মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাওবাদী দমন অভিযানে ফের বড়সড় সাফল্য পেল নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের (Maoists in Chattisgarh) বস্তার রিজিয়নে দু’টি পৃথক এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে ৩০ জন সন্দেহভাজন মাওবাদী। গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছে ‘ডিস্ট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড’ (ডিআরজি)–এর এক জওয়ানের। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত বস্তার এবং গারিয়াবন্দে কমপক্ষে ১১৩ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিজাপুরেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ৩১ জন মাওবাদী, শহিদ হন দুই জওয়ান।
মাও-দমনে বড় অভিযান
বস্তারের আইজি পি সুন্দররাজ জানান, বস্তারের গঙ্গালুর এলাকায় মাওবাদী উপস্থিতির খবর পেয়ে অভিযানে গিয়েছিল বিজাপুর ও সুকমার ডিআরজি, কোবরা এবং সিআরপিএফের যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ শুরু হয় গুলিযুদ্ধ, চলে দুপুর পর্যন্ত। গুলিযুদ্ধে ২৬ জন মাওবাদীর (Maoists in Chattisgarh) প্রাণ গিয়েছে বলে বাহিনীসূত্রে খবর। উদ্ধার হয়েছে স্বয়ংক্রিয়, সেমি–অটোমেটিক একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক। অন্যদিকে, কাঙ্কের ও নারায়ণপুর জেলার সীমানা লাগোয়া জঙ্গলেও নর্থ বস্তার মার ডিভিশনে মাওবাদীদের উপস্থিতির খবর মিলেছিল। ডিআরজি এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী সেখানে তল্লাশি অভিযানে যায়। কাঙ্কেরের জঙ্গলে গুলির লড়াইয়ে চার জনের প্রাণ গিয়েছে বলে খবর। সেখান থেকেও উদ্ধার হয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল বিস্ফোরক।
মাওবাদী কমান্ডার ডিডমার-এর খোঁজ
বিজাপুর এবং দান্তেওয়াড়ায় রাত পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চলার খবর মিলেছে। কিন্তু এখনও মাওবাদী কমান্ডার ডিডমার হদিস মেলেনি। তাঁরই খোঁজে তিন রাজ্য জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে বাহিনী। জানা গিয়েছে, মাওবাদী নেতা ডিডমার খোঁজে ছত্তিশগড়, ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানায় ১২৫টি গ্রামে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ড্রোন দিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এই তিন রাজ্যের কোনও একটি সীমানা এলাকায় ডিডমা আত্মগোপন করে আছেন বলে মনে করছে পুলিশ। কারণ এই তিন রাজ্যের সীমানা এলাকায় মাওবাদীরা অত্যন্ত সক্রিয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
সক্রিয় ছত্তিশগড় সরকার
২০২৩ সালে ছত্তিশগড়ে (Maoists in Chattisgarh) বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী হন বিষ্ণু দেও সাই। তিনি রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পরই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। ফলে গত এক বছরের মধ্যে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের গতি আরও জোরালো হয়েছে রাজ্যে। ২০২৪ সালে ২১৯ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। গত কয়েক মাস ধরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বাহিনীর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, গত ১৩ মাসে ছত্তিশগড়ে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫৮ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১১৭৭ জন। আত্মসমর্পণ করেছে ৯৮৫ মাওবাদী। আর এটাকেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। তবে অভিযান জারি রাখা হয়েছে। বরং আরও বেশি ধারালো করা হচ্ছে। মাওবাদীদের নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে বাহিনী।
সমাজের মূল স্রোতে ফেরার আহ্বান
হিংসা ছেড়ে মাওবাদীদের (Maoists in Chattisgarh) সমাজের মূল স্রোতে ফেরারও আহ্বান জানিয়েছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই (Vishnu Deo Sai)। রাজ্য সরকার তাদের সমস্যার সমাধান এবং দাবি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের ‘আহ্বানে’ সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণও করেছে বহু মাওবাদী। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সাফল্যকে স্যালুট জানিয়েছেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাঁই–ও। তাঁর বক্তব্য, ‘২০২৬–এর মধ্যে বস্তার ভয়মুক্ত হয়ে বাঁচবে, আমি নিশ্চিত। ছত্তিশগড়ে মাওবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই প্রবল পরাক্রমে এগোচ্ছে। তবে ডিআরজি জওয়ানের শহিদ হওয়ার খবর পেয়ে আমি মর্মাহত। তাঁর আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজি দেশ তথা ছত্তিশগড় থেকে ২০২৬ মার্চের মধ্যে মাওবাদ মুছে ফেলার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী তাতে একের পর এক সাফল্য অর্জন করছে। জওয়ানদের সাফল্য প্রশংসনীয়। তাঁদের সাহসিকতাকে স্যালুট জানাই।’
মাওবাদী মুক্ত দেশের স্বপ্ন
২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারতকে ‘মাওবাদীমুক্ত’ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সেই লক্ষ্যে দেশ আরও কয়েক ধাপ এগোল বলে বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাহ। এ দিন মাওবাদী দমন অভিযানে সাফল্যের খবর মিলতেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, ‘আজ আমাদের জওয়ানরা ‘নকশাল মুক্ত ভারত অভিযান’–এর (Maoists in Chattisgarh) লক্ষ্যে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আপসহীন পদক্ষেপ করছে। আত্মসমর্পণ এবং মূলস্রোতে ফেরানোর একাধিক সুযোগ দেওয়ার পরও যে সব মাওবাদী সারেন্ডার করেনি তাদের ক্ষেত্রে মোদি সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়ার পক্ষপাতী। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ মাওবাদীমুক্ত হয়ে যাবে।’
Leave a Reply