মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এ লড়াই ধর্ম বনাম অধর্মের। একজোট হতে হবে। পহেলগাঁও হামলা নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat On Pahalgam)। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘এই যুদ্ধ ধর্ম এবং অধর্মের মধ্যে। আমরা প্রত্যেকে এই ঘটনায় ব্যথিত, ক্ষুব্ধ। কিন্তু শয়তানকে ধ্বংস করতে গেল পূর্ণ শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। যেমন রাবণ নিজেকে শোধরাতে অসম্মত ছিলেন। তাই রামের হাতে আর কোনও বিকল্প ছিল না। তবু রাবণ শোধরানোর একটা সুযোগ দিয়ে তার পরই হত্যা করেছিলেন রাম।’ ভাগবতের কথায়, “একজন প্রকৃত হিন্দু কখনও ধর্ম জিজ্ঞাসা করে কাউকে হত্যা করতে পারে না। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে, তা রাক্ষসোচিত আচরণ—মানবতাবিরোধী ও ধর্মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।”
ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে হিন্দুদের
‘হিন্দু’ শব্দটির উল্লেখ না করেও আরএসএস প্রধান বুঝিয়ে দিলেন, এই কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে সংখ্যাগুরুদের। তবে একই সঙ্গে মোদি সরকারকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এবার কড়া জবাব দিতেই হবে। বৃহস্পতিবার আরএসএস প্রধান পহেলগাঁও ইস্যুতে মুখ খুলে বললেন, “ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে মানুষ মারা হয়েছে। হিন্দুরা হলে কোনওদিন এমন করত না। এই লড়াইটা এখন ধর্ম বনাম অধর্মের।” সংঘপ্রধান বলছেন, “আমাদের হৃদয় ব্যাথিত। আমরা ক্ষুব্ধ। কিন্তু শয়তানকে শেষ করতে হলে নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে হয়। রাবণও নিজেকে বদলাতে চায়নি। তাই অন্য কোনও বিকল্প না দেখে রাম তাঁকে হত্যা করেন। তবে সেটার আগে একবার মত বদলের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল রাবণকে।” ভাগবত বলেন, “আজকের রাবণ ধ্বংসে দরকার মা দুর্গার মতো শক্তি—অষ্টাদশ ভুজা শক্তি। সেই শক্তি আমাদের ঐক্য, আমাদের সংগঠন, আমাদের নৈতিক অবস্থান।”
একত্রিত হওয়ার ডাক
সরসংঘপ্রধান (Mohan Bhagwat On Pahalgam) বলছেন, “এবার আমাদের একত্রিত হতে হবে। আমরা একত্রিত থাকলে কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আর যদি কেউ চোখ তুলে তাকায় তাহলে সেই চোখ গেলে দেওয়া হবে। ঘৃণা বা নৃশংসতা কোনওটাই আমাদের স্বভাব নয়। কিন্তু চুপচাপ নিজের ক্ষতি সহ্য করাও যাবে না। অহিংসদেরও শক্তিশালী হতে হয়। শক্তি না থাকলে কোনও বিকল্প থাকে না। আর শক্তি থাকলে সেটা দৃশ্যমান হওয়া উচিত।” ভাগবত বলেন, “এটি কোনো ধর্মীয় সংঘর্ষ নয়, এটি ন্যায় ও অন্যায়ের লড়াই। রাবণও শিবের ভক্ত ছিলেন, পণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু তিনি অধর্মের পথে চলেছিলেন—তাই রামের হাতে নিহত হন। তেমনি যারা আজ ঘৃণা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, তাদেরও নির্মূল করতে হবে ধর্ম রক্ষার তাগিদে।”
জোরালো প্রতিক্রিয়া
আরএসএস প্রধান ভাগবতের মতে, ‘এই কঠিন সময়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা, শয়তানি শক্তিকে আটকাতে হলে আমাদের আরও শক্ত হবে। আমরা দেশবাসীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই। তাহলে কেউ আমাদের দিকে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাকাতেও সাহস পাবে না। আর কেউ যদি সে সাহস করে তার চোখ যেন উপড়ে নেওয়া হয়। এই ঘটনার জোরালো প্রতিক্রিয়া দরকার।’ মোহন ভাগবতের কথায়, ভারতবাসীর স্বভাবে হয়তো শত্রুতা ঘৃণা নেই। কিন্তু তা বলে তাঁরা নীরবেও ক্ষতি সহ্য করবে না। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও যুদ্ধ নয়। এটি ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে একটি যুদ্ধ। কারণ যারা নিহত হয়েছে তাদের ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কোনও হিন্দু বা আমাদের সৈন্য কখনও তাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে কাউকে হত্যা করেনি। কিছু চরমপন্থী তাদের নিজস্ব ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং এই ধরনের কাজ করেছে। সবার মধ্যে ক্রোধ এবং শোক রয়েছে। তবে গোটা জাতিকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।’
সরছে পর্যটকরা
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের (Pahalgam Terror Attack) বৈসরন উপত্যকায় মঙ্গলবারের জঙ্গিহানার ঘটনায় অন্তত ২৫ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সূত্রের মতে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২৮। সূত্রের খবর, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল পাঁচ-ছ’জন। পহেলগাঁও হামলার পরে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে অন্তত ১০ হাজার পর্যটক ইতিমধ্যেই সরে গেছেন। ২৪ এপ্রিল শুধুমাত্র শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ১১০টি ফ্লাইটে ১৪,০০০-এরও বেশি যাত্রীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চ পর্যায়ে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহনের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আইবি ও র’ প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply