Life Outside Solar System: সৌরজগতের বাইরে প্রাণ! এলিয়েনের খোঁজ পেলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী?

alien life signs outside discovers outside solar system by a group of scientists leading an indian origin scientist

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মহাকাশের অনন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষ কি একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে? এ নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই! চুপিসারে পৃথিবীর ওপর নজর রাখছে ভিনগ্রহীরা (Alien Life), এমন কথাও শোনা গিয়েছে। পৃথিবীর বাইরে কি প্রাণ আছে? বছরের পর বছর ধরে সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বিফল মনোরথ হয়েই ফিরতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এবার সৌরজগতের (Life Outside Solar System) বাইরের এক গ্রহের বায়ুমণ্ডলে রাসায়নিক চিহ্ন খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা, যা পৃথিবীতে শুধুমাত্র জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়। গবেষকদের মতে, এটি এখনও পর্যন্ত মহাকাশে জীবনের সম্ভাব্য উপস্থিতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই চিহ্ন খুঁজে পেলেন।

ভিন গ্রহে জৈব গ্যাসের সন্ধান

জেমস ওয়েবের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা গ্রহটির নাম ‘কেটু-১৮বি’ (K2-18b)। এর বায়ুমণ্ডলে যে দু’টি গ্যাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তা হল ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) এবং ডাইমিথাইল ডাইসালফাইড (DMDS)। পৃথিবীতে এই দু’টি গ্যাসই জীবন্ত জীব, বিশেষত সামুদ্রিক শৈবালজাতীয় মাইক্রোব দ্বারা তৈরি হয়। গবেষকদের মতে, এটি ইঙ্গিত করে কেটু-১৮বি গ্রহটিতে প্রাণ থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ওই গ্রহে হয়তো মাইক্রোবিয়াল বা এককোষী জীবন রয়েছে (Alien Life)। তবে জীবিত প্রাণী থাকার ঘোষণা করেননি বিজ্ঞানীরা। তবে একটা আভাস পাওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন তাঁরা। বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বায়োসিগনেচার (Biosignature) বলা হচ্ছে- যা আদতে কোনও জৈবিক প্রক্রিয়ার ছাপ। এই গোটা বিষয়টিকে গভীর ভাবে পরখ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবুও গোটা বিষয়টি নিয়ে দৃশ্যতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীর হাত ধরেই গবেষণা

এই বিষয়টি নিয়ে যে গবেষণাপত্র বেরিয়েছে তার প্রধান লেখক কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমির মহাকাশ বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন। বারতীয় বংশোদ্ভূত নিক্কু জানাচ্ছেন, সম্ভবত ভিনগ্রহে প্রাণের প্রমাণের বিষয়ে যে গবেষণা হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে এমন বায়োসিগনেচার পাওয়ার বিষয়টি সর্বপ্রথম Life Outside Solar System)। তবে তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনও জীবন্ত প্রাণি আছেই সেকথা তাঁরা ঘোষণা করছেন না—বরং এটি একটি সম্ভাব্য বায়োসিগনেচার অর্থাৎ জীববিজ্ঞানের ইঙ্গিত। ফলে এই ফলাফলকে এখনই চূড়ান্ত প্রমাণ বলে বিবেচনা না করে আরও গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা যাচাই করতে চাইছেন। মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন বলেন, ‘‘এটি সৌরজগতের বাইরের প্রাণ খোঁজার ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পদক্ষেপ, মুহূর্তও। আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমেই জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ-ভিত্তিক অ্যাস্ট্রোবায়োলজির যুগে প্রবেশ করেছি।’’

কার্বন-ভিত্তিক অণুর শনাক্তকরণ

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আগের পর্যবেক্ষণে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পাওয়া গিয়েছিল—এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনও তারার বাসযোগ্য অঞ্চলে থাকা গ্রহে কার্বন-ভিত্তিক অণুর শনাক্তকরণ Life Outside Solar System)। মধুসূদন বলেন, ‘‘বর্তমানে যেসব পর্যবেক্ষণ পাওয়া গিয়েছে, তা ব্যাখ্যা করার একমাত্র উপায় হল কেটু-১৮বি হাইসিয়ান বিশ্ব, যা প্রাণে ভরপুর। তবে আমাদের খোলা মন নিয়ে অন্যান্য সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে। যদি হাইসিয়ান গ্রহ বাস্তবেই থাকে, তবে সেখানে প্রাণ সম্ভবত পৃথিবীর সমুদ্রের মাইক্রোবের মতোই হবে। এই ধরনের গ্রহের মহাসাগর পৃথিবীর চেয়ে উষ্ণ বলে ধারণা করা হয়। এককোষী বা মাইক্রোবিয়াল জীব ছাড়া, বহু-কোষী বা বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’’

কেমন গ্রহ এটি?

প্রাণের সন্ধান থাকতে পারে এই নতুন গ্রহটি ‘কেটু-১৮বি’ পৃথিবীর চেয়ে অন্তত ৮.৬ গুণ ভারী। পৃথিবীর ব্যাসের চেয়ে এই গ্রহের ব্যাস ২.৬ গুণ বড়। নিজের নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে হ্যাবিটেবল জোনে ঘুরছে ওই গ্রহটি। এমন এলাকায় গ্রহটি রয়েছে, যেখানে জল তরল অবস্থায় গ্রহের উপরিভাগে থাকতে পারে। পৃথিবী থেকে অন্তত ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে ওই গ্রহ। ‘কেটু-১৮বি’ গ্রহটি লিও নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। গ্রহটি একটি শীতল লাল বামন তারাকে কেন্দ্র করে এমন কক্ষপথে ঘোরে, যা তার ‘হ্যাবিটেবল জোন’ Life Outside Solar System) বা বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ, এখানে প্রাণ থাকার মতো পরিবেশ থাকতে পারে। ২০১৯ সালে হাবল টেলিস্কোপ এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের আভাস পেয়েছিল। তখন থেকেই এটি ‘সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে বাসযোগ্য গ্রহ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পরে অবশ্য দেখা যায়, সেটি মূলত মিথেন গ্যাসের একটি আস্তরণ।

কোন যুক্তিতে প্রাণের সম্ভাব্য আবাসভূমি

‘কেটু-১৮বি’ এমন এক গ্রহ যা তরল জলে আচ্ছাদিত এবং যার বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ধরনের জলে বাস করতে পারে মাইক্রোবিয়াল জীবন (Alien Life)। তবে, বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই আবিষ্কারকে Life Outside Solar System) যথাযথভাবে যাচাই করার ওপর জোর দিচ্ছেন। টেক্সাসের সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার গ্লেইন বলেন, “এই তথ্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়, তবে আমাদের বিশ্লেষণে আরও সতর্ক হতে হবে।” মধুসূদনও বলেছেন, “এই মুহূর্তে আমরা শুধু সম্ভাবনার কথা বলছি। ওই গ্যাসগুলি আদৌ জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তা আরও পরীক্ষার প্রয়োজন।’’ তিনি আরও জানান, একই ধরনের পর্যবেক্ষণ আরও দুই থেকে তিনবার করতে হবে, যাতে এই আবিষ্কারের নির্ভরযোগ্যতা বাড়ে।

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share