক মনোভাবের পরিবর্তন
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি ভারতের সন্ত্রাস বিষয়ক মনোভাবের পরিবর্তন নির্দেশ করে। এই পরিবর্তন শুরু হয় ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর। কাশ্মীর হামলা এই দৃঢ়সংকল্পকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশ এটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করছে (Indus Water Treaty)। প্রসঙ্গত, মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আলোচনার ধারা নিয়ন্ত্রণে আনতে এক অভিনব কৌশল নিয়েছে। প্রচলিত মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা তাদের রুটিন কাজের অংশ হলেও, আসল দক্ষতা দেখিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে। সরকারের প্রায় সবাই ফেসবুকে নিজেদের দফতরের দায়িত্বের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়ে জটিল ও বিস্তারিত মতামত শেয়ার করছে। যে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য জবাবদিহিতা ছাড়াই এই পরিকল্পনাটি সযত্নে পরিকল্পিত করা হয়েছে, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলোর মুখোমুখি হলে তারা পোস্ট মুছে দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকবে। তবে স্ক্রিনশটের মাধ্যমেই আলোচনা চলতে থাকে। একজন শীর্ষ মন্ত্রী ভারতের উত্তর-পূর্বকে ছিনিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। কাশ্মীর হামলার পরেও তারা একই কাজ করেছিল।
কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আইন অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে সাধারণত জুলাই মাসের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে তিনি ইউনূস মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ২৩ এপ্রিল তিনি মোদি সরকারকে কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বর্ণনা করে কলকাতাভিত্তিক এক কংগ্রেস সমর্থকের একটি পোস্ট শেয়ার করেন (Indus Water Treaty)। পোস্টটির ভূমিকায় নজরুল লিখেছিলেন, “আমি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করছি। তবে কে এর পেছনে আছে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।” নজরুলের এই বক্তব্য দ্রুত ডিজিটাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক ইনকিলাবের মতো পাক-সমর্থিত ইসলামিস্ট মিডিয়া একে লিড নিউজ করে। পরে তিনি পোস্টটি মুছে দেন (Bangladesh)। তারপর থেকে বাংলাদেশকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ একটি নিম্ন অববাহিকার দেশ। ফলে ভারতের ছোটখাট কোনও সিদ্ধান্তেরও চড়া মাশুল গুণতে হতে পারে বাংলাদেশকে (Indus Water Treaty)।
Leave a Reply