Murshidabad: মনে করাচ্ছে ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’, জীবন বাঁচাতে ভিটে ছাড়ছেন মুর্শিদাবাদের আক্রান্ত হিন্দুরা

mobs selectively targeted Hindus in the protests against Waqf law in Murshidabad

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ আইনের বিরোধিতার নামে মৌলবাদীদের তাণ্ডবে অশান্ত মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। অভিযোগ, বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে হিন্দু বাড়িগুলিকে। পরিবার নিয়ে হিন্দুরা নদী পেরিয়ে মালদায় আশ্রয় নিচ্ছেন। এমন চিত্র সারা দেশ দেখেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে। গত শুক্রবার ১১ এপ্রিল থেকে এই জেলার সামশেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ান প্রভৃতি স্থানে হিন্দু সমাজের ওপর আক্রমণ নেমে আসে বলে অভিযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা জানাচ্ছেন, বেছে বেছে হিন্দুদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। তাঁদের বাড়িঘর দোকান মন্দির এই সমস্ত কিছু কিছুতেই হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় যে বিক্ষোভ শুরু হয় তা শুক্রবার ঠিক নামাজের পরেই শুরু হয়। শনিবার পর্যন্ত এই তাণ্ডব অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে শয়ে শয়ে হিন্দুকে মুর্শিদাবাদে নিজেদের ভিটেমাটি- এই সমস্ত সমস্ত কিছু ত্যাগ করে নৌকায় চড়ে পার্শ্ববর্তী মালদা জেলায় পালিয়ে যেতে হয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরবর্তীকালেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল। যখন তাঁদেরকে এভাবে পালিয়ে যেতে হয়।

কী বলছেন হিন্দু ব্যবসায়ীর স্ত্রী মঞ্জু ভগত?

এ নিয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজ তক-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) হিন্দু ব্যবসায়ীর স্ত্রী মঞ্জু ভগত বলেন, ‘‘তারা অর্থাৎ মৌলবাদীরা আমাদের বাড়ির সামনে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। তখন তারা পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে। এর পরেই তারা আমাদের বাইক ভাঙচুর। বাড়ি ভাঙচুর করে। চেয়ার, গদি টিভি থেকে শুরু করে দামি জিনিসপত্র সমস্ত কিছু তারা লুট করে।’’ ওই হিন্দু মহিলা আরও বলেন, ‘‘মৌলবাদীদের ভয়ে আমাদের পুরো পরিবার তখন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিলাম। আমরা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে লুকিয়ে ছিলাম। আমরা তখন ভগবানের নাম জপ করছিলাম এবং প্রার্থনা করছিলাম যে এই উন্মত্ত মৌলবাদী জনতা যেন আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সেই সময় আমার মেয়ের যদি কিছু একটা ঘটত! তখন আমি কি করতে পারতাম।’’ ওই মহিলা আরও জানান, স্থানীয় দোকানগুলিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। একজন হিন্দু দোকানদার এরপরেই সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন,‘‘চা, বিস্কুট, সিগারেট সহ আমি যা যা বিক্রি করতাম সবই শেষ হয়ে গেল।’’ ভাঙচুরের সময় পুলিশকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।

উন্মত্ত মৌলবাদীরা বলছিল, এটা একটা ট্রেলার সিনেমা এখনও আসেনি!

মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বাসিন্দা নারায়ণ সাহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁরও দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি কী বলব আর কি করব কিছুই জানিনা। এখানে আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই।’’ স্থানীয় সুজিত সাহা নামের এক হিন্দু ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘উন্মত্ত মৌলবাদীদের ভিড় যখন হামলা করছিল, তখন তারা বারবার বলছিল এটা একটা ট্রেলার সিনেমা এখনও আসেনি।’’ হিংসা কবলিত ওই এলাকাতেই ছিল শুভ স্মৃতি হোটেল। যার মালিকের স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার এখানে এই দোকান ছিল। যা ভাঙচুর করা হয়েছে। তারা আমার সমস্ত জিনিসপত্র লুট করেছে। দোকানের ভেতরে থাকা নগদ টাকা পয়সা কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন আমরা কিভাবে খাব?’’

মৌলবাদীদের (Murshidabad) তাণ্ডবে পুলিশ লুকিয়ে ছিল

সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনোজ ঘোষ নামের এক ব্যক্তি জানান, সমস্ত ঘরবাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে। চারপাশে তাকিয়ে আপনারা নিজেরাই দেখতে পারেন। কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল হিন্দুরা। ওই মনোজ ঘোষ সংবাদমাধ্যমে আরও দাবি করেন, ‘‘শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এখানে একটি স্থায়ী বিএসএফের ক্যাম্প চাই।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘যখন মৌলবাদীদের এমন তান্ডব চলছিল, তখন কোনও পুলিশ ৪ ঘণ্টা ধরে ধারে কাছে ছিল না।’’ মনোজ ঘোষ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পুলিশ স্টেশনটি আমাদের বাড়ি থেকে ২০০ মিটারের দূরত্বের মধ্যে ছিল কিন্তু আমাদের উদ্ধারে কেউ আসেনি।’’

পুলিশ নিজেই তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল

এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে (Murshidabad) অপর এক স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু বলেন, ‘‘ওরা বাইক ভাঙচুর করেছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের জিনিসপত্র লুট করেছে। দোকানপাট পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি রাতে ঘুমোতে পারিনি। আমরা জেগে ছিলাম এবং সারারাত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছিলাম। এখানে যখন হিংসা চলছিল তখন কোনও পুলিশ বাহিনীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ নিজেই তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল। দেখা যাক সরকার আমাদের কোনও ক্ষতিপূরণ (Waqf Law) দেয় কিনা!’’ মৌলবাদীদের তাণ্ডবের শিকার এক হিন্দু এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমরা এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করছি। কারণ এখানে যেহেতু কেবল অরাজকতা এবং গুন্ডামি চলছে। শুক্রবারে নামাজের পর থেকেই মিছিল বের হয় এবং তারপর থেকে এই তাণ্ডব চলতে থাকে।’’

জলে বিষ মেশানোর অভিযোগ (Murshidabad)

অন্যদিকে, একটি ভাইরাল ভিডিওতে (মাধ্যম সত্যতা যাচাই করেনি) দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়সি হিন্দু মহিলাকে। তিনি বলছেন, ‘‘মৌলবাদীরা তাদের জলের ট্যাঙ্ক গুলিতে বিষ মিশিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেই জল খেতে পারিনি। কারণ তা বিষ মিশ্রিত ছিল।’’ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তরফ থেকে যে ভিডিওগুলি দেখানো হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে হিন্দু মহিলারা মুর্শিদাবাদ থেকে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে আসছেন। এমনকি মাত্র ছয় দিনের বাচ্চাকে নিয়েও পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন হিন্দুরা।

মোদি ওয়াকফ আইন এনেছে, কোনও হিন্দুকে থাকতে দেব না এমনটাই বলছিল মৌলবাদীরা, দাবি স্থানীয়দের

বিজেপি নেতা অর্জুন সিং এক্স মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাঁর ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে অজস্র হিন্দু ধুলিয়ান থেকে গঙ্গা পার হয়ে মালদা জেলায় যাচ্ছেন। সেখানে হিন্দু পুরুষ এবং মহিলা প্রত্যেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছে। তাঁরা নিজেদের ওপর হওয়া সন্ত্রাসের কথাগুলিকে বলছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেছে বেছে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা করা হয়েছে। একজন মহিলা বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে ব্যাপক বোমাবাজি চলছে। যার ফলে আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’’ আর একজন মহিলা বলেন, ‘‘তারা আমাদের এখানে বলে দিয়েছে যে নরেন্দ্র মোদি ওয়াকফ বিল পাস করেছে। তাই আমরা এখানে কোনও হিন্দুকে থাকতে দেব না। সোনার অলংকার এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, মৌলবাদীরা অনেক বাড়িতে আগুনও লাগিয়েছে আমাদের শিশুরা খেতে পাচ্ছে না এবং মহিলাদেরকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’

মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের সঙ্গে তুলনা করলেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য

মুর্শিদাবাদের এই ঘটনায় এক্স মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। নিজের পোস্ট করা ভিডিওতে তিনি লেখেন, ‘‘১১ এপ্রিল হল বাঙালির ইতিহাস একটি কালো দিন। কারণ এই দিনই বাঙালিকে মনে করিয়ে দিল ১৯৪৬ সালের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর কথা। মুর্শিদাবাদে যেখানে ভিটেমাটি ছাড়তে হচ্ছে হিন্দুদের এবং মৌলবাদীরা ধুলিয়ান শামসেরগঞ্জ সুতি প্রভৃতি জায়গায় তান্ডব চালাচ্ছে।’’

Please follow and like us:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

LinkedIn
Share